Skip to main content

Full text of "Manobaigyanik Ed. 1st"

See other formats




গ্রাসত্যেন নিংহ 


বাশগুগ্ঠ এগু। কাত কি 
€৪-৩ কলেজ স্রীট, কর্সিকাতা --১২ 


__দ্রেড় টাকা_ 
প্রথম সংস্করণ 
আধাঢ----১৩৫৯ 


[ লেখক কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত ] 


দাশগুপ্ত এগ কোং লিঃ, ৫৪-৩, কলেজ সী, কলিকাতা_-১২ হইতে প্রীজগন্লাথ সিংহ 
কর্তৃক প্রকাশিত ও শ্রীফপিতুষণ হাজরা কর্তৃক গুগ্তপ্রেস, ৩৭1৭, বেশিয়াটোলা 
লেন, কলিকাতা+---৯ হুইতে মুদ্রিত । 


উতসর্গ 


মায়ের ভালবাম। আমায় প্রথম সাহিত্য রচনার প্রেরণ জোগায় । 
সেই মা আজ পরলোকে । আমার প্রথমপ্রচেষ্টা 
“মনোবৈজ্ঞানিক' হৃদয়ের অর্থ্য-স্বরূপ তারই 
পবিত্রন্মতির উদ্দেশ্যে নিবেদন 
করলাম। 


শ্ীসত্যেন সিংহ 
বথধাক্া। । ১৩৫৯ 
স্বপনপুর । পালানপুর, পোঃ। 
বদ্ধমান। 


ভুমিকা 


শ্রীযুক্ত সত্যেন সিংহ তাঁর রচিত “মনোবৈজ্ঞানিক” নামক নাটকটি 
সাধারণ্যে প্রকাশ করছেন। এটি তার প্রথম রচনা । সেই হিসাবে নৃতন 
লেখকের প্রথম রচনার সঙ্গে পাঠক-সাধারণের পরিচয় করিয়ে দেবার যে 
কর্তব্য ও দায়িত্ব অপেক্ষাকৃত পুরাতন লেখকদের আছে সেই দায়িত্ব পালন 
করবার উদ্দেস্তে এই ভূমিকা! রচনা; এবং তারই মারফ্ৎ লেখক ও লেখকের 
প্রথম রচনাটি পাঠকের সামনে উপস্থাপিত করছি । 

শ্রীযুক্ত সত্যেন সিংহ ছোটনাগপুরের এক অতি প্রাচীন অভিজাত রাঁজ- 
ংশের সহিত বৈবাহিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ এবং নিজেও অভিজাত 
বংশের সম্ভান। সেই হিসাবে, তিনি যখন তার এই প্রথম রচনা এই 
নাটকখানি আমার কাছে উপস্থিত করেন তখন অভিজাত ব্যক্তির খেয়াল 
বলেই একে গ্রহণ করেছিলাম । সঙ্গে সঙ্গে তার রচনার মাধ্যমে তার মনের 
প্রক।শ দেখবার কৌতুহলও ছিল। 

নাটকটি পড়ে তার সম্বন্ধে ও তার নাটক সম্পর্কে আমাকে আমার ধারণা 
পরিবর্তন করতে হয়েছে--এ কথা আনন্দের সঙ্গেই স্বীকার করছি। তাঁর 
নাটকটিতে যে গম্ভীর, নিপ্ধ ও চিন্তাকূল ও গভীর্তা-সম্ধানী মনের পবিচগ্ব 
পেয়েছি তা আমাকে আশ্বস্ত করেছে। একটি বিচিত্র প্রশ্নের কাহিনী 
নাটকটিতে বিবৃত হয়েছে । কাহিনী কঠিন ও নিপুণ ন্ত্রে গাথা; নাটকে 
নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতের অভাব নাই আবার অতি-নাটকীয়তাও নাই। 
পাঠকবর্গ নাটকটি পড়ে আমি প্রথম পাঠক হিসাবে যে আনন্দ পেয়েছি 
তেমনিই আনন্দ পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস। 


পি ১৭১সি, সি, ও, এল 
টাল! পার্ক, কলিকাতী-২ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় 


২৮-২৯৫২ | 


- গঁরিচয়-_ 


প্রফেলার প্রমথ নাথ তরফদার । 
ডাঃ স্থবিমল বায়চৌধুরি । 
অরবিন্দ সরকার । 
বিশ্বনাথ সরকার । 
লোকনাথ | 
বণেন। 
অমল। 
সবিতা 
স্প্রভা। 
মূলুক টাদজী ঢনঢনিয়া | 
হরেন মহলানবিশ | 
পুলিশ ইনস্পেক্টার । নাস+। কনেষ্ট বলঘয়। দরোয়ান 
জজ. | জুরিগণ। মিঃ লাহিড়ী । মিঃ বোস্‌। 


হন্লোন্ভভাান্িক্ 


বটি 
এট 


প্রথম অঙ্ক 
প্রথম দৃশ্য 





( কলিকাতায় বিখ্যাত মনোবৈজ্ঞানিক ডাঃ স্ুবিমল রায়চৌধুরীব নিজস্ব কক্ষ। সময 
নকাল নয়ট | ডাঃ সুবিমস অধুন। জাম্মান দেশ হইতে মনোবিজ্ঞানে ও চিকিৎসাবিদ্ঠায় 
ঢ্টবেট উপাধি লইয়া ফিরিয়া আপিয়াছেন ৷ দেশে আসিয়া সুখ্যাতি ও পসার ভালভাবেই 
জমিয়! উঠিয়াছে। তিনি আবাম কেদীবায় বসিয়! একখানি বই পড়িতেছেন। সম্মুখে 
গাল টেবলেব ওপর আবও কয়েকখানি মোটা বই ছড়ানে! আছেঁ। টেবিলে ওপাশে 
মারও ছুইটী কেদাবা আগন্তকদেব বসিবাব জন্য বহিয়াছে। দক্ষিণ পার্থে তাৰ হাতেব 
কাছেই একটা তেপায়! টিপয়ের ওপব ফোন ও চশমার বাঝ্সটি বক্ষিত )। 

( ডাঃ স্তবিমলের বয়স বেশী নয়; গোট] ছাব্বিশ কি সাতাশ হইবে । বেশ শক্ত লক্বা 
চেহাবা, মাথাব চুল কক্স ও এলোমেলো । চোয়ালের হাড় ছুটিতে একটা কঠিন দৃঢতা। 
ও কালো ফ্রেমের মোট! চশমাব মধ্যে চোখ ছুটিব অস্বাভাবিক তীক্ষতা৷ ফুটিয়া উঠিয়াছে 
ঠাহার বেশভূষ। অত্যন্ত সরল; মোটা খদ্দরের ধুতি ও পাঞ্জাবী । সাদ! চাদরখানি 
মারাম কেদাবাব হাতলে ঝুলিতেছে-__মনে হয় তিনি বসিবার পূর্বে ওখানে বাখিয়াছেন। 
বাহিরে কলিং বেলের শব্দ শোন! গেলে! ; তাহাতে ডাক্তারের পাঠের কোন ব্যাঘাত হইল 
না। অল্প পরেই দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের 35818 ০০: একটু ফাক হইল )। 


অমল। (দরজায় মুখ বাড়াইয় ) ভেতরে আসতে পারি? 
ডাঃ স্থবিমল। (পুস্তক হইতে মুখ তুলিয়া! চাহিলেন ) কে অমল, এসে!। 


মনোটিবজ্ঞানিক [ প্রথম অন্ক 


অমল। (প্রবেশ কবরয়া) মিল সরকার নামে একটি মেয়ে আপনার সঙ্গে 
দেখা করতে চান। 

ডাঃ স্থবিমলগ। বেশ তাকে আসতে বলো। (তিনি আবার পুস্তকে মন 
দিলেন, অমল চলিয়া গেল । তাহার চলিয়। যাওয়ায় দরজায় একটা শব্দ 
হইল, সেই শব্দে ডাক্তার সম্মুখে চাইলেন । পুম্তক রাখিয়া দুই হাত 
হাটুর ওপর আবদ্ধ করিয়া কি যেন ভাবিলেন তারপর চশমা খুলিয়া রুমাল 
দিয়া পরিষ্কার করিলেন ও চোখে দিলেন । বামহস্তে চুলটা ঠিক করিয়া 
পুনরায় পুস্তকটা তৃলিতে যাইবেন এমন সময় একটা ১৯২৭ বৎসর বয়সের 
তরুণী প্রবেশ করিল। তরুণী অবিবাহিতা, তাহার বেশভৃযায় ও 
চেহারায় বেশ খানিকটা এশ্বর্ধা ও শিক্ষার ছাপ পরিক্ফুট |) 

তরুণী । নমস্কার! 

ডাঃ স্ুবিমল। নমস্কার | বস্থুন, মিস সরকার । 

তরুণী। ধন্যবাদ! ( উপবেখন করিয়া! ) আমার পিতার মানসিক চিকিৎসার 
জন্য আপনার কাছে এসেছি । 

ডাঃ স্থবিমল। আপনার পিতাকে কি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন? 

তরুণী । না, তাকে সঙ্গে নিয়ে আপিনি। প্রথমে কেবল জানতে এসেছি 
তার চিকিৎসার ভার আপনার পক্ষে নেওয়! সম্ভব হবে কিনা। অবশ্ঠ 
তার আগে আপনাকে তার রোগের লক্ষণগুলো বলা প্রয়োজন । 

ডাঃ স্থবিমল। ( আগ্রহনহকারে ) বলুন। 

তরুণী। (হাতের ভ্যানিটি ব্যাগ ডাক্তারের সম্মুখের টেব্‌লে রাখিয়। ) আমার 
বাবার বয়স প্রায় পঞ্চাশ বসর | বছর চারেক হোল তার মনের বিকৃতি 
ঘটেছে। অন্ত সময় তিনি কারুর সঙ্গে বিশেষ কথা বার্তা বলেন না, শুধু 
এ মাঝে মাঝে কাউকে সামনে পেলেই বলে ওঠেন--"আমার গয়নার 
বাক্স! আমার গয়নার বাক্স কে নিয়ে গেলো, কৈ আমার গয়নার বাক্স ! 


ন্‌ 


প্রথম দৃষ্ঠ ] মনোবৈজ্ঞানিক 


তুঁমি! তুমিই নিয়েছ আমার গঞ্গনার বাক্স 1” এমনি বলতে বলতে 
যখন তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তখন তাঁকে সামলান দায় হয়। 
এইটাই তার মনোবিকারের গরধান ও একমাত্র লক্ষণ, এছাড়া অন্য কোন 
অস্বাভাবিক অবস্থা বড় একটা প্রকাশ পায় না। 
(তকণী এক নিংশ্বাসে কথাগুলি বলিয়। গেল এবং এই বলার জন্য তাহার চোখ 
মুখ রাঙা হইয়া উঠিল। সে শ্বাস প্রশ্বাস লইবার জন্য থামিল ও টেব্‌লের ওপর 
খানিকটা ঝুঁকিয়৷ পডিল। ডাঃ সুবিমল তাহার দক্ষিণ বাহুর ওপব একটি কাটা 
দাগ লক্ষ্য করিলেন ।) 
ডাঃ সৃবিমল। হু"! িস্তিতভাবে ) তিনি গয়নার বাক্স ছাড়! আর কোন 
কথা বলেন না। 
তরুণী । না, অন্য কথ! বলার সময় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ । 
ডাঃ স্ববিমল। আপনি বলছেন আঁজ চার বৎসর তার মধ্যে এই রোগ দেখা 
দিয়েছে । আচ্ছা বলতে পারেন চার বখ্সর আগেকি অবস্থায় এযং.কি 
ভাবে তার মধ্যে এই রোগের বিকাশ আপনার! প্রথম লক্ষণ করেন ? 
তরুণী। ( এই প্রশ্নে যেন একটু বিব্রত বোধ করিল, পরে সপ্রতিভভাবে-- ) 
প্রথম অবস্থায় ভার রোগের বিকাশ আমি নিজে ঠিক চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ 
করিনি তবে সে সময় ধার! তার কাছে ছিলেন তাদের মুখ থেকে শুনেছি - 
প্রথম একদিন তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় গয়নার বাক্স! গয়নার বাক্স!” 
বলে চিৎকার করে ওঠেন, পরে ঘুম ভাঙ্গলে তিনি আবার স্স্থ অন্কুভব 
করেন। এমনি পর পর কয়েক রাত্রি ধরেই চলে, তারপর দিনে, বাতে, 
জাগ্রত অবস্থায় হঠাৎ এক এক সময় যাকে সামনে পান তাকেই 
উত্তেজিতভাবে গয়নার বাক্সের কথ। বলতে থাকেন। 
( ডাক্তার মাথায় হাত দিয়া কিছুক্ষণ চিন্তা করিলেন; তরুণী ডাক্তারের বক্তব্য 
শুনিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিল.$.) 


মন্মোটৈভ্ঞানিক [ প্রথম অঙ্ক 


ভাঃ স্থবিমল। আপনারা! এর পূর্বে তার কোনরূপ চিকিৎসা করিয়েছিলেন ? 
তরুণী। আমর! তার চিকিৎসায় একেবারে হয়রাণ হয়ে গেছি বল্লেও চলে । 
এইবার শেষ আশ] নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। আমাদের বিশ্বাস 
আপনি তাকে সম্পূর্ণ থস্থ করে তুলতে পারবেন এবং আপনিই আমাদের 
শেষ ভরসা--( মেয়েটি টেবলের ওপর তাহার দুই হাতের মধ্যে মাথা 
রাখিল, ডাতার তাহার শুভ্র ঘাড়ে চকিতে একজোড়া ভ্রমরকুষ্জ খোপা 
দেখিয়া! নিলেন । ) 
ভাঃ স্থবিমল। (সান্বনার স্বরে) আপনি অধীর হবেন না। আপনার 
বাবাকে নিয়ে আন্ন। আমাদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে যতটুকু চিকিৎসা 
করা সাধ্য তার ত্রুটী আমরা করবো না তবে জানেন তো মানবের মনো- 
রাজ্য বড়ই বিস্ময়কর । 
তরুণী। আপনি চিকিৎসা করতে সম্মত জেনে বড়ই আনন্দিত হলুম ডাঃ 
রায় চৌধুরি। আমার বাবাকে যত শীঘ্র পার নিয়ে আসব। আঙ্গ 
তা'হলে আমি ( তরুণী আসন ত্যাগ করিল ) নমস্কার ! 
ডাঃ স্বিমল। (গ্রতি--নমস্কার করিয়া উঠিয়া দাড়াইলেন, তরুণী চলিয়া 
ধাইতেছে দেখিয়াকি মনে হইল, তিনি ডাকিলেন--“মিস সরকার” ! 
মেয়েটি ফিরিয়! দাড়াইল, ডাক্তার আগাইয়া গেলেন ) আপনাকে ফেরালুম 
বলে ক্ষম] করবেন। আপনার পিতাকে আপনি নিয়ে আসবেন তবুও 
' আমার আরও.ছুটে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলে আমি আগে থেকে খানিকট। 
প্রস্ত হতে পারবো। ূ 
'তরুণী। ( ঈষৎ হতচকিত ভাবে ) বলুন, আপনি কি জানতে চান? 
ডাঃ স্থবিমল। আপনি বলতে পারেন আপনার বাবার কোন সময় কোন 
গয়নাপত্তর বা গয়না পত্তরের মতোই মূল্যবান কোন বন্ধ চুরি গিয়েছিল 
কিনা? 


প্রথম দৃষ্ঠ ] মনোঠবজ্ঞামিক 


তরুণী আমার বাবার নিজেরই একটা গয়নার দোকান ছিলো। আমার 
বয়স তখন খুবই অল্প। পরে আমি বাবার মুখ থেকেই শুনেছি কেও তার 
দোকান থেকে বেশ কিছু মূল্যের অলঙ্কার ঠকিয়ে নিয়ে যায়। অবশ্য সে 
সময় এজন্য তাকে বিশেষ আক্ষেপ করতে দেখিনি । 

ডাঃ স্থববিমল। আপনার বাবার সে গয়নার দোকান কি এখনো আছে? 

তরুণী। হ্যা বাবার মানপিক অসুস্থতার পর আমার এক দুর সম্পর্কের কাকা! 
সপে দোকানের ভার গ্রহণ করেছেন । 

ডাঃ স্থবিমল। আর একটা বিষয় আমি জানতে চাই। পূর্বের ধন আপনারা 
তার চিকিৎসার চেষ্টা করেন তখন তিনি কি কোনরূপ আপত্তি তুলতেন ? 

তরুণী। ভয়ানক আপত্তি তুলতেন। 

ডাঃ স্থবিমল। কি বলে আপত্তি তুলতেন ? 

তরুণী। তার আপত্তি সে তো পাগলের প্রলাপ বৈ আর কিছু নয়। তবে 
ধারা তার চিকিৎসার চেষ্টা করতেন বা পরীক্ষা করতে আসতেন তাদের 
সঙ্গে তিনি অভদ্র ব্যবহার করতেন, বলতেন--'তোমরাই আমার গয়নার 
বাক্স চুরি করে আমাকে পাগল সাজাতে এসেছো, আমি কি পাগল? টক 
কোথায় আমার গয়নাঞ্চলো এনে দাও! এমনি নানা কথাই বলতেন 
তাছাড়। দৈহিক বলও প্রকাশ করতেন। 

ডাঃ স্থবিমল। বেশ, বর্তমানে আমার জানবার আ'র তেমন কিছু নেই, 
আপনার পিতাকে নিয়ে আসবেন--মনে হয় আমি তাকে সারিয়ে তুলতে 
পারবো, নমস্কার | 

( মেয়েটি কিন্তু এবার চলিয়। গেল না, ভ্যানিটি ব্যাগ খুলিয়া পাচটি দশ, টাকার 
নোট বাহির করিল ) 

তরুণী। ক্ষমা করবেন, আমার মোটেই মনে ছিল না, আপনার 0088168 . 

2ি৪৪ট1। ( টেবিলের ওপর নোটগুলি রাখিক্ব! দিল ) 


অমজো বৈজ্ঞানিক [ প্রথম অন্ব 


ডাঃ স্থবিমল। ( সক্কোচের সহিত ) ওট1] আপাততঃ না দিলেই পারতেন । 
সাধারণতঃ রোগীকে ন1 দেখে 2৪9 আমরা! গ্রহণ করি না। 

তরুণী । (হাসিয়া!) তবুও মনোবিজ্ঞান যখন আপনার পেশা । কিছু মনে 
করবেন না, নমস্কার | 


( ডাক্তাবকে কোন কথা বলিবাব অবসব ন! দিয়! মেয়েটি চলিয়া! গেল। ভীকক্তাব 
কিছুক্ষণ তাহার গমনপথের দিকে চাহিয়া রহিলেন তারপর নিজের আসনে 
আসিয়া বসিলেন। তিনি টেবলেব ওপব হইতে তাহাব ভায়েবী বহি লইয়া 
লিখিতে আরম্ভ কবিলেন। তিনি লেখায় নিবিষ্ট সেই সময় দৌর ঠেলিয়া একটি 
মূন্তি প্রবেশ করিল। লোকটি যুবক, বয়স ২১২২ হইবে। যুবককে দেখিয়। 
সন্ত্রান্ত বংশেব বলিয়া মনে হয়। তাহাব দেহবর্ণ উজ্জ্বল গৌব, পরণে পাঞ্জাবী ও 
পায়জামা, মুখে খোচার্খোচা সোনালী দাড়ী, চুল ছোট করিয়া ছাঁটা। চোখে 
একটা রঙিন্‌ চশমা | যুবকটি প্রবেশ কবিয়া সোজাসোজি অগ্রসর হইল না। সে 
কপাটে হাত দিয়া অল্পক্ষণ দাডাইয়৷ বহিল তাবপর হে! হো কবিয়া হাসিয়া উঠিল । 
তাহার হাসিতে ডাক্তাব ক্ষণিকেব জন্য চোখ তুলিয়া আবাব লিখিতে মন দিলেন । 
' যুবকটি ছুইহাত পেছনে একত্র কবিরা সম্মুখে অগ্রসর হইল এবং ডাক্তাবেব নিকটে 
একটি কেদারায় উপবেশন কবিল। সে রঙিন চশমাটি খুলিয়া ফেলিল-_তাহাব 
চোখ ছুটি বেশ বড় ও বেডালেব মত তীক্ষ কিন্ত তীক্ষ হইলেও তাহা যেন কোন 
বস্তর ওপর আবদ্ধ নয়, যেন সর্বদাই শুন্যে কি খুঁজিয়৷ ফিরিতেছে। ডাক্তার লেখা 
শেষ করিয়া যুবকের দিকে চাহিলেন, যুবক পুনরায় সেই অট্রহাসি হাঁসিয়৷ উঠিল । 

এই যুবকই লোকনাথ, ডাঃ বায়চৌধুরিব একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগী । ) 


লোকনাথ । (হাসিতে হাসিতে ) আচ্ছ। ডাক্তার, শেষে এর! আমাকে পাগল 
ঠাউরালে কেন বলতে পার ? 

ডাঃ স্থবিমল। তাদের আর দোষ কি লোকনাথ । তুমি পাগল বলেই তার 
তোমায় পাগল ঠাউরেছে। 


প্রথম দৃষ্ত ] অমো বৈজ্ঞানিক 


লোকন্ুথ। ( বিশ্মিতভাবে ) শেষে তুমিও একথা বল্লে ডাক্তার! এত বড় 
বৈজ্ঞানিক হয়েও তুমি ওদের দলে যোগ দিলে? 

ডাঃ স্থবিমল। না! দিয়ে উপায় কি বল? ওদের বিরুদ্ধে গেলে ওরা যে 
আমাকেও পাগল বলবে। 

লোকনাথ । আশ্চধ্য ! তোমর1 কি বিচিত্র, ভাক্তার! আমি ধনীর একমাত্র 
সম্তান, আদরের ছুলাল। জন্মের অধিকারে সোনার বাটিতে দুধ পান 
করতে গিয়ে মনে হোল তাদের কথা--যারা জন্মের অভিশাপে লাঞ্চিত, 
পদানত-_এ যারা ছুভিক্ষের হাহাকাবে, খাবারের দোকানের সামনে, ফুট 
পাঁখে, ডাষ্টবিনের আশে পাশে অনৃষ্টকে শ্বীকার করে বিনা প্রতিবাদে মরে 
গেল, হ্যা তাদ্দেরই কথা । ভাবলুম, কার অভিশাপে এবং কারই বা 
'আশীর্বাদে তাদের আর আমার মধ্যে এই ভিন্ন অবস্থা । কাউকে খুঁজে 
পেলুম না। ভগবান? না, সে আমি হ্বীকার করতে পারলুম না। 
তাদের ও আমার মাঝে এই পার্থক্য যতটা! সত্যভাবে উপলব্ধি করলুম ঠিক 
ততখানি সঠিকভাবে ভগবানকে চিনতে পারলুম না । আমার মনে হোল, 
পারি নাকি আমার এই আপন সত্বার বিধানে--ভগবানের বিধানে নয়, 
পারি নাকি আমার সমস্ত বৈভব, বিত্ত তাদের কয়েকজনের সঙ্গেও অন্ততঃ 
ভাগ করে এক সমান্তরাল অনৃষ্টের পথে চলতে । একথা মনে হওয়ার সঙ্গে 
সঙ্গে আমি জোর করে প্রতিদিন সকালে, বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাত্রে" আমার 
উপলব্ধির কথ! জানাতে স্থরু করলাম বাবাকে, মাকে, বোনেদের--বলাম 
তার্দের--এসো! বিলিয়ে দি, ওদের জন্মপতাকা, আমাদের জন্মপতাকা 
একসঙ্গে মিলিয়ে এসো হাত ধরাধরি করে বাস্তব পৃথিবীতে অদৃশ্ট নিয়তির 
সম্মুখীন হই। তারা প্রথমে হাস্লেন--পরে আমায় বোঝালেন, শাসন 
করলেন, অবশেষে তাদের ধারণ| বদ্ধমূল হোল আমি পাঁগল হয়ে গেছি। 
সারা অজন্ত্র অর্থ বায় করে আমায় তোমার চিকিৎসাধীনে রেখে গেলেন । 


৭ 


মনাবৈজ্ঞামিক [ প্রথম অঙ্ক 
আমি পাগল! আচ্ছা ডাক্তার পাগল কাকে 'বলে? পাগলের 
06:97)10101) কি? 

ডাঃ স্থবিমল। (একাগ্র দৃষ্টিতে লোকনাথের মুখের দিকে চাহিয়া ) দেখ 
লোকনাথ, এ জগতে তারাই পাগল যাদের কার্ধ্যকলাপ সমষ্টিগত মানুষের 
স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটায় । 

লোকনাথ । আমার মনে হয় ডাক্তার জগৎ শুদ্ধ অধিকাংশ লোকই আজ 
পাগল হয়ে গেছে। চুরি, প্রবঞ্চনা, 'প্রতারণা, জাল! শঠতা, মারামারি 
এইতো তোমার সমষ্টিগত মানুষের কাধ্যকলাপ--একে কি তুমি সুস্থ 
মনের লক্ষণ বল? 

ডাঃ স্ুবিমল। আমায় বলতে হয় লোকনাথ, নইলে আমার ব্যবল! চলবে 
না। তুমি যাদের পাগল বলো তারাই আজ দলে ভারি, তাই তারাই 
সুস্থ মানুষ_তৃমি পাগল। যেদিন তোমার মত সাধু, সত্যবাদী ব্যক্তি 
দলে ভারি হবে সেদিনই তুমি আজকের মানুষকে পাগল বলতে পারবে। 
আজ এদের ক্ষমত] এত বেশী যে তোমার মত মানুষকে পাগল বানিয়ে, 
ভয় দেখিয়ে নিজেদের দলে টেনে নিচ্ছে। আমি যদি এদের ব্যতিক্রম 
হই তবে আমাকেও ওরা পাগল প্রমাণ করে ছাড়বে। 

লোকনাথ। কিন্তু এদের ব্যতিক্রম আর একদল তো বেশ নিরাপদে জগতে 
বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। আমি তাদের কথা বলছি যারা কবি, শিল্পী, 
দার্শনিক । 

ডাঃ স্থবিমল। প্রকাশ্যে এদের পাগল বলে প্রচার না করলেও মনে মনে এর। 
' পাগল বলেই অভিহিত । কিন্তু এদের এই মানসিক ব্যতিক্রম আজকের 
মানুষের স্বার্থে কোন ব্যাঘাত ঘটায় না বরঞ্চ তাদের বিশ্রামরত মনের 
আহার যোগায় । কবি, শিল্পী, দার্শনিক মানুষের! প্রায়ই লামনাসামনি 
তোমার মতো বিজ্রোহ ঘোষণা করেন নি, তাদের বিদ্রোহের সর লেখায়, 


৮ 


প্রথম দৃষ্ | মনো টৈজ্ঞানিক 


ক্বিভায়, ছবিতেই বেশীর ভাগ আবদ্ধ থাকে। ধাদের বিদ্রোহ 
কাগজের সীমা পেরিয়ে বাইরে উপচে পড়ে তারা হয় দেশ থেকে হ'ন 
বহিষ্কৃত, নতুবা দেশের কারাগারই হয় তাদের গৃহ । 

লোকনাথ । তোঁমার বক্তব্য আজকের মানুষ তই পাগলামি করুক না কেন 
তুমি তাদের পাগল বলে প্রমাণ করতে পারো না। 

ডাঃ স্থৃবিমল। আমার সে শক্তি নেই লোকনাথ । তারা দলে বেঞ্জায় ভারি 
এবং সেইজন্তই তাঁরা আমার সাহায্য নিয়ে আজ তোমায় তাদের দলে 
টানবার চেষ্টা কচ্ছে। কিন্তু থাক সে কথ', তুমি এখন তোমার 
কেবিনে যাও। 

লোকনাথ। € টেবিল হইতে একট] বই তুলিয়া! লইল ) এট কি বই ডাক্তার, 
আমায় পড়তে দেবে? 

ডাঃ স্থুবিমল। হ্যা, বইটা তুমি পড়তে পারো। ওথেকে আজকের 
মানুষের মানসিকতার উৎপত্তি সম্বন্ধে তুমি অনেক কথা জানতে পারবে । 

লোঁকনাথ। আচ্ছা, ধন্যবাদ, আমি এখন যাই। (দে কয়েক পা অগ্রসর 
হইয়! দাড়াইল তারপর হো হো করিয়া হাসিয়া উঠ্ঠিল এবং “আমি পাগল ! 
আমি পাগল |, বলিতে বলিতে চলিতে আরম্ভ করিল ) 

ডাঃ স্থবিমল। (আনন ত্যাগ করিয়া) লোকনাথ! লোকনাথ! দাড়াও, 
আমি তোমায় পৌছে দিয়ে আমসি। (তিনি তাহার অন্গনরণ করিলেন ) 


[ পর্দা নামিয়া আসিল ] 


দ্বিভীয় দৃশ্য 


( কলিকাতাব বিখ্যাত জঙ্বি শ্রীযুক্ত অববিন্দ সরকাবেব দোকান সংলগ্ন অফিস । 
যুক্ত সবকার একখানি নু-প্রশস্ত লাল ভেলভেট মন্তিত টেব.লেব সম্মুখে বসিয়া 
কাজ করিতেছেন! টেবলের দুপাশে অলঙ্কাবাদি ওজন কবিবাব ছোট ছোট 
তুলাদণ্ড গ্রাস কেসে আবদ্ধ । কয়েকটি সোনা রূপাব বার ও চাকতি টেব.লেব 
ওপর ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত । শ্রীযুক্ত সরকাবেব বয়স পঞ্চাশেবও উর্দে। তাহার 
দেইবর্ণ গৌব ও মস্তকেব সমস্ত চুল শুভর হইয়া গিয়াছে। পবণে তাহাব শাস্তি- 
পুরে কৌচান কালোপাড় ধুতি ও সাদা ফতুয়া । চোখে সোনার ফ্রেমে বাঁধানো 
চশমা | সবে মিলিয়া তাহাব চেহারায় একটি শান্ত, সৌম্য ও ক্রান্তভাব পবিস্ফুট 
রহিয়াছে । দক্ষিণ পার্শেব দেওয়ালে ব্রাকেটেব ওপৰ একটি সাদা গলাবন্ধ 
লম্বা কোট ও লাঠি ঝুলিতেছে। টেবলেব নীচে বক্ষিত আলবোলার নল 
তাহার বাম হস্তের মুষ্টিতে আবদ্ব-_মধ্যে মধ্যে তিনি তাহা হইতে ধূমপান 
করিতেছেন )। 

( সহবের ধনী চিত্র ব্যবসাধী শ্রীযুক্ত হবেন মহলানবিশ প্রবেশ কবিলেন। 
শ্রীযুক্ত মহলানবিশ একজন বিশিষ্ট খবিদ্দাব। দৈর্ঘে, প্রস্থে, ধারালো গৌফে এব; 
কুপ্চিত কেশে তিনি একজন দেখিবাব মতো পুরুষ । তাহাব বয়স চুয়াল্লিশ কি 
পঁয়তাল্লিশ )। 


সরকার । (আগ্রহের সহিত) আক্কন! আহ্ুন! শ্রীযুক্ত মহলানবিশ, 
বন্থন। (কাজ রাখিয়া) অনেকদিন যে আপনাকে এদিকে দেখিনি । 
আস্থন! € তিনি সোনার সিগারেট কেস্‌ মৃহলানবিশের দিকে আগাইয়া 
ধরিলেন। ) 

মহলানবিশ। (ধীরে স্স্থে সিগারেট ধরাইয়া) দেখবেন কি করে বলুন, 


৪ 


দ্বিতীয় দৃষ্ত ] মনো বৈজ্ঞানিক 


দেখা দেবার সময় কোথায়? সারাক্ষণ কাজ। কাজ! আর কাজ! 
এই ছবির ব্যবসা ফেঁদে যে কিফ্যাসাদেই পড়েছি মশায়, সে আর কি 
বোলব। এক মুহুর্ত যদি একটা মানুষ এতে ফুরসৎ পায়। 

সরকার । কেন সেক্ন্য তে! আপনার পরিচালকবুন্দ রয়েছেন। 

মহলানবিশ। পরিচালকবুন্দ |] ও পরিচালকদের কথ! আর বলবেন না। 
যত সব মপীজীবিকে নিয়ে কি আর অর্থজীবি হওয়! চলে মশায়। তারা 
সব এক একজন সাহিত্যিক, লেখক, কেউ বা ভাবুক । তাদের চোখের 
একটু আড়াল হয়েছি কি অমনি তাদ্দের নব নব উদ্ভট সব ভাবের তুফানে 
আমার হাজার হাজার টাকার কালোবাজারে কেনা 7৪৬ 151] 
একেবারে মাটি। আরে বাবা, উপন্যাসে, নাটকে ভাব ফোটাস বলে 
কি ছবিতেও তাই করবি নাকি। পয়সা দিয়ে তোদের ওসব বড় বড় 
বুলি শুনবে কে? তার জন্যে তো স্কুল রয়েছে, কলেজ, বিশ্ববিষ্ভালয় 
রয়েছে। আপনিই বলুন না, আমাদের দেশের লোক, তারা সমস্তদ্দিন 
অফিস করে বাড়ীতে মশ্াস্তিক করুণ রসে জর্জরিত হয়ে, খবরের 
কাগজে বড় বড় নেতাদের বিরাট বিরাট ভবিষ্যৎ পরি-কল্পনার বুলি শুনে 
সন্ধ্যাবেলা আবার চিন্রালয়গুলিতেও সে সবের প্রতিধ্বনি শুনতে 
চাইবে কেন? তখন বেশ একটু হাস্যকৌতুক, নাচগান আর সব 
কিছুর মাঝখানে খানিকটা জমাট পিরীতের ব্যাপাঁর। ব্যাস, তাহলেই 
ছবি মাৎ। কিন্তু এরা সে সব শুনবেন না। এরা সাহিতা ক্ষেত্রে 
পরাজয়ের সমস্ত ্লানিটুকুর শোধ এই ছবির মধ্যে দিয়েই তুলতে চাঁন। 

সরকার । ( গড়গড়ায় বার কয়েক টান্‌ দিয়া) হু", পরিচালকদের নিয়ে 
আপনি তাহলে বিপদে পড়েছেন দেখছি । 

মহলানবিশ। আরে মশাই, শুধু কি এক পরিচালকদের নিয়ে, দে হলেও তে 
রক্ষে ছিলো । যাদের নিয়ে ছবি তুলবেন সেই অভিনেতা, অভিনেত্রীদের 


১১ 


মমোবৈজ্ঞামিক [ প্রথম অঙ্ক 


পধ্যস্ত পাওয়া দায় হয়েছে । যারা এতকাল আমসত্বের মতো মুখ করে 
টডিওর আশেপাশে দিনরাত ঘুরে বেড়াতো এখন দুবেলা পায়ে তেল 


মালিশ করেও তাদের মন পাচ্ছি না। 
সরকার । হঠাৎ অতটা পরিবর্তনের কারণ কি? ওমব দিকে আজকাল কেও 
এগুচ্ছে না নাকি ? 
মহলানবিশ। এগুবে না কেন? হ!জারে হাজারে এগুচ্ছে, লাখে লাখে এগুচ্ছে 
কিন্তু এগুলে কি ইবে, তাদের চেয়ে ফিল্ম কোম্পানীর সংখ্য। যে এগিয়ে 
গেছে অনেক বেশী । যে যেখানে ছিলো, বামা, শ্যামা, যেদো, মেধে। সব 
যুদ্ধের বাজারে ফেঁপে ফুলে একে একে চিত্র গ্রতিষ্ঠানগুলি্ ওপর ফেটে 
পড়ছে। কিন্তু যুদ্ধে আপনার মুদ্রার স্ফীতি ঘটলেও প্রতিভার তো 
আর স্কীতি ঘটেনি বং সম্কৃচিত হয়েছে । চিত্র প্রতিষ্ঠান তো! গজিয়েছে 
অনেক এই বাজারে কিন্তু কট! লোকের মধ্যে সত্যিকারের অভিনয় প্রতিভ! 
গজিয়েছে বলতে পারেন । ওরই মধ্যে ধারা আবার একটু ভালো অভিনয় 
করেন তারা অহঞ্কারের শিকেয় উঠে বসে আছেন । যে সর্ববোচ্চ দাম 
হাকতে পারবে সেই তাকে সেখান থেকে নাবাতে সক্ষম হবে। আমরা 
আগেকার মানুষ এই প্রতিযোগিতায় একেবারে মারা গেছি বললেও 
চলে। তা! যাকৃগে, সে সব দুঃখের কথা, এখন কি জন্য এলেছি তাই শুনুন। 
(তিনি সিগারেটটি ছুঁড়িয়! দিলেন ) 


সরকার । বলুন । 

মহলানবিশ 1 একখানা চমৎকার ডিজাইনের হীরার নেকলেম চাই। আমার 
ইচ্ছা কতকগুলো বেশ ভালো নেকলেস দিয়ে আপনার একজন বিশ্বাসী 
লোককে আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দিন-ধার জন্য নেকলেস তিনি একখানা 
পছন্দ করলেই বাকিগুলো ফেরৎ দিয়ে দেবো। 


১৭ 


দ্বিতীয় দৃশ্ত ] অন্ো্রজ্ঞালিক 


সরকার । বেশ, বেশ, আমি এক্ষুনি সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। (কলিং বেলে 
চাপ দিলেন ) আমার লোক আপনার বাড়ীতে যাবে তো? 
মহলানবিশ । আরে রামঃ! রামঃ! এতক্ষণ তবে শুনলেন কি মশা, আর 
আমিই বা এত বক্তৃতা দিলুম কিজন্য? সহবের এক খ্যাতনামা 
অভিনেত্রীকে আমার নূতন বইএ নাবাতে বহু কষ্টে রাজী করিয়েছি, কিন্তু 
টভিওতে তাকে বরণ করে আনবার জন্ত প্রথমেই চাই একখানি হীরার 
নেকলেস । 
( চাপরাশী আসিয়া অভিবাদন কৰিয়] দাড়াইল ) 
সরকার। ছোটবাবুকে ডেকে দাও। (চাপরাশীর প্রস্থান ও ছোট ভাই 
বিশ্বনাথ বাবুর প্রবেশ ) বিশ্বনাথ, নৃতন ডিজাইনের কয়েকখানি ডায়মন্ড 
নেকলেস নিয়ে এসো তো । ( বিশ্বনাথের প্রস্থান ) 
মহলানবিশ । ( পুনরাঘ় লিগারেট ধরাইয়া) হ্যা, আপনাদের যা সবচেমে 
ভালো তাই দেবেন, কারণ এদের চিত্তবিনোদন করা যে কি কঠিন ব্যাপার 
তা আপনি বুঝতে পারবেন না অথচ না করলেও উপায় নেই--বেঁকে 
বসলে ছবিটাই কানা হয়ে যাবে। 
সরকার । সেজন্য ভাববেন না, আপনার সঙ্গে খুব পেন] দ্িনিষই আমি 
পাঠাচ্ছি। এই যে--( বিশ্বনাথ বাবু চার পাচটি লাল, নীল, সবুজ 
নেকলেসের কেস্‌ লইয়া প্রবেশ করিলেন। অরবিন্দ সরকার সেগুলি 
তাহার হাত হইতে লইয়] শ্রীযুক্ত মহলানবিশের সম্মুখে খুলিয়া ধরিলেন ) 
এগুলে। সবই আমাদের লেটেষ্ট ডিজাইনের । 
(শ্রীযুক্ত মহলানবিশ নেকলেসগুলি দেখিতে যাইবেন এমন সময় অন্যতম চিত্র 
ব্যবসায়ী শ্রীযুক্ত মুলুক টাদজী ঢনঢনিয়া একজন স্মন্দরী অভিনেত্রী জপ্রভা দেবীকে 
লইয়া! প্রবেশ করিলেন । তাহাদিগকে দেখিয়! শ্রীযুক্ত মহলানবিশের মুখখানি 
, একেবারে চুপসাইয়া গেল। তিনি স্থিরভাবে বসিয়া রহিলেন। ) 


১৩ 


অল্মোবৈজ্ঞামিক [ প্রথম অঙ্ক 


ঢনঢনিয়া। নমন্তে! নমন্তে! জঙ্থরি সাহাব । (সহসা মহলানবিশকে 
দেখিয়া) আরে মহলানভীস্‌ দাদা ভি এখানে, তারপোরে দাদা বেশ 
ভালো! তো 

স্থপ্রভা। ( মহলানবিশকে দেখিয়া! ) নমস্কার ! শ্রীযুক্ত মহলানবিশ। 

সরকার | বন্থন, বস্থন শেঠজী | কি চাই বলুন? 

ঢনটনিয়া। আরে যা চাই, সে তো আপুনি আগেই এখানে সাজাইয়ে 
রাখিয়েসেন। দেখো তো স্ুপ্রভা দেবী এ হীরাঁকে হাব তুমার পসন্দ 
হোয়। (স্থপ্রভা দেবী নেকলেসগুলি দেখিতে দেখিতে একখানি 
হাতে তুলিয়া ধরিলেন। ) 

ঢন্ঢনিয়া। ওটি পসন্দ হইয়েসে, আরে পরিয়ে ফেল। ( সুপ্রভাদেবী নেকলেস 
পরিতে ইতস্ততঃ করিতেছেন দেখিয়া শ্রীযুক্ত ঢন্ঢনিয়া নিজেই পরাইয়! 
দিলেন ।) 

স্থগ্রভা। (নেকলেস পরিয়া) আপনি আমায় ক্ষমা করবেন রুক্ত 
মহলানবিশ। ( মহলানবিশ নীরব রহিলেন, তাহার মুখ দেখিয়া] মনে 
হইল কেও যেন সপাসপ, তাহাকে চাবুক মারিয়াই চলিয়াছে এবং তিনি 
নীরবে সহা করিতেছেন । ) 

টনঢনিয়া। বাঃ, খুব খপস্থরৎ হইয়েসে। মহোলানভীশ দাদা কি বোলে? 

মহলানবিশ । হু" টাকায় কি না খপস্থুরৎ হয় শেঠজী, আপনি নিজেও তো 
কম খপজ্জুরৎ হন্‌ নি। 

ঢনটনিয়া। ( কথার ইঙ্গিত বুঝিতে ন! পারিয়া ) হাঃ হাঃ হাঃ, তা বেশ, তা 
বেশ ( মরকারের প্রতি ) এ হারের দাম কতো আছে? 

সরকার । (নেকলেস দেখিয়! ) মাত্র তিন হাজার দুশো! তেত্রিশ টাকা । 

টনঢনিয়া । .( পকেট হইতে চেক বহি বাহির করিয়া লিখিলেন ও সরকারকে 
দিলেন ) আচ্ছা চলি, নমস্ত্ে, চলি মহলানভীশ দাদা, নমন্তে । 


১৪ 


দ্বিতীয় দু্ঠ ] অমোটৈজ্ঞানিক 


হপ্রভা। নমস্কার । শ্রীযুক্ত মহলানবিশ। 

( উভয়ের প্রস্থান ) 
দরকার। এই নেকলেসগুলো তবে আপনি নিয়ে যান শ্রীযুক্ত মহলানবিশ। 
মহলানবিশ। ( উত্তেজিতভাবে ) সব দেখে শুনে কেন যন্ত্রণা দিচ্ছেন সরকার 

মশায়। দেখলেন তো আমার নাকে ঝামা ঘসে দিয়ে এ শালা 
মারোয়ারীর পুত. নেকলেস পরিয়ে নিয়ে চলে গেলো । গেলো ফক্কে, 
কিআর হবে। আমাদের মত ভত্রলোকের এসব ব্যবসা ছেড়ে দিতে 
হবে। এই ঢনঢনিয়া মাবোয়ারীকে যুদ্ধের একবংসর আগে পর্য্যস্ত আমি 
টালিগঞ্জের মোড়ের একট! দোকানে ফুলুরি ভাজতে দেখেছি । আজ সে 
কোটি টাকার মালিক । না, চল্লুম, মন মেজাজ বড় খারাপ হয়ে গেলো-_ 
আবার গিয়ে কর্তব্য স্থির করতে হবে। নমস্কার । 
( বেগে প্রস্থান ) 


(শ্রীযুক্ত সরকার নেকলেসের বাক্স গুলি গুছাইতেছেন, কর্মচারীর প্রবেশ ) 


কর্মচারী | স্যার, একজন মহিলা! অনেকগুলি গয়ন৷ বাছাই করে ওর সঙ্গে 
বাড়ীতে যেতে বলছেন, সেখানে গয়নাগুলি সকঙ্গের পছন্দ হলে দাম 
দেবেন। এবিষয়ে তাকে আপনার সঙ্গে কথ! কইতে বলেছি, নিয়ে 
আসবে! তাকে ? 
সরকার । (ব্যস্তভাবে) নিয়ে এসো । নিয়ে এসো । এতে জিজ্ঞাসা করবার 
কিআছে। 
( কশ্মচারী বাহিরে গেল ও অল্প পরেই ১ম দৃশ্য বণিত তরুণীকে প্রবেশ করিতে 
দেখা গেলো । তাহাকে দেখিবামাত্র অরবিদী সরকাব সহসা চমকাইলেন এবং 
পরক্ষণেই নিজেকে সামলাইয়া অপলক বিশ্বয়ে তাহার দিকে চাহিয়া! রহিলেন। 
দবন্বের আতীষ ত্তাহার মুখে পরিস্ফুট হইল। এইরূপ বিহবলতায় তিনি তরুণীকে 
সম্ভাষণ করিতে ভুলিয়া গেলেন । ) 


যন্দোরৈজ্ঞান্িক [ প্রথম অক 
তরুণী। (সরকারের ব্যবহারে বিস্মিত ও বিচলিতভাবে ) আপনিই কি এই 
গয়নার দোকানের মালিক! 
সরকার । (শ্বল্প বিহবলতা কাটাইয়া) হ্যা, হ্যা, আমিই ৷ আপনি বন্থন, বস্থুন | 
তরুণী । দ্রেখুন, আপনাদের এখানে আমি কতকগুলে! গয়না ০1১01০৪ করেছি 
কিন্ত আমার পছন্দটাই সব নয় বলে যদ্দি আপনার] কেও একজন গয়না- 
গুলো নিয়ে আমাদের বাড়ীতে আসেন তবে সকলের পছন্দমত গয়না 
রেখে বাকীগুলে! ফেরৎ দেবে! । 
€ অরবিন্দ সরকার তরুণীব বাহুতে কাটা দাগ লক্ষ্য করিলেন এবং কি যেন 
ভাবিয়া তাহাব মুখ ক্রমশঃ যন্্রণীকাতব হইয়া উঠিল-_-বনু কষ্টে তিনি নিজেকে 
দমন কবিলেন কিন্তু তরুণীব দিকে চাহিতেই একটা অহ্তুক অন্ধ ন্মেহেব ভাব 
তাহাব মুখে পবিস্ফুট দেখা গেল ।) 
তরুণী। (সরকারের নীরবতায় অধীরভাবে ) অবশ্য আপনাদের এরপ ব্যবস্থা 
আছে কি না জানি না, যদ্দি না থাকে-_ 
সরকার । (লজ্জিতভাবে ) না, ন।, ব্যবস্থা আছে বৈকি। আপনি একটু 
অপেক্ষ। করুন। (তিনি কপিং বেলে চাপ দিলেন ও সেই সঙ্গে কর্মচারী 
প্রবেশ করিল) যে অলঙ্কারগুলি ইনি পছন্দ করেছেন সেগুলো এখানে 
নিয়ে এসো হয, আর বিশ্বনাথ বাবুকে একবার পাঠিয়ে দাও। 
কর্মচারী । স্যার, বিশ্বনাথ বাবু এইমাত্র বাইরে গেলেন । 
সরকার । আচ্ছা, গবনাগুলে! নিয়ে এসো । ( কন্মচারীর প্রস্থান ) 
তরুণী। আপনি কিছু মনে করবেন না, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা 
করতে পারি কি? 
সরকার । মনে করবার কি থাকতে পারে, বলুন। 
তরুণী। আমার মনে হচ্ছে আপনি যেন আমায় চেনেন কিন্তু তা প্রকাশ 
করতে চাইছেন না) আমি কিন্ত জীবনে কখনো! আপনাকে দেখিনি 


১৬ 


হিতীয় ষ্ঠ ] অঙোঠবজ্যাদিক 


সরকার । (পূর্বেকার সমস্ত ভাব সম্বরণ করিয়া একাস্ত বিভ্রাস্তভাবে ) হ্যা, 
হা, ও আমার একটু ভূল হয়ে গেছে, আপনি আমায় ক্ষম| করবেন । 
আপনারই মতো দেখতে আমার এক নিকট আত্মীয় বহুকাল আগে 
মারা গেছেন, আজ হঠাৎ তার কথাই আমার মনে পড়ে গেলো, অবশ্য-_ 
যাকৃসে কথা। আমি বৃদ্ধ হয়েছি, এরূপ ভ্রম হওয়া অস্বাভাবিক নয়, 
কি বলুন? ( কর্মচারীর গল্পনাগুলি লইয়া প্রবেশ ) এই যে আপনার 
গয়নাগুলো। এসে গেছে । অনেক টাকার গয়ন। পছন্দ করেছেন দেখছি । 

কর্মচারী | হ্যা স্যার, সমস্ত গয়নার মোট দাম আশী হাজার টাকা । 

সরকার । ( কর্মচারীর প্রতি ) বিশ্বনাথবাবু ফিরেছেন ? 

কম্মচারী। আজ্ঞে না, তিনি ফেরেন নি। 

সরকার। আচ্ছা, তুমি যাও। ( চিস্তিতভাবে তরুণীর প্রতি) আপনার 
সঙ্গে আর কেও এসেছেন? 

তরুণী। না, কেবল আমার ড্রাইভার বাইরে গাড়ীতে অপেক্ষা কচ্ছে। এত 
টাকার গয্পনা নিয়ে ষেতে কি আপনাদের কোন আপত্তি আছে? 

সরকার। আপত্তি থাকবে কেন? আপনি এত টাকার গয়না কিনবেন আর 
দোকানদার হয়ে আমার তাতে আপত্তি থাকবে? তা না, আমি ভাবছি 
যার তার হাত দিয়ে গন্পনাগ্ুলো পাঠাই কিকরে। আমার নিজের 
ভাই তিনিই সচরাচর এসব কাজে যান অথচ বর্তমানে তিনি অশ্রপস্থিত। 
তিনি কখন ফিরবেন ততক্ষণ তো৷ আপনাকে বসিয়ে রাখতে পারি না। 

তরুণী। বেশ, আজ যদি না হয় পরে আসবো । ( উঠিয়া দাড়াইল ) 

সরকার । ন1 উঠবেন না, অনন্ঠোপায় হয়ে আমাকেই যেতে হবে । আপনাদের 
মতো! খদ্দেরকে দোকান থেকে ফেরাতে পারি না। আপনি গাড়ীতে 
গিয়ে পাঁচ মিনিট বস্থন, আমি প্রস্তত হয়ে যাচ্ছি। 

তরুণী । আচ্ছা, আম্থন। (প্রস্থান ) 


৮ ১৭ 


অজোটৈজ্ঞানদিক [ প্রথম অঙ্ক 
( সরকার তাহার ভাবাবেগ কর্তৃক পুনরায় আক্রান্ত হইলেন। তিনি চাবি 
দিয়া ডয়ার খুলিয়। একটি ফটো বাহির করিলেন । ) 
সরকার । (ফটো দেবিতে দেখিতে আপনমনে ) একেবারে হুবহু তারই 
মতো, এ যেন ঠিক সেই, এতটুকু পার্থক্য কেও ধরতে পারবে না। কিন্ত 
এ কেমন করে সম্ভব। মানুষের চেহারায় কি এতখানি মিল থাকে? 
তবে কি সেই শিশু? কে মানুষ করে তূললো! ? সে যে আবজ্জনা, সমাজের 
দুরগদ্ধ! হাতে কাট! দাগ! না, না আমার মনের ভূল, মনের তুল। 
( তিনি ফটোটি রাখিয়া! দিলেন ও ত্রাকেট হইতে কোট লইয়। পরিলেন, 
গয়না হাতবাক্নে ভরিয়৷ লাঠি হাতে বাহির হইয়া গেলেন। ) 


তৃতীয় দৃশ্য 
( ডাঃ সুবিমলের উপবেশন কক্ষ । ঘবের মধ্যস্থলে একটি সোফায় বসিয়া আুবিমল 


্ঠাহার সহকারীঘ্বয় রনেন ও অমলের সঙ্গে কথা বলিতেছেন। তাহার সম্মুখেব 
টিপয়ে চায়ের পেয়াল। ও সংবাদপত্র রহিয়াছে । ) 


ডাঃ স্থবিমল। ( চিস্তিতভাবে ) সত্যই দিন দিন ওকে আমি যতই দেখছি 
ততই আশ্চধ্য বোধ কচ্ছি। 

রনেন। উন্মানের যে একটা অশ্বাভাবিক অবস্থা তার সর্বপ্রকার বৈচিত্রাই 
প্রতিদিন ওর মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে । এই কারণে আমাদের কোন স্ুত্রই 
রোগের আসল কারণ খুজে বার করতে সক্ষম নয়। 

অঘল। তাই ঘণ্দ হয়, সর্বপ্রকার পাগলের বিশেবত্বগুলি যি একই লোকের 
মধ্যে দেখা বায় তবে তে! সে বাক্তি আমাদের একটি মুল্যবান গবেষণার 
বিষয়। 


১1৮ 


তৃতীয় দৃশ্ ] মমোবৈত্ঞাছিক 


ডাঃ সুবিমল। সে কথা আমি মনে করি না। মনোবিঙ্লেষণের যেমন একটা 
সীমা আছে মানসিক জটিনতার৪ একট! সীমা আমাদের তেমনি তরি 
করে নিতে হর এবং তা না করলে চিকিৎসা অনভ্ভব হয়ে দীড়ায়। সেদিক 
দিয়ে দেখতে গেলে লোকনাথ সেই জটিলতার সীমা অতিক্রম করে গেছে। 
অমল যে গ:বষণার কথা বললে লোকনাথকে নিয়ে সেরূপ গবেষণা আমরা 
আরম্ভ করতে পারি ন1। 


অমল । কেন পারি না বলুন । 


ডাঃ স্থবিষল। (হালিলেন )পারি না এইজন্য; আমাদের এবং আমাদের 
পরবর্তী বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা পর্ধাস্ত লোকনাথকে পাওয়া যাবে না। 
অতি সহজ একট] কথা---"একই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত 
হলেও আমর! তাকে সুস্থ করে তুলতে পারতুম যদি এই বৈচিত্রযগুলি 
পরস্পরবিরোধী না হোত। একটা পরম্পরবিরোধী বৈচিত্রের গবেষণা 
করতেই আমাদের জীবন কেটে যাবে-খলোকনাথও মারা পড়বে । 
আমাদের পরবভীব1 এই গবেষণ! বাঁচিয়ে রাখবেন যাকে কেন্দ্র করে তেমন 
লোক জুটুবে না। আমাদের পরিশ্রম বৃথা হবে। 


নেন । লোকনাথের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বৈচিত্র্যের অভাব নেই। এক 
এক সপ্তাহে তার এক এক অবস্থা। কখনও সে সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ, কখনো 
কবি--মে সময় অনর্গল কবিতা মুখে মুখে স্ষ্তি করতে পারে, কখনো 
দর্শনিকের মতো বিশ্বতত্বের আলোচনাতেই মশগুন। মাঝে মাঝে 
আবার রাজনৈতিক নেতাদের মতো দেণ সন্ধে ব্ৃতা৷ দেয়। কিন্ত সব 
কিছুর মধ্যেই একটা অনংলগ্রতা, একট] বিশেষ নৃতন কিছু লক্ষ্য করা যায়। 
এমনও তো হতে পারে ডাঃ রায়চৌধুরি ও একট! বিরাট প্রতিতা বিকাশের 
পথে সহ! তার মনের ভারসাম্য হারয়ে ফেলেছে। 


চ্রী 


বংলা বৈজ্ঞানিক [ প্রথম অঙ্ক 


তাঃ স্থবিমল। সেরূপ হওয়াও কিছু আশ্চর্য্য হতো! না বদি তার সমস্ত লক্ষণের 
মধ্যে একট! কৃত্িষত] না প্রকাশ পেতো । 

অমল। কুত্রিমতা! আপনি কি বলতে চান লোকনাথের সমস্ত পাগলামিই-- 

ভাঃ স্থবিমল। না, তার সম্বন্ধে পরিপূর্ণ দিদ্ধান্তে আমি এখনো উপনীত হতে 
পারি নি, একট] সন্দেহ শুধু আমার মনে জেগেছে এবং সেইদিকেই আমি 
আমার গবেষণা সুরু করেছি। এবিষয়ে আমি অনেকখানি অগ্রসর 
হয়েছি । আশ। করি একদিন তাকে সুস্থ মাচুষরূপে প্রমাণ করতে 
পারবো । 

অমল । এ বদি প্রমাণ হয় তবে সেই সঙ্গে এটুকুও প্রমাণিত হবে যে তার 
বর্তমান কাধ্যকলাপ সমন্তই অভিনয় এ.ং এরূপ অভিনয়ের উদ্দেশ্য 
কি হতে পারে? 

ভাঃ সুবিমল । উদ্দেশ্য সন্বদ্ধে আমি আজও চিন্তা করিনি। আমার গবেষণা 
শেষ না হওয়1 পর্য্যন্ত সে প্রশ্ধ করলেও কোন উত্তর পাবে না। অব্থয 
আমার এই সন্দেহ একটা 10215 23381000102, অঙ্কুমান মাত্র, এ সত্য 
নাও হতে পারে। 

প্রঃ ভরফদার। (দ্বারের বাহির হইতে) [795 1 ০০006 10101. [২০- 
0190ভ ৫101111? 

ডাঃ স্থবিমল। (প্রফেলার তরফদারকে দেখিয়া উঠিয়া ঈ্াডাইলেন ) 35 
811 1006815. আসন্ন, আহন স্যার; আমার কি সৌভাগ্য ! 


(প্রফেসার তরফদাব আপিয়! প্রবেশ করিলেন । প্রফেসাব তবফদাবের বয়স 
ষাটের কাছাকাছি । তাহার পরণে স্ট, মাথায় সাদা চুল মাঝখানে চেরা । মুখে 
দার্শনিকের মত দাঁড়ী ও গোঁফ । গলার ওপর কালে সুতায় একখানি মনোকল 
ঝুলিতেছে। তীহার চোখ মুখ অত্যন্ত তীক্ষ ও সেদিকে দৃষ্টিপাত ক্করিলেই মানুষ 
আতঙ্গ্রস্ত হইয়া পড়ে। প্রঃ তরফদার একজন অন্ভুত মর্লোভাবাসম্পন্ন 


৮০ 


১০৪ দৃষ্ত) মনো বজঞাজিক 


দার্শনিক ও মনোবৈজ্ঞানিক বলিয়া বিখ্যাত। ইনি সারাজীবন বহছদেশে যখা 
জাম্মীনী, আমেরিকা ও চীনে দর্শনেব অধ্যাপনা করিয়া বর্তমানে শেষ বধস দেশে 
আসিয়া কতকগুলি রহস্যময় মানসিক ক্রিয়াকলাপ লইয়। গবেষণা করেন বলিয়া 
প্রচারিত। প্রঃ তরকদারের এক হাতে সংবাদ পত্র, অন্ত হাতে লাঠি ও 
পশ্চাদন্রসরণ রত এক মিশমিশে ভয়ঙ্কর আকৃতির কুকুরের গলার চেন । ) 
প্রঃ তরফদার । আমি তোমায় অভিনন্দন, সেই সঙ্গে আমার আশীর্বাদ 
জানাতে এসেছি স্থবিমল। তুমি ভারত সরকার কর্তৃক প্রধান মানসিক 
চিকিৎসকের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছো ] জাশ্মানীতে এক বৎসরের জন্য 
তুমি আমার ছাত্র ছিলে--আজ তুমি জয়ী হয়েছ, দেশের লোক তোমার 
মত পণ্ডিত পেয়ে ধন্য হয়েছে । ( বলিতে বলিতে তিনি উপবেশন করিলেন, 
কুকুরটি তাহার পায়ের কাছে ধসিল। ) আজ আমার মুখ উজ্জ্বল হওয়া 
উ!চত ছিল কিন্তু--যাক সে কথা বলতে আপগিনি, সে কথা বোলৰ না। 
(তিনি ঘন ঘন হাতঘড়ি দেখিতে দেখিতে ঘরের চারদিক ভাল করিনা 
পর্যবেক্ষণ করিতেছিলেন। ) 
ডাঃ স্ববিমলল। টিন স্যার? আমি কি কোনদিন আপনাকে অস্বীকার 
করেছি? 
প্রঃ তরফদার । (হাসিলেন ) কোনদিন স্বীকার করতেও তো পারনি 
স্ববিমল। আমার বড় দুঃখ হয়--আমি বৃথাই এ দেশে ফিয়ে এলাম । 
বিদেশে আমার অসংখা ছাত্রের মধ্যে তুমিই ছিলে একমাত্র ভারতীয়, 
তোমার ওপর আমার অনেক আশা ছিল; ভেবেছিলুম আমার অসমাধ্ধ 
গবেষণার ভার তোমার উপরেই ন্তস্ত করে ধাব কিন্ত আমার মতবাদকে 
তুমি বাঙ্গ করেছো, এমন কি তোমার বহ্ছ প্রবন্ধে আমায় 9১80০ ও পাগল 
বলে অভিহিত করতেও সক্ষোচ বোধ করনি । অবশ্য সেজন্য তোমার চেয়ে 
তোমার মতবাদই দায়ী বেশী । 


১ 


অমোবৈজ্ঞামিক ; প্রথম অঙ্ক 


ভাঃ স্থবিমল । আপনাকে পাগল বলে অভিহিত করবার মতো ছুঃসাহস 
আমার কোনদিন হ্য়নি শ্তার, আমি কেবল আপনার গবেষণাকে এদেশে, 
শুধু এদেশে কেন, বর্তমান মান্ছষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আমি এই 
সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, পৃথিবীতে এ শুধু নিরথক হবে, একে সাহায্য 
করতে কেও এগিয়ে আসবে না। 

প্রঃ তরফদার। আসবে। আসবে ধদি আমি একটিও তেমন মাস্ক 
স্প্টি করতে পারি । যদি একটিও দু'মাসের শিশুকে আমার গবেষণাগারে 
নিয়ে গিয়ে যে কোন মানুষে, শিল্পী বা গায়কে বা দার্শনিকে পরিণত 
করতে পারি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন অজন্র অর্থ, বিরাট গবেষণাগার, 
বহু প্রতিভাসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক । কিন্তু তবুও আমি নিরাশ হবে৷ না, 
আমার সমস্ত শক্তি, স্ায় অন্যায় সমভাবে প্রয়োগ করে আমি আমার 
লক্ষ্যে পৌছুবার চেষ্টা করবো। 

ভাঃ স্ববিমল। আপনার সাধনাকে আমি মনে মনে চিরকাল শ্রদ্ধা করবো! 
কিন্ত তাকে কোনদিন গ্রহণ করতে পারবো! না--সেজন্য আমায় ক্ষমা 
করবেন। আপনি মানুষকে, শিশুরূপী মানুষকে ইচ্্ীমত গড়ে তুলতে 
চান আর আমি চাই পুরাতন মানুষকে চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সুস্থ 
মনোভাবাসম্পন্ন মান্গষে পরিণত করতে । আমার কাজের প্রয়োজন 
আপনার চেয়ে আগে। সংস্কার না হলে আপনি সৃষ্টি করবেন কোন্‌ 
উপাদানে । আপনার ইচ্ছামত স্্ট মানুষ আপনারই গবেষণাগারে 
স্স্থ থাকবে কিন্তু যেদিন তাকে আপনি স্বাধীনভাবে জগতের সামনে 
ছেড়ে দেবেন সেদিনই সে বিভ্রান্ত মানব-সমাজে আপনার ত্যষ্ট মনের 
ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে । আপনার সমস্ত সাধনা বিফল হুবে। 

প্রঃ তরফদার । আজ আমি তোমার সঙ্গে তর্ক করতে আসিনি স্থবিমল" 
তর্ক করে আমি তোমার ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটাতে পারবো ন!। 


১৬, 


তৃতীয় দৃষ্ত ] অনো বৈজ্ঞানিক 


ড় 


ঃ 


আজ আমি তোমায় শিষ্য্ূপে না পেলেও তোমাক সহানুভূতি আশ 
করি। তোমায় নিমন্ত্রণ করতে এসেছি। তুমি আসবে একদিন 
আমার ওখানে, আমি তোমায় দেখাব আমার কার্ধ্পদ্ধতি। তুমি 
আমার শ্রেষ্ঠ সমালোচক, তোমার সঙ্গে আলোচন1] করে আমি অত্যন্ত 
সুখী হবে । 


স্থবিমল। আপনার এ নিমন্ত্রণ আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করলুম। 


প্রঃ তরফদার । বেশ, বেশ, আমি এখন চলি তাস্হলে, (তিনি ঘড়ি 


দেখিয়া! উঠিয়া পড়িলেন ) আমার ওখানে একদিন আসতে অবহেলা 
করো না কিন্ত-:00090 75৮, (01060 5০90 15055. (তিনি কুকুর 
ও লাঠি লইয়1 সদর্পে বাহির হইয়া গেলেন )। 


ডাঃ স্ৃবিমল। রনেন, তুমি যে বিরাট প্রতিভার ভারসামা হারিয়ে ফেলার 


কথা বলছিলে তার উজ্জ্বল দৃষ্টাত্ত একটি আমাদের এই প্রঃ তরফদার । 
এই প্রফেণার তরফদার বিদেশে এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন যে তার নামে 
হাজার হাজার শ্রোতা এসে জুটতে। বক্তৃতা শোনবার জন্ত । দর্শন ও 
মনত্তত্বের ধঁঠিন সমস্যাগুলি তিনি এমন নিপুণ অথচ সহজভাবে বোঝাতেন 
যে একবার শুনলে সাধারণ লোক সেট হৃদয়ঙ্গম করতে পারতো । 10£. 
চ:54৫ একদিন তার বক্তৃতা শুনে এসে বলেছিলেন--“চৌধুরি, প্রঃ, 
তরফদার সত্যই একজন দার্শনিক ।, 


বনেন। কিন্তু হঠাৎ তার মনোভাব এমন বিকৃত হলে। কেমন করে? 
ডাঃ স্থবিমল। আমরা দেখছি বিকৃত হয়েছে। তার ধারণ তিনি মানব- 


সমাজের মন্লের জন্ত এক বিরাট সাধনায় আত্মবলি দিয়েছেন । ৬/৪5০7 
সাহেবের 3213851090101902 বা ব্যবহারবাদ সম্বন্ধে বক্তৃতা শুনে মাহুষকে 
নিজের ইচ্ছামত স্থপ্টি করবার আশ! তার মনে বদ্ধমূল হয়। সমস্ত মানলিক 


২৩ 


অজোষজ্ঞানিক [ প্রথম অন্ক 


শক্তিকে তিনি এখন এই একটি বিষয়ের সাধনায় নিয়োগ করেছেন । 
এতেও ক্ষতি ছিলে! না কিন্তু তিনি এ নিয়ে এমন পাগল হয়েছেন যে 
কোনরূপ সমালোচনা, যুক্তি, তর্ক তার কাছে হার মেনেছে এবং তিনি যে 
বৈজ্ঞানিক, বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিই যে তার একমাত্র পাথেয় সেট্রকু একেবারে 
ভূলে গেছেন। 
অমল। তার ব্যাক্তিত্বও অসাধারণ, দেখলে মনে বেশ ভয়ের সঞ্চার হয়। 
রনেন। আবার সঙ্গে এ ভীষণ-দর্শন কুকুর। 
ডাঃ স্থবিমল। প্রঃ তরফদারের এ কুকুরটি অত্যান্ত প্রিয় । এক সময় তিনি 
হিপ্রোটিজম্‌. মেস্মেরিজম, স্মিরিচুয়েলিজম্‌ নিয়ে চষ্চা করতেন এবং 
এই কুকুরটির ওপরই তার বিদ্যার পরীক্ষা চলতো! । তাছাড়া 19 
06116555 11) [055035851) 2190. 
(নাসের প্রবেশ ) 
ন:। মিস্‌ সরকার নামে একটি মেয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন 
ডাঃ স্থবিমল। মিস্‌ সরকার? (সহসা মনে পড়িতে ) ও, তাকে এখানে 
পাঠিয়ে দাও। 
(নাসের প্রস্থান ) 
রনেন। মিস্‌ সরকার কি আমাদের কোন নৃতন 2৪6160€ নাকি ? 
ডাঃ স্থববিমল | না, তিনি নিজে 09050 নন্‌, তবে তার একটি 786020কে 
নিয়ে আসবার কথ আছে। 
অমল । আমরা বাচ্ছি, লোকনাথকে লেববটারীতে নিয়ে গিয়ে একটু 
এনালাইস্‌ করা দরকার। 
(রনেন ও অমলের প্রস্থান, বিপরীত দ্বার দিয়া মিস্‌ সরকার নামী 
তরুণীর প্রবেশ ) 
তরুণী । নমস্কার ! 


৪ 


তৃতীয় দৃশ্ঠ ] অনো বৈজ্ঞানিক 


ডঃ হ্ববিমল। নমস্কার । বন্থন। 
( তরুণী তাহার হাতের হাতবাক্স চেয়ারেব পাশে মেঝেতে রাখিতে যাইবে, ব্যস্ত 
হইয়। ডাক্তার বলিলেন--“নীচে কেন? টেবলের ওপরেই রাখুন ।” তরুণী চমকাইয় 
বাক্সটি টেবলেব ওপর রাখিতে বাধ্য হইল। ডাক্তাৰ তাহার সে চমক লক্ষ্য 
করিলেন না। তিনি তরুণীর স্সন্দর মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলেন একটা! তীব্র 
চঞ্চলত। ও ব্যস্ততার ছাঁপ সারা মুখখানিকে ফ্যাকাশে কবিয়া দিয়াছে । বহু কষ্টে 
তকণী নিজেকে সংবরণ করিল । ) 
তরুণী। বাবাকে আজ আপনার কাছে নিয়ে এসেছি ডাঃ রায়চৌধুরি। 
ডাঃ স্থবিমল। নিয়ে এসেছেন, কৈ কোথায় তিনি ? 
তরুণী। বাইরে রোগীদের বসবার ঘরে তিনি অপেক্ষা কচ্ছেন। বন্ধ কষ্টে 
সেখানে তাঁকে বলিয়ে রেখে এসেছি । 
ডাঃ স্থবিযফল। তাঁকে এখানে নিয়ে আসতে আপনাকে খুবই বেগ পেতে 
হয়েছে বুঝি? 
তরুণী। সে ১ আর বলবেন না। এখন তাকে আপনার কাছে পৌছে 
দিয়ে আমি অনেক নিশ্চিন্ত বোধ কচ্ছি। 
ডাঃ স্ববিমল। বেশ ভাল কথা । প্রথমেই সতাকে আমার একবার পরীক্ষা 
করা দরকার। আপনি ততক্ষণ আমার এই ঘরে বসে একটু অপেক্ষা 
করুন | 
তরুণী। আপনার পাগল রোগীরা নিশ্চয়ই কেও এদিকে আসবে না। 
ডাঃ স্থবিমল। (আসন ত্যাগ করিস্রা) না নাসে ভয় নেই। তাদের তো 
কেবিনে বন্ধ করে রাখা হয় । কেবল একজন বাইরে থাকে এবং তাকে 
সুস্থ মাধ বললেই চলে। আমি এক্ষুণি ফিরে এসে আপনাকে আমার 
পরীক্ষার ফলাফল জানাব। 


১৫ 


মনোবৈজ্ঞানিক [ প্রথম অন্ধ 


(ডাক্তার ত্রাকেট হইতে সাদ! ওভারল্‌ খানি পরিয়া বাহির হইয়া! গেলেন। 
ডাক্তার ষে ছার দিয়া বাহির হইয়! গেলেন তাহার বিপরীত দ্বারের আড়াল হইতে 
লোকনাথ একবার উ'কি মারিল, একবার পেছনে চাহিল । তরুণী হাতবাক্স হাতে 
লইয়া উঠিয়া! দাঁড়াইল এবং ইতস্তত: দৃষ্টিপাত করিল। সহসা! লোকনাথকে 
উ'কি মারিতে দেখিল ) 

তরুণী | (চাপা গলায় ) লোকনাথ বাবু, শীগগির আন্ন। 

লোকনাথ । (ভ্রতবেগে প্রবেশ করিয়া ) পেয়েছেন? 


তরুণী । (হাতবাঝ্স দেখাইয়। ) হা, এর মালিককে ডাক্তার পরীক্ষা করতে 
গেছেন--তাড়াতাড়ি এখন আমায় বেরুবার পথ বলে দিন। 


লোকনাথ । কোন ভয় নেই। এই ঘর থেকে বেরিয়ে ঠিক ডান দ্রিকে একটা 
সিড়ি দেখতে পাবেন। সিঁড়িদিয়ে বরাবর তেতালায় চলে যাবেন-- 
কেও কিছু বলবে না। তেতালার ছাতে ওঠবার মুখেই বা পাশে একট] 
করিডর পাবেন, ত1 দিয়ে সৌজ! খানিকটা] গেলে যে সিড়ি দেখতে পাবেন 
সেট? ধরে ওদিকের একতলায় নামবেন-নেবে জাজ পার হলেই 
উডেন স্টখাটে পড়বেন। গেটের সামনে আপনার রকে মোটর 
নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখবেন । ০৬ [000 91)8179। 


তরণী। (হাতবাকঝ্সটি শাড়ীর আশচলে জড়াইয়া যাইতে যাইতে দোরের 
নিকট হইতে ) আপনি সাবধানে থাকবেন, ডাক্তার আপনাকে সুস্থ মানুষ 
বলে সন্দেহ করতে পারেন। 
লোকনাথ । ধন্যবাদ । 73০ 0301০, কেও আসছে । 
(তরুণীর ক্রত প্রস্থান । অন্ত দ্বার দিয়! ডাক্তারের সহকারী অমলের প্রবেশ ) 
অমল। আপনি কার সঙ্গে কথা কইছিলেন লোকনাথ বাবু? 
লোকনাথ । ( উদ্‌ত্রাস্তের মত চাহিয়া ) কেও নেই কিনা তাই নিজের সঙ্গেই 


খত 


তৃতীয় দৃস্ত ] মনো বৈজ্ঞানিক 


* একটু গল্প কচ্ছিলাম। এবার আপনি এসেছেন, ভালই হয়েছে। আস্কন 

ন| একটু কাব্য আলোচনা করি । 

অমল । (সন্দিগ্ধস্বরে ) আপনি এখানে এসে একটি মেয়েকে দেখেন নি? 

লোকনাথ । না, না, কি বলছেন আপনি? মেয়ে কোথায়? একটা মরীচিকা।, 
হয়তো বা আমার: কাব্যলক্ষ্মী, আবছায়ার মত চকিতে এইমাত্র আমার 
চোখের সম্মুখ থেকে সরে গেলো । 

অমল। ( উত্তেজিত ভাবে ) আপনাকে এঘরে আসতে কে বলেছিল ? 

লোকনাথ । আপনি আমার এ ঘরে আসার কৈফিয়ৎ চাঁন্‌ না? পাঁচ মিনিট 
অপেক্ষা করুন--আপনাঁর কথার উত্তর আমি দিচ্ছি। (সে ত্রতপদে 
বাহির হইয়া! গেল। ) 

অমল। লোকনাথ বাবু! শুনুন, শুনুন--( সে দ্বার পর্ষ্যস্ত গিরাছে এমন সময় 
রনেন আসিয়৷ প্রবেশ করিল।) 

রনেন। কি হয়েছে অমল? তোমায় এত উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেন? 

অমল। (ফিরিয়া! ধাড়াইয়া) রনেন, ডাক্তারের অনুমানই বুঝি বা সত্য। 

রনেন। ভাফ্টীরের অনুমান! কি বলছে! তুমি? তোমার জন্য ডাক্তার 
অপেক্ষা করে আছেন আর এখানে তুমি ডাক্তারের অন্থমান নিয়ে মাথা 
ঘামাচ্ছো। যে মেয়েটি এখানে এসেছিলেন তিনি কোথায় গেলেন? 

অমল। মেয়েটি নেই, কিন্তু এ ঘরে প্রবেশ করার পূর্ব মুহূর্তে আমি লোক- 
নাথকে মেয়েটির সঙ্গে বেশ স্বাভাবিকভাবে কথা কইতে শুনেছি । 

রনেন। সে আর এমন কি আশ্চর্য । মেয়েটির তো! জানবার কথা নয় যে 
লোকনাথ পাগল। তিনি হয়তে! কথ! কয়েছিলেন এবং পরে বুঝতে পেরে 
ভয়ে পালিয়েছেন। 

অমল। প্রথমে আমারও তাই মনে হয়েছিলো কিন্তু তা নয়। ডাক্তারের 
অনুমান ও লোকনাথের বর্তমান ব্যবহারের কথা আমি বতই ভাবছি ততই 


খপ 


আনেবৈজ্ঞাজিক প্রথম অন্ক 


আমার মনে হচ্ছে লোকনাথ পাগল নয়। অথচ এর মূলে কোন উদ্দেশ্যই 
খুঁজে পাচ্ছি না। আমার মাথা কেবলই গুলিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক, 
বৃথা বাকা ব্যয়ে সময় নষ্ট করে কোন লাভ নেই। এসো, লোকনাথ 
কোথায় গেলে দেখি । সে আমায় পাচ মিনিট অপেক্ষা! করতে বলে এই 
মাত্র বেরিয়ে গেল। আমার দৃঢ় ধারণা মে আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে 
কোন কারণে পালাবার চেষ্টা করবে। 

( তাহার! গমনোগ্যত এমন সময় রিভলভার হস্তে লোকনাথের প্রবেশ ) 


'লোকনাথ। লোকনাথ আপনাদের চখে ধূলে৷ দিয়ে পালাবার চেষ্টা করেনি। 
নে স্বশরীরে আপনাদের সন্মুখে বর্তমান রয়েছে । এখন আপনার! দুজনে 
অস্কগ্রহপূর্বক এই রিভলভারের নলে চোখ ছুটি আবদ্ধ করে গুটি গুটি 
লোকনাথের অনুসরণ করলেই সে বাধিত হবে। 

রনেন। (ভয়বিল্ফারিত নেত্রে ) লোকনাথ! 4১০ 5০০. 62115 0094 ? 

লোকনাথ । 91৮ ৪০ | 


( বনেন ও অমল লোকনাথকে'অন্থুসরণ করিতেছে, লোকনাথ পিছনে পা ফেলিয়! 
ছুইজনের প্রতি দৃষ্টি ও রিভলভার উদ্যত রাখিয়৷ বাহিরে যাইতেছে- সঙ্গে সঙ্গে 
পর্দাও নামিয়া আসিতেছে । ) 


চতুর্থ দৃশ্য 


(ডাক্তার স্ুবিমলের প্রথম অঙ্ক ১ম দৃশ্ঠ-বর্ধিত নিজস্ব কক্ষ । ডাঃ সুবিমল অলঙ্কার 
বিক্রেতা অরবিন্দ সরকারকে লইয়া প্রবেশ করিলেন। সঙ্গে দুজন হৃষ্টপুষ্ট বক্ষী, 
আসিয়! দ্বারপ্রান্তে দঈীড়াইয়া রহিল । ) 


ডাঃ স্ববিমল। আপনি এ আরামকেদারাটায় বশ্নন। 
সরকার । ( উপবেশন করিয়া ) এইটি বুঝি আপনার বসবার ঘর । তা বেশ, 
আপনার নাম আমরা কাগজে পড়েছি। সত্যই আপনার মত লোক 
আমাদের দেশের গৌরব । 
(ডাক্তাব কোন উত্তর দিলেন না, তিনি সন্মুখের চেয়ারে বসিয়! স্থির দৃষ্টিতে 
সরকারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে মন দিলেন |) 
সরকার। আপনি কিছু মনে করবেন না, আমার দোকানে উপস্থিত কেও 
নেই, ডেতরে কাউকে পাঠিয়ে একটু খবর নিলে ভাল হয়। তারা 
গয়নাগুলো একটু শীগগির পছন্দ করলে আমিও তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি। 
( অধীরভাবে তিনি অল্প অল্প মেঝেতে লাঠি ঠুকিতে স্থুরু করিলেন )। 
ডাঃ স্থবিমল। (নিকটে আপিয়া সহসা সরকারের হাত হইতে লাঠিটা 
ছিনাইয়া লইয়া বিনীতভাবে ) লাঠিটা আপনার ভাল জায়গায় রেখে দি 
কি বলুন? (ডাক্তার লাঠিট! দ্বার প্রান্তে রক্ষীদের হাতে দিয়! দিলেন )। 
সরকার । (বিশ্বয্ন বিস্কারিত নেত্রে) কি আশ্চর্য | লাঠিটা হঠাৎ আপনার 
এমন কি দ্বোষ করলো, ওটাকে কোথায় পাঠালেন? 
ডাঃ সুবিমল। € নোটবুক লইয়া নোট করিতে করিতে ) আপনার লাঠি 
বথাসময়েই পাবেন--সেজন্ত চিস্তিত হবেন না। 


কি 


' অনোবৈজ্ঞানিক [ প্রথম অঙ্ক 


সন্তকার। (( উদ্ধিগ্রভাবে ) লাঠি চুলোয় যাক গে, কিন্ত আমীর গয়নাগুলোর 
জন্য সত্যই এবার আমি চিস্তিত হয়ে উঠতে বাধ্য হচ্ছি। যে মেয়েটি 
আমার দোকান থেকে গয়ন। নিয়ে এসেছেন তার সঙ্গে আপনার কি পরিচয় 
জানতে পারি কি? 

ডাঃ স্থবিমল। আপনি বেশ ভাল করে মনে করবার চেষ্টা করুন, সত্যই কি 
কোনকালে আপনার গয়নার দোকান ছিল এবং সেখান থেকে কোন গয়ন। 
চুরি হয়েছিল? 


সরকার । (অধিকতর বিস্ময়ের সহিত) আপনি--মাপনি কি বলছেন? 
আমার গয়নার দোকান ছিল মানে- আমি তো! আমার গয়নার দোকান 
থেকে এইমাত্র আপনার বাড়ীর একটি মেরের সঙ্গে প্রায় আশীহাজার 
টাকার গয়ন! নিয়ে এলুম ॥ মেয়েটি আমান বাইরের ঘরে বসিয়ে রেখে 
গয়নাগুলে। বাড়ীতে অন্য সকলের পছন্দের জন্ত ভেতরে নিয়ে গেলেন । 
এখন আপনি আমায় এ ঘরে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা কচ্ছেন--কোনকালে 
আমার গয়নার দোকান ছিল কিনা, আমার গয়না চুরি হয়েছিল কি ন1। 
এসবের মানে তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি দেশের 
একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত যে এভাবে ঝসিকতা করতে পারেন আমি স্বপ্নেও 
ভাখিনি। যাইহোক গয়না পছন্দ হয়ে থাকলে বা কিনবেন কিনুন, 
আমার গয়নার বাক্স ফিরিয়ে দিন। 


( ডাক্তার স্মবিমল সরকারের সমস্ত কথা নোট করিতে লাগিলেন, কোন উত্তর 
দিলেন না,_-সরকার অধীরভাবে উঠিয়া ঈলাড়াইলেন |) 


সরকার। কিমুক্কিল! আপনি অত লিখছেন কি? আমার কথার উত্তর 
দিচ্ছেন না কেন? আমি জানতুম আপনি পাগলের চিকিৎসাই করেন, 
আপনি নিজেও বে পাগল সে কথা ভাবতে পারিনি । 


চতুর্থ দৃষ্ত ] অমোঠবজ্ঞানিক 


ডাঃ কুবিমল। (স্থির পৃষ্টিতে সরকারের মুখের দ্িকে' চাহিয়া) আপনার 
ধারণা যে কেও আপনার গয়নার বাঝ্স নিয়ে এসেছে। 
সরকার । আবার বলেন কেও! কেও কেটা নয় মশায়, এ বাড়ীরই একটি 
মেয়ে নিয়ে এসেছে । আপনি কি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না? বাড়ীর 
ভেতর খোঞ্জ করে দেখলেই সব বুঝতে পারবেন । 
ডাঃ স্থবিমল। (দিকে ) আপনি স্থির হয়ে বন্থন। এখানে কেও আপনার 
গয়নার বাঝ্স নিয়ে আসেনি । এ বাড়ীতে কোন মেয়ে বাস করে না। 
সরকার । কি অসম্ভব কথা! কোন যেয়ে বাস করে না? তবে ষে 
মেখেটি এইমাত্র আমায় বাইরের ঘরে বসিয়ে ভেতরে গেল, সে কে? 
ডাঃ স্থবিমপ। আমি আপনাকে সবই বুঝিয়ে বোলব। আগে আপনি 
স্থির হয়ে বস্থুন। 
গরকার | বলুন মশায়, শীগগির বলুন। আশী হাজার টাকার গয়নার বাঝ 
হাত ছাড়! করে কোন লোকই স্থির হয়ে বসতে পারে না। 
ডাঃ স্থধিমল। আপনি স্থির হয়ে না বসলে আপনাকে আমি কিছুই 
বোলব না। 
সরকার। (বাধ্য হইয়া উপবেশন করিলেন ) বেশ, তাই বসলাম, এখন 
বলুন । 
( ডাক্তার কলিং বেলে চাপ দিলেন, একজন নার্স আসিয়া প্রবেশ করিল ) 
ডাঃ স্থবিমল। (নাসের প্রতি ) এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর বস নিয়ে এসো। 
সরকার। (লাফাইয়] উঠিয়া) দূর ছাই, নিকুচি করেছে আপনার নেবুর 
রসে । আগে আমার গয়নার বাক্স কোথায় বলুন, নইলে আমি পুলিশ 
ডাকবো, আমার দোকানে ফোন করবো। 
( সহসা তিনি ডাক্তারের উত্তরের প্রতীক্ষা! না করিয়! আতঙ্কগ্রস্তভাবে সম্দুখের 
তেপায়া টিপয়ের ওপর হইতে ফোনটি তুলিয়! ধরিলেন-_সঙ্গে সঙ্গে একবার আড়- 


৩১ 


অন্দোবৈত্তামিক [ প্রথম অব 


চোখে ডাক্তারের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন-_কিন্তু ডাক্তার ভীহাকে বাধ! ন! দিয়া 
নিরধিবকারভাবে দেখিতে লাগিলেন । ) 
সরকার । (ফোনে) হ্যালো ! হ্যালো ! বরাবাজার থি, থি, জিরো ফাইভ। 
- হ্যালো ! কে বিশ্বনাথ? বিশু, আমি বড়,দা, ১১০বি, লাউডন্‌ স্বীট থেকে 
বলছি-_মনোবৈজ্ঞানিক ডাক্তার স্থবিমল রায়চৌধুরির বাড়ী থেকে 1 
একটা মেয়ের সঙ্গে এখানে গয়না নিয়ে এসেছিলুম। মেয়েটি বহুক্ষণ 
হো'ল আমায় বাইরে বসিয়ে গয়নাগুলে। নিয়ে ভেতরে গেছে ।--না কেও 
কোন নংবাদ দিচ্ছে না । এদের মংলব হয়তো ভালো নয়। ডাক্তার? 
হা] ডাক্তার এইতে। আমার সামনে বসে রয়েছে । (তিনি ভাক্তারের 
দিকে চাহিলেন--ডাক্তার উৎসাহিত ভাবে উহার কথাগুপি নোট কারয় 
চলিয়াছেন )--ন] গয়নার বিষয় কিছুই বলছে না, দ্বারে দুটো গুণ্ডা খাড়া 
করে বেখেছে, আমার লাঠি কেড়ে নিয়েছে । বোধ হয় আমায় পাগল 
সাজাবার মতলব। তুমি শিগগির পুণিশ নিয়ে এখানে চলে এসে] । হ্যা, খুব 
শিগগির । এসে আমায় দেখতে পাবে কি না সন্দেহ-_খুব তাড়াতাড়ি 
(তিনি ফোন রাখিয়া দিলেন, ডাক্তারও লেখা বন্ধ করিলেন। নার্স লেবুব বস 
লইয়। দাড়াইয়া আছে। ) 
ডাঃ স্থবিমল। এইবার এই লেবুর রূসটুকু প্নেয়ে ফেলুন । 
সরকার। (তিনি ফোন করায় কাহারও মধ্যে কোনসপ চঞ্চলতা লক্ষ্য না 
করিয়। কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করিয়া চাহিয়। রহিলেন ১ প্রতি মুহূর্তে 
। আমি আপনার ব্যবহারে অবাক হয়ে যাচ্ছি। আপনি কি আমায় সত্যই 
পাগল ভেবেছেন ? সত্যই কি আমার মানসিক বিরতি ঘটেছে? (সহসা 
অন্থনয়ের স্থরে ) ডাক্তার ! যে মেয়েটি গয়না নিরে এলে! তার পরিচয় 
আমায় বলে দিন--মামি আপনাকে পুলিশের হাতে দেবো না। পুলিশ 
এলে তাদের আমি টাক! দিয়ে ফিরিয়ে দেবে! ৷ ডাক্তার! 


৬৩ 


চতুর্থ দন্ত ] অই সিনা 


ন।.স৬ সক্ষুবে গিয়া) ) আগে এটা খেছে ৫ফলুন । 
জি ( উত্তেজিত্তভাবে ) না, খাব না। €তিনি গ্লাস লইয়া ছাড়িয়া 
দিলেন ) আমায় পাগল সাজান আমি বার কবে দেবো । 
( ভাক্তারের ইঙ্গিতে দ্বারের নিকট অপেক্ষারত ছুইজন রক্ষী আসিম! সরকারকে 
ধরিয়। ফেলিল ) 
পচা: স্ুবিমঙ্গ | গুঁকে আবামকেদারায় শুইয়ে একটু বাতাস কর। কোন 
কথার উত্তর দিয়ে বিরক্ত করো না- আমি গুর মেয়ের সঙ্গে দেখা করে 


এক্ষুনি আসছি। (প্রস্থান ) 
( রক্ষী ্বয় বলপূর্্বক অরবিন্দ সরকারকে কেদারায় শয়ন করাইল-_-নার্স বাতাস 
করিতে লাগিল ) 


মন্রকার। (শ্রাস্ত-ক্লান্ত ও বিস্মিতভাবে ) আমার মেয়ে! আমার মেয়ের 
সঙ্গে দেখ। করবে বলে গেল। আশ্চর্য্য! রহস্য ধেন ক্রমেই ঘনীভূত 
হয়ে উঠছে। সবকিছুই কি আমি তৃপ দেখছি? না না নিশ্চয়ই এর 
পেছনে একট ঘোরতর ষড়ধস্ত্র রয়েছে । কিস্ত সেই মেয়েটি! (নাসের 
প্রতি ) নাস? তুমি সভা করে বগে। সে মেম়েটি কে? ভাক্তারের সঙ্গে 
তার কি সন্বন্ধ? চুপ করে রইলে, তুমিও উত্তর দেবে না? (হতাশ 
ভাবে) এ আমি কোথায় এলাম কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না। (মুখে 
চোখে একট! অব্যক্ত যস্ত্রণা ফুটিস্বা উঠিল। ) 

[৮ আপনি অস্থির হবেন না। বরঞ্চ একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন। 
কার। বটে! খুমবো! আমার হাজার হাজার টাকার গয়না! চলে বাবে 
আর জামি পাগল সেজে নিশ্চিস্তে তোমার হাতের বাতাস খেতে খেতে 
খুমবো । ও সব চালাকি চলবে না, হয় আমি সবাইকে চুরির কেসে 
ফেলবে! নয় নিজেই পাগল হয়ে যাবো । 

( ডাক্তার গুবিমল ব্যস্ততাবে প্রবেশ করিলেন ) 


৩ 


অলোবৈজ্ঞাজিক [ প্রথম অঙ্ক 

ডাঃ স্থবিমল। আশ্চর্য মিস্‌ সরকার, লোকনাথ, অমল, রনেন চারজনেই 
কি একসঙ্গে উধাও হোল? (নাসের প্রতি) নাস? তুমি অমল বা 
রণেন বাবুর সংবাদ জান? 

নার্পস। এখানে আসবার আগে তাদের আমি লেবরটারিতে যেতে 
দেখেছিলাম । 

ভাঃ স্থবিমল। তার! লেবরটারিতেও নেই। (তিনি ধীরে ধীরে অরবিন্দ 
সরকারের দিকে আগাইয়া আসিলেন, মনোযোগ সহকারে কিছুক্ষণ 
তাহাকে নিরীক্ষণ করিলেন, অরবিন্দ সরকার রাগে গুম্‌ হইয়া কোন 
কথা বলিতে পারিলেন না, ডাক্তারের স্বর সন্দেহপূর্ণ ) আপনি বলছেন, 
সত্যই বর্তমানে আপনার গয়নার দোকান আছে? যদি থাকে সে 
দোকানের নাম আমায় বলতে পারেন ? 


সরকার । এতঙ্ষণে বুঝি মপায়ের চৈতন্য হয়েছে? এ কলকাতা সহরে আর, 
এস, সরকার এগ সন্দ, জুয়েলাসের নাম কে না জানে? সেই প্রতিষ্ঠানের 
মালিক আমি অরবিন্দ সরকার । কাকে নিয়ে আপনি খেল কচ্ছেন 
তা জানেন না। কিন্তু এখনে। সময় আছে, সেই মেয়েটির পরিচয় বলুন, 
আমার গয়না ফিরিয়ে দিন, আমি ও পুলিশকে ফিরিয়ে দেবো । 

ডাঃ স্থবিমল। ( অত্যন্ত বিব্রতভাবে টেলিফোন গাইডের পাতা উদ্টাইতে 
লাগিলেন এবং ক্ষপরেই ফোন ধরলেন, ) হালো--বি, বি, থি, থি, 
জিরো! ফাইভ। হালো, আপনাদের বর্তমান মালিককে চাই।-_কি? 
তিনি বাইরে গেছেন ? কোথায় গেছেন বলতে পারেন? অবহেলা করবেন 
না, বড্ড জরুরি কাজ। বলতে পারবেন না? ওঃ তিনি কোন জায়গা থেকে 
ফোন করায় ভার ছোট ভাই থানায় গেছেন--আচ্ছা-ডোক্তার বিস্মিত 
ও বিহ্বলভাবে ফোন বাধিয়া! দিলেন। রক্ষিদের প্রর্তি) তোমরা! গুকে 


৩৩৪ 


চতুর্থ দৃষ্ঠ ] অলো নৈজ্যা দিক 
ছেড়ে বাইরে যাও। (সরকারের প্রতি) আপনি আমায় ক্ষমা করবেন 
শ্রীযুক্ত সরকার । আমি এখনো কিছুই বুঝতে পারছি ন1! 


€ ডাক্তারের কথা শেষ না হইতেই বিশ্বনাথবাবু একজন পুলিশ ইন্স্পেক্টার ও 
ছুইজন কনেষ্টবল্‌ লইয়া প্রবেশ করিলেন। কনেষ্টবল্‌ ছুইজন ইন্স্পেক্টারের 
ইঙ্গিতে দরজা! অধিকার করিয়া দাড়াইল।) 


ইন্স্পেক্টার। ( ডাক্তারের প্রতি ) ব্যাপার কি শ্যার? 

ডাঃক্বিমল। ] ৪0 6068110 ট৪৬110660. কয়দিন পূর্বে মিস্‌ সরকার 
নামে পরিচয় দিয়ে একটি মেয়ে আমার কাছে আসেন এবং তীর পিতার 
মানসিক চিকিৎসার ভার নিতে অনুরোধ করেন। পিতার রোগের 
লক্ষণ সম্বন্ধে বলেন তার পিতার ধারণ] কেও তার গয়নার বাক্স নিয়ে 
পালিয়েছে । তিনি ধাকে সামনে পান তাকেই গয়নার বাক্স পুনরুদ্ধারের 
জন্য অন্থরোধ করেন। সেদিন মেয়েটিকে আমি তার পিতাকে সঙ্গে 
করে আনতে উপদেশ দিয়েছিলাম । আজ আমি যখন ভেতরে আমার 
বসবার ঘরে বসেছিলাম সেই সময় মেয়েটি এসে সংবাদ দেন তার 
পিতা রোগীদের বসবার ঘরে অপেক্ষা কচ্ছেন। 

সরকার । (ডাক্তারের কথা শেষ করিতে না দিয়া চিৎকার করিয়]) এসব 
বানালো কথা। এ সমন্তই ভগ্তামি। আপনি বিশ্বাস করবেন না। যে 
মেয়েটির সঙ্গে আমি এখানে এসেছি সে আমার দোকান থেকে গয়ন! 
পছন্দ করে সেগুলি নিয়ে তার সঙ্গে এ বাড়ীতে আসতে অনুরোধ করে। 
'আমাকে বাইরের ঘরে বসিয়ে গয়নাগুলি বাড়ীর অন্ত সকলের পছন্দের 
জন্য ভেতরে যায়। এদিকে ডাক্তার এসে বলপূর্বক আমার লাঠি ছিনিয়ে 
নিয়ে আমাকে পাগল সাজাবার চেষ্টা করেন। বিপদে পড়ে. আমি 
দোকানে ফোন করি। 


৩৫ 


ধরে ধিজগিক [ প্রথম অঙ্ক 


ইন্স্পেক্টার। (সরকারের প্রতি ) আপনি চুপ করুন। আপনার বক্তব্য 
আমরা পরে শুনছি। 

বিশ্বনাথ । দাদা, আপনি একটু স্থির হ'ন। ডাক্তারের বা বলবার আগে 
বলতে দিন। 

ইন্স্পেক্টার। (ডাক্তারের প্রতি ) তারপর স্তংর? 

ডাঃ স্থবিমল। আমি মেয়েটিকে আমার বনবার ঘরে অপেক্ষা করতে বলে 
শরযুক্ত সরকারকে এ ঘরে নিয়ে এসে পরীক্ষা করি। ফিরে গিয়ে আমি 
মেয়েটিকে আর দেখতে পেলাম না। সেই সঙ্গে আমার সহকারীঘ্য় ও 
পাগল রোগী লোকনাথকেও পাওয় যাচ্ছে না । 

ইন্স্পেক্টার । রোগীদের বসবার ঘরে শ্রীধুক্ত সরকারকে তাঁর মেয়ের সাহায্য 
না নিয়েই চিনলেন কেমন করে? 

ডাঃ স্থবিষল। প্রথমতঃ সেখানে তিনি একলা! আমার রক্ষীদের পাহারায় 
ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ আমি স্রেখানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি 
আমাকে গয়নার বাক্সের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। মেয়েটির বর্ণনার সঙ্গে 
এর প্রতিটি 3570010 হুবহু মিলে যাওয়ায় চিনতে আমার দেরী হয়নি & 
তাছাড়া আমার রক্ষীরা-- 

( হস্তদস্তভভাবে দারোয়ান আসিয়। প্রবেশ করিল ) 
দাকোয়ান। (ব্যস্তভাবে ) হুজুর ! 
( সকলে সেদিকে ফিরিলেন ) 


দরোয়ান। (ডাক্তারের প্রতি ) হুজুর, তেতালাক। বাথরুম বাহারনে তাল 
যন্দ হায় বাকি তাজ্জব.কি বা ভিতরসে কিসিক৷ আওয়াজ আরহাহে । 
উ হামকো। রণেন বাবুকী গঞ্পেকা আওয়াজ মালুম হুয়া--চলিয়ে তুরস্ত 
খোল্‌কে দেখা যায়। 


রথ দত্ত ] মলোবৈজ্ঞাজিক 

ডাঃ স্থবিমল। (পুলিশ ইন্স্পেক্টারের প্রতি ) আনুন, আনুন আমার সঙ্গে, 
সেখানে কাউকে পেলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো। 

ইন্স্পেক্টার । চলুন» চলুন, ঘটনাট। অতান্ত রহস্যজনক ঠেকছে । (অরবিন্দ 
সরকার ও নার্প বতিত সকলের দ্রতপদে প্রস্থান । অববিন্দ সরকার 
হতাশায় ও দুশ্চিন্তায় কেদারায় এলাইয়া পড়িলেন। ) 

নাসণ। (নিকটে গিয়া) আপনি বড্ড শ্রাস্ত হয়ে পড়েছেন। আপনার অন্ত 
অল্প গরম দুধ নিয়ে আসবো ? 

সরকার । ( উঠিক়্া বসিয়া চিৎকার করিয়! ) ন! না, আমি কি শিশু যে দুধ 
খাব? যাও, যাও, সরে যাও আমার সুমুখ থেকে । ধরা পড়ে এখন সব 
খোশামুদি কর! হচ্ছে । 

( নার্স তাহার মৃত্তি দেখির! ভয়ে সরিয়া গেল, পর্দাও নাবিয়া আসিল ) 


৩৭ 


দ্বিতীয় অন্ধ: 
প্রথম দৃশ্য 


( গড়িয়াহাটা অঞ্চলে প্রফেসার তবফদাবের তেতালাব পাঠকক্ষ । সময় সন্ধ্যা 
সাত ঘটিকার কাছাকাছি । ) 

( কক্ষটীর দেওয়ালে দেশ-বিদেশে দার্শনিক ও মনস্তত্ববিদগণের প্রতিমূর্তি শোভা' 
পাইতেছে, সেই সঙ্গে প্রফেসার তরকদারেরও নান! ভঙ্গীতে কয়েকটি ছবি 
রহিয়াছে । কক্ষটি স্প্রশস্ত ও স্সিপ্ধ আলোয় আলোকিত । ঘরের মধ্যস্থলে 
একখানি অস্বাভাবিক আকারের বড় কৃষ্ণচন্খ্াচ্ছাদিত টেবিল ও গদি আটা 
চেয়ার। টেবিলের ওপর বুকষ্ট্যাণ্ডে মূল্যবান মোট। মোট! পুস্তক, টেলিফোন, 
লিখিবার সরঞ্জাম ও একটি ভক্মাধাব শোভা পাইতেছে। বৈদ্যুতিক টেবিল 
লেম্পের বান্ব সেড সহ টেবিল হইতে প্রায় ছই হাত ওপবে উঠিয়। সহসা যেন, 
টেবিলের কাছে ছে] মারিয়া নাবিয়! আসিয়াছে । টেবিলের দক্ষিণ পার্থে তামাকের 
পাইপস্ট্যাণ্ড, তাহার অল্প দূরে একখানি আরামকেদার! ও ছোট টেবিল। বাম 
পার্থ একটী বড় ফাইলিং কেবিনেট । ঘরের পেছনের ছুই কোনে তিনফুট উ"চু 
ও ছয়ফুট চওড়া কাচের বুক কেসে পুস্তক আছে। ছুই বুক কেসের ওপর দুইটি 
শুভ বাই, । বাষ্ট, দুইটির মাথায় একটি করিয়! ছোট বাব, থাকায় আরও শুভ্র 
দেখাইতেছে। যাহার! চেনেন তাহারা বাষ্ট, ছুইটি দেখিলেই চিনিতে পারিবেন-_ 
একখানি ৪৮৪০: ও অন্খানি 2৪৬1০ সাহেবের । টেবিলের বিপরীত দিকে 
ছুই তিনটি চামড়ার গদি আটা চেয়ার। সমস্ত ঘরখানি কার্পেট-মণ্ডিত | 
টেবিলের ঠিক পেছনেই একটী বড় শাশি-অটা জানালা । ছুই পাশে ছুটি 
মেহগণি কাঠের লম্বা-চওড়া নিকেলের স্থাণ্ডেল দেওয়া দরজার কপাট বন্ধ 1) 


৬৩৮৮ 


প্রথম দৃষ্ধ ] বহঝোবৈজআমিক 


(পর্দা অপসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল ঘরের দরজা! জানালা বন্ধ ও 
বৈছ্যতিক আলো! নির্বাপিত। শুধু সামি দিয়া বাহিরের খানিকটা আলো! 
আসিয়া আবছায়ার স্থষ্টি করিয়াছে। আবছায়ার মধ্যেই বৈদ্যুতিক টেবিল 
লেম্পের নিকেল 985, পাইপ 5:৪7. ও সাদা বাষ্ট, ছইটি অধিকতর উজ্জ্বল 
দেখাইতেছে। ঘরের মধ্যে কেহ নাই। ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকের দরজা খুলিয়া 
গেল। পার্থর কোন ঘরে ঢং ঢং করিয়া সাতটা বাজিল। দরজা দিয়া একটি 
নারীমূর্তি প্রবেশ করিল। মৃূত্তি স্ুইচে হাত দিতেই ঘর আলোয় উন্তাদিত 
হইল। দেখা গেল গহনার বাক্স হাতে লইয়া! সবিতা দীড়াইয়া আছে। 
সবিতাকে সহজে চেন! যায় না, তাহার-কেশ বেশের পরিবর্তন ঘটিয়াছে। 
তাহার চুল খোপার পরিবর্তে বৰ, ফেশানে ভাজ করিয়া ঘাড়ে ওপর ঝোলান। 
শাড়ীব ওপর মূল্যবান দিষ্কের কাশ্মীবি সুচিশিল্প-খচিত ডেসিং গাউন। সে 
তাড়াতাড়ি গহনাব বাক্স বড টেবিলের ওপর রাখিয়া একটি হাই তুলিল, তাবপর 
অত্যন্ত ক্রাস্তভাবে ইজি-চেয়ারের ওপর সম্পূর্ণ দেহকে এলাইয়া দিল। পুনরায় 
দরজা দিয়া লোকনাথ প্রবেশ করিল এবং হেলিতে ছুলিতে আসিয়া টেবলের 
সম্মুখে একটি চেয়াবে বসিল। সবিতা জিজ্ঞান্থনেত্রে লোকনাথের দিকে চাহিল। 
লোকনাথ কান পাতিয়া কিছু শুনিবার চেষ্টা করিল ও প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততাবে 
উঠিয়া দাডাইল |) 


লোকনাথ । এ আসছেন, সি'ড়িতে পায়ের শব শোনা যাচ্ছে। 
সবিতা । আপনি তাকে খবর দিয়েছেন? 
(লোকনাথ উত্তর দিবার্‌ পূর্বেই বাম দিকের দরজ। সশব্দে খুলিয়া গেল এবং প্রঃ 


তরফদার বিছ্যুৎবেগে ঘরে প্রষেশ করিয়া সবিতাকে দেখিতে পাইলেন । প্রেসার 
তরফদারের পরনে কালো ট্রাউজারের ওপর সাদা ওভারল। চোখে হনোকল 


ঝুলিতেছে। ) 


জরজাট হ্যা জিফ [ খিতীয় অঙ্ক 

১ তিরফদার। 0০0281910120055 1 0010868001900208 25 €1] 
0: 5001 81890 505028$. ( সবিত1 উঠিয়া দাড়াইয়াছিল, তিনি 
কাছে গিয়া তাহাকে ধনিয়া আনন্দের উচ্ছাপে চুমু খাইতে লাগিলেন। 
তারপর লোকনাথের দিকে ফিরিলেন ) 1গ 10:85 00201981710), 
(তিনি লোকনাথের করমর্দন করিলেন । ) আন্কে যে আমার কি 
আনন্দ হচ্ছে সে তোমাদের বুঝিয়ে বলতে পারবে! না (বলিতে বলিতে 
তিনি নিজের চেয়ারে বসিয়া গহনার বাঝুটা কাছে টানিয়া খুলিয়! 
ফেলিলেন। ) (02078101765 ! দেহের বাহিক শ্রী বাড়াবার জন্য 
মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না পরে ঘুরে বেড়াবে আর সামান্য এক লক্ষ 
টাকার অভাবে আমার শ্রেষ্ঠ সাধনায় বাধা পড়বে-ট০! ০! 
লোকনাথ---] 812811০6266 01028000169] 16179510019 5710) 006 
১০ 10610 ০£ 00656 01781006765, (তিমি ৬25০ সাহেবের 
বাষ্টের কাছে ছুটিয়! গেলেন। বাষ্টের মাথার হাত দিয়া) তোমার 
স্প্রকে আমি সফল করবো, জগতে নৃতন মানুষ তৈরি করবো আমি- 
যে মানুষ চুরি করবে না, ছলনা করবে না, হিংসা করবে না, যুদ্ধ করবে 
না,যে মানুষ দেবতার স্বপ্নকে এজগতে কূপ দিতে পারবে--সেই মানুষ 
গড়ে তুলবো আমি। €ভাবাবেগ সংবরণ করিয়া তিনি ধীরে ধীরে 
লোকনাথ ও সবিতার সম্মুখে গিয়া দাড়াইলেন।) লোকনাথ! সবিতা ! 
তোমরা দুজনে সমস্ত লজ্জা, ভয়, মান বিসঙ্জন দিয়ে যে কাজ করেছে! 
সেজন্য আমার লাধনা তোমাদের দুজনের কাছে চিরকাল খণী হয়ে 
থাকবে। ্‌ 

লোকফদমাথ। জাগাদের পররস্ভা কাজ কিহরে? 

গু? ভরফদার । তোমাঙের পরবর্তী কাজ? একটা বিশেষ কাজ এখনও 
আমাদের বাকী বয়েছে--ভতাতে আনর। কৃতকার্য হতে পাবো কি ন! 


৪৯ 


গুথম দুষ্ট হোগা দিব 


জানি না তবে সেটুকু সমাধা হলে আমি নিশ্চিন্তে আমার আ;ল কাজ 
স্বর করতে পাবি। 

সবিতা । কি সে এমন কাজ বাবা? 

প্রঃ তরফদার । ডাঃ ক্ুবিমলকে আমাদের দলভুক্ত কব]। 

সবিতা । কিন্ত তিনি আমাদের দলে আসবেন কেন বাবা? 

প্রঃ তরফদার । (খানিক চিন্তা করিয়া) আস্বেন কেন? আমিও তো 
তাই ভাবছি সে আসবে কেন? বর্তমান মনোবিজ্ঞানের গুরুতর সমস্যাই 
তো! এইখানে । স্ববিমল বিশ্বাস করে মানুষের মন আছে, সেই মনকে 
সে বিশ্লেষণ করে, সেই মনের চেতন, অবচেতন নান! অবস্থার ম্বরূপ বর্ণনা 
করে মান্ষের ব্যবহারকে আরও জটিল করে তোলে । মন বলে কোন 
বস্ততে আমার বিশ্বাস নেই, আমি বিশ্বাস করি মানুষের বাহিক ব্যবহারে। 
এই বাবহারের কিরূপ উত্তেজনায় কিরূপ প্রতিক্রিয়া এইট্ুকুই আমার 
সাধনার বসন্ত । মানুষের এই বাহিক ব্যবহারকে উপযুক্ত উত্তেজন] দিয়ে 
আমি আয়ত্ত করতে চাই। আমার স্বপ্ন-আমার গবেষণাগার থেকে 
প্রতিটি শিশু যেদিন মানুষ হয়ে পৃথিবীর বুকে হাটবে সেদিন তাদের 
স্সংবত ব্যবহারে পৃথিবী হ'বে শান্তিপূর্ণ, সৌন্দধ্যময়। কিন্ত আমার 
এই স্বপ্ন কোনদিন সফল হতে পারে বলে কেও বিশ্বাস করে না। তারা 
বলে আমি পাগল |! তোমাদের চুজন ছাড়া কেও আমায় বিশ্বাস করে 
না। আমার ভয় হয় তোমরাও বা কোনদিন আমার মতবাদ সম্বন্ধে 
ছস্থ! ভাবিয়ে ফেলো. 

সবিতা । আপনার সে ভয় নেই বাবা । আপনার পথ কঠিন হতে পারে কিন্ত 
আপনার সাধনার বস্তুতে ভূল নেই। 

প্রঃ তরফদার। আমি জানি। আমি জানি জাঁমায় সাধনায় ফোন ভূল 
নেই। (ভিনি টেবিলের ওপর মু্ঠ্যাঘাত করিলেন ) গামার এই 


৪১ 


অজোৈজাজিক [ দ্বিতীয় অক 


সাধনার জগ্ক আমি কি করেছি জান লোকনাথ? আমার সমত্য দৈহিক 
আরাম বিসর্জন দিয়েছি, তাছাড়া যে মনে আমি বিশ্বাস করি না আমার 
সেই ভ্রমাত্মক মনের প্রবৃত্তিগুলিকে আমি অহরহঃ দমন করে চঙ্সেছি। 
স্থবিমল যাকে বলে 2:21:6951070--অব্দমন । আমি বিশ্বাস করি না, 
আমি জানি আমি আমার ব্যবহারকে আয়ত্ব করেছি। একে আয়ত্ত 
করতে আমায় বিশেষ বেগ পেতে হতো! না যদ্দি শিশুকাল থেকে পুথিবী 
আমার কানের কাছে মন বলে একট। কিছুর অস্তিত্ব ঘোষণা না করতো । 
(তিনি লোকনাথের কাছে সরিয়া আসিয়! তাহার কাধে হাত রাখিলেন ) 
আমার সেই ভ্রমাত্মক মন মাঝে মাঝে কি বলে জান লোকনাথ, সে বলে-_ 
(তিনি সহনা দুরে সরিয়া আসিলেন) না, না সে কথা বলেআমি 
তোমাদের চঞ্চল করে তুলবো না। (কিছুক্ষণ তিনি স্থির ভাবেই 
ঈাড়াইয়। রহিলেন, পরে আপন মনেই স্থরু করিলেন) আমি ভাবছি 
ভবিষ্তততের কথা, আমার এই সাধনার উত্তরাধিকারীর কথা । আমার 
পর্মীয়ু হয়তো৷ আরও ছুই দশক, তারপর আমি এই প্রারৰধ কাজের ভার 
কার হাতে তুলে দিয়ে যাবো। একাজের ভার নিতে পারতো এক 
স্থবিমল; তার বৃদ্ধি আছে, প্রতিভ1 আছে, কিন্তু ভাগ্যের এমনিই 
পরিহাস যে সে সম্পূর্ণ আমার মতের বিপোধী। তবুও আমি তাকে 
আনতে বলেছি, তাঁর সঙ্গে আমি একবার শেষ বোঝাপড়া করবে।। 

লোকনাথ। কিন্তু ডাক্তার রায়চৌধুরী আমায় ও সবিতার্দেবীকে খুব ভাল করেই 
চেনেন। কোনদিন কোন মুহূর্তে তার সঙ্গে, আমাদের সাক্ষাৎ ঘটলে 
তিনি সঙ্গে সঙ্গে পু্িশে সংবাদ দেবেন। এজন্য তাকে আমাদের মধ্যে 
না টেনে আনাই ভাল। 

ঈবিতা । লোকনাথ বাঁধু ঠিক কথাই বলেছেন বাবা 

প্রঃ তরফগার। (পদচারণা করিতে করিতে ) হ্যা লোকনাথ তুমি ঠিকই 


€ঞ 


প্রথম দৃশ্ত অদাতিবিজাজিক 


বলেছো। কিদ্ধ স্থবিমলকে আমার চাই । তোমাদের মে ভালভাবে 
চেনে বলে তাকে আরও বেশী করে চাই। আমি বোলব--আমার 
সমস্ত কথা তাকে বোলব; শেষে সে যর্দি আমার দলে নাও ধোগ দেয়: 
তবুও তোমাদের কথা গোপন রাখবে। আমি তাকে গোপন বাখতে, 
অন্থরোধ করবো । স্ুুবিমললধ আমার মতবাদে অবিশ্বানী হলেও আমাকে: 
শ্রদ্ধা করে। 

লোকনাথ । আপনার মতবাদে ধার আস্থা নেই ভার চোখে আমাদের কাধ্য- 
কলাপ অন্ঠায়রূপেই প্রতিফলিত হবে এবং তিনি আপনাকে শ্রদ্ধা করলে ও' 
হয়তো এ অন্যায়কে সমর্থন করতে অস্বীকার করবেন। 

প্রঃ তরফদার । (বিকৃত হান্তের সহিত ) যেদিন সে অস্বীকার করবে সেদিন, 
হ্যায় অন্যায়ের জগৎ থেকে সে বহুদুরে সরে যাবে । 

লোকনাথ । আপনি বঙ্পতে চান, প্রয়োজন হলে আপনি ডাক্তার শ্ববিমলকে-- 

প্রঃ তরফদার (লোকনাথের জামার অগ্রভাগ আকর্ষণ করিয়া) হ্যা, 
হ্যা, প্রয়োজন বোধে আমি হত্যা করতেও কুঠিত হবো না। 

সবিতা । ( আতঙ্কগ্রন্ত-ভাবে ) বাবা ! 

প্রঃ তরফদার । যেস্থট্টি করবার শক্তি অঞ্জন করবে ধ্বংস করবার অধিকার' 
তারই থাকবে সবিতা। তুমি তোমার ব্যবহারকে সংযত কর। 

(সবিতা ও লোকনাথ মাথ! হেট করিল ) 
সবিতা । ( লঙ্জিত ভাবে ) আমায় আপনি ক্ষমা করবেন বাবা । 
(প্রঃ তরফদার পদচারণা! করিতে করিতে বলিতে লাগিলেন ) 

প্রঃ তরফদার । তোমর] হয়তো! ভাবছে! এতথানি অন্যায়ের ভিত্তির ওপক' 
আমার সে মহৎ সাধনা কেমন করে সফল হবে । এরপ চিস্তা তোমাদের 
পক্ষে অস্বাভাবিক নয়। তোমাদের চাইতে আমার স্তায়-অন্তায়' বোধ 
আরও ছক্ম--আমিও মাঝে মাঝে ঠিক তোমাদের মতই চিস্তা করি) 


৪৩ 


আযদারকজা লিক [দ্বিতীয় জঞ্ত 


কিন্ত আমার উপায় নেই। জগতের শতকরা নিঝাছুব্বইটি মাছব কোন 
না কোন প্রকার অন্যায়ে আঙ্গ লিধ। তাদের মধ্যে দিয়ে সহজ সরল পথ 
ধরে চলতে গেলে আমায় পঙ্গু হয়ে বসে থাকতে হবে। আমার কাজ 
কোনদিনই সফল হবে না। আমার ব্যক্তিত্ব, আমার সাধনায় সকলেরই 
শ্রদ্ধা আছে, আমি যা চাই” প্রতিটি মানুষও তাই চায় তবু আমার 
মতবাদকে তারা উপহাস করে। মানুষ কোটি কোটি টাকা জলের মত 
অপব্যয় করে চলেছে--করাল যুদ্ধের নেশায় লক্ষ লক্ষ নগরী ধুপ্গিসাৎ 
করে দিচ্ছে অথচ সমগ্র মানুষের মঙ্গল সাধনায় ষে ব্রতী তাকে এক 
কপর্দাক দিয়েও সাহাধ্য করতে চায় না। সাহাধা করবার আগেই তারা 
অগ্র-পশ্চাৎ ভেবে জঙ্রিত হয়ে পড়ে--অর্থের মুলা অসম্ভব রকম বেড়ে 
যায়। তাই আমিও সেই একটি বিন্ুর ওপর লক্ষ্য রেখে ন্যাক্ব-অন্যায়ের 
সীমারেখা মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। সবিত।! তুমি জান্মাণ 
প্রফেদারের কাছে কিছুদিন 761০5 পড়েছিলে-_-তুমি ভাল করেই 
জান আমি চাই সেই 3526956 8০০৫ 01 00০ £620636 21210)61, 

সবিতা । আমার মনে হয় তার একটা বিশেষ কারণ আছে বাবা । আপনার 
যে মঙ্গল ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে আছে সাধারণ মানুষ তাকে আপাত- 
চক্ষে দেখতে পায় না বলেই আপনাকে সাহাধা করতে এগিয়ে আসে 
না। কোন বস্ত তৈরী হবার আশায় এরা অগ্রিম মুল্য দিয়ে বসে 
থাকতে চায় না। সেই বস্তটিকে তাদের ঘরে নিজের হাতে পৌঁছে 
দিলে তার! তাকে ধাচাই করে মূল্য দেয়। 

প্রঃ তরফদাক্স। তুমি সত্য বলেছ সবিতা। কিন্তু সাধারণ মাষের 
বর্তমান বাবহার আমার কোন কান্ধে লাগবে না কারণ আমার সাধনা 
তাদের এই খ্যব্থারের আমূল “পরিবর্তন । তাদের সম্মিলিত গ্রতিবান্ের 
বিরুদ্ধে আমার প্রয়োজন অর্থের, আযার প্রয়োজন প্রতিডার। (এই 


88 


প্রথম দৃশ্ত ] অজজেটঘিজ্টাজিক 


সয় পার্খের কোন বক্ষে ঢং করিয়া অর্থ-ঘটিকা সমাপ্তির সঞ্ষেত ঘোষণা 
শোলা গেল। প্রঃ তরফদার আপনার কজি-ঘড়ির প্রতি চাহিয়া ) ওঃ, 
তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে আমার অনেক সময় নষ্ঁ হয়ে গেলো! 
অলঙ্কারগুলে! এখনে! আমার ভাল করে দেখাই হয় নি। 
(তিনি পুনরায় আসিয়া! আসন গ্রহণ করিলেন ও একটি একটি করিয়া অলঙ্কার 
উঠাইয়৷ দেখিতে লাগিলেন। সবিতা ও লোকনাথ টেবিলের সম্মুখে আসিয়! 
দেখিতেছিল-_-সহস সবিতা একখানি হার তুলিয়া! লইল। ) 
সবিতা । এ হারখানি দেখে আমার বড্ড হাপি পাচ্ছে বাবা। (প্রঃ 
তরফদার সবিতার মুখের দিকে চাহিলেন, তিনি দেখিলেন সবিতার চোখ 
ছুটি হারের ওপর নিবন্ধ হইয়া তন্ময় হইয়া গিয়াছে । ) শিল্পী হয়তে। 
এক নববধূর সলজ্জ ককে ধ্যান করে তৈরী করেছিলেন এই হার, আজ 
তার সে ধ্যানের কোন সুল্যই নেই আমাদের কাছে। কয়েকটি ছোট্ট 
পাথরের কুচি ও একথণড ধাতুর চেয়ে এর কোন মুল্যই জাজ আমরা 
দিতে পারবো না। (সে ধীরে ধীরে হারখানি টেবিলের ওপর রাখিল। 
প্রঃ তরফদার কিছুই বলিলেন না। তিনি সমত্ত অলঙ্কার একে একে, 
বাক্সের মধ রাখিয়া শুধু সবিতাঁ যে হারধানি লইয়াছিল তাহা! নিজের 
হাতে রাখিলেন। ) 
প্রঃ তরফদার । লোকনাথ! এই বাক্সটা আমার শোবার ঘরের আলমারীতে 
রেখে দা৪। আমি কালই এগুলো! নিয়ে বোম্বে যেতে চাই। (তিনি, 
বাক্সটি লোকনাথের হাতে দিলেন । ) 
লোকনাথ। (প্রঃ তরফগারের হাতের হারধানি দেখাইয়া) ও হারখানি ? 
প্রঃ তরফন্ধার। এটা থাক, তুমি ওগুলে! নিয়ে ধাও। আর শোন, আমার: 
প্রয়োজনীয় এপারেটাস্গুলোর জন্ত আজই জামেরিকায় চিঠি লিখে দাও। 
আমার সময় বড় অল্প। ( গহণার বাঝ লইয়া লোকনাথের প্রস্থান) 


৪৫ 


ফলোবৈজ্ঞামিক [হ্বিতীয অঙ্ক 


( প্রফেসার তরফদার হারথানি লইয়া সবিতার সম্মুখে দাড়াইলেন ) 
প্রঃ তরফদার। সবিতা! তোমার ছুর্বলতার শান্তিম্ববূপ এই হারখানি 
আমি তোমায় উপহার দিতে চাই। অন্তপ্দিক দিয়ে তুমি এটাকে তোমার 
অসমসাহসিক কাজের পুরস্কাররূপেও গ্রহণ করতে পারো । 
সবিতা । আমার দুর্বলতাকে কি এবারের মত ক্ষম1 কর] যায় না বাবা? 
প্রঃ তরফদার । তোমার মধ্যে এ দুর্বলতা আমি আশ! করিনি সবিতা, 
তোমায় আমি শিশুকীল থেকে আমার আদর্শে শিক্ষা! দিয়েছি। তুমি 
বাংলার মেয়ে হতে পার কিন্তু জগতের বছুদেশে নিয়ে গিয়ে তোমায় 
আমি সম্পূর্ণভাবে শিক্ষিতা করে তুলেছি। সামান্তা রমণীর দুর্বলতা 
আমি তোমার মধ্যে আশা কৰিনি। 
(সবিতা জানু পাতিয়া প্রঃ তরফদারেব সম্মুখে বসিয়া পড়িল) 
এসবিতা। শুধু এবারের মত আমায় মাপ করুন বাবা । 
(প্রফেসার তরফদার সবিতাব মাথায় হাত রাখিলেন। তিনি এক দৃষ্টিতে 
সবিতার দিকে চাহিয়াছিলেন, মুহুর্তের জন্ত তাহার চোখের পাতায় একটা 
বিষ উদাসীনত। নামিয়া আসিল )। 
প্রঃ তরফদার । সবিতা] ওঠো১ এহার তোমাকে নিতেই হবে। সমস্ত 
দুর্বলতা ক্ষমা]! করেই এ হার আমি তোমায় দিচ্ছি। 
সবিতা । ( উঠিয়া দাড়াইল, অশ্রভারাক্রাস্ত কে) না বাবা, ও হার আমি 
নিতে পারবে! ন1। 
প্রঃ তরফদার । আমায় তুমি বিশ্বান কর সবিতা। এ হারের মূল্য থেকে 
আমি আমার সাধনাকে বঞ্চিত করেছি--কেন করেছি জান? তুমিও 
আমার সেই সাধনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ হার তোমার গল্গায় 
থাকলে কোনদিন কোন দুর্ধলতাই তোমার মধ্যে প্রশ্রয় পাবে না। 
4 তিনি হারখানি সবিতার গলায় পরাইয়! দিলেন। সবিতা ছুঃখে ও 


৪৬ 


গধেন দৃষ্ত | অযনাইবজাছিক 


জন্জায় তাহার পিতার বুকে মুখ লুকাইল, তিনি তাহার মাথায় হাত দিয়া 
আদর করিতে লাগিলেন ) তুমি ছুঃখ করো! না সবিতা । ব্যবহারে ভূল 
সকলেরই হয়-_কিস্ত সঙ্গে সঙ্গে সে ভুলকে সংশোধন করাও প্রয়োজন। 
( তিনি ধারে ধীরে সবিতাকে দুরে সরাইয় ডাকিলেন ) সবিতা ! 

সবিতা বাবা! 

প্রঃ তরফদার। আমি তোমার তুল সংশোধন করে দেওয়ায় তুমি দুঃখিত 
হয়েছ? 

সবিতা। না বাবা, আপনি আমায় ক্ষমা! করুন। 

প্রঃ তরফদার । (আপন মনে ) এজন্য তোমায় অবশ্ঠ বিশেষ দোষ দেওয়া 
চলে না। তোমার ব্যবহারে মাঝে মাঝে এমন ভূল হওয়া শ্বাভাবিক। 
আমার ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তুমি নারী। আমার মনে পড়ছে 
লোকনাথের মাকে ঠিক এইজন্যই একদিন বলেছিলাম-- 

সবিতা । ( বিশ্মিতভাবে ) লোকনাথ বাবুর মা! তিনি কে বাবা? 
তার পিতামাত1 সম্বন্ধে তো আপনি কোন দিনই কিছু বলেন নি। 

প্রং তরফদার । (সবিতার কথায় তিনি সহসা চমকাইয়া উঠিলেন--_ 
পরক্ষণেই অপরাধী ধরা পড়িয়া! গেলে তাহা গোপন করিবার জন্য যেরূপ 
যুদ্ধ করে সেইরূপ একটা কঠিন প্রয়াল তাহার মুখে ফুটিয়। উঠিল। তিনি 
মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির হইয়! ছুইহাতে মস্তক চাপিয়া ধরিলেন ও তাহার 
কঠ হইতে একট] অব্যক্ত আর্তনার্দের অস্ফুট শব্ধ বাহির হইল ।) ওঃ! আঃ! 

সবিতা । (কাছে আসিয়া ) আপনি হঠাৎ এমন কচ্চেন কেন বাবা? আমি 
তো। আপনাকে কিছু বলিনি। 

প্রঃ তরফদার। সবিতা! সবিত1| তুমি আমায় ছুর্ধল কবে তুলেছো। 
আমি ভূল বলেছি, শোৌকনাথের ম! নয় তোমার মা--্যা হ্যা তোমার 
মা আমার কাছে একবার একজোড়া ব্রেসলেট চেয়েছিলেন--জামি তাকে- 


৪৭ 


মনো বৈ নিক [খিতীর গ্ষা 
সেজন্য অপমান করেছিলাম । দুর্বলত] ক্রমেই আমা আচ্ছন্ন করে 
তুলছে-্হয়তে! আরও কিছু ভূল বকে বলবো । আমি যাই, আমার 
লেব রটাগিতে বাই, তুমি এ নিয়ে চিন্তা করো না। 0০০৫ 21516 
[) 810. ফ্রেত পদক্ষেপে তিনি বাহির হুইয়! গেলেন। সবিতা অতি 
মাত্রায় বিস্মিত হইয়া তীহার গমনপথের দিকে চাহিয়। বহিল। মে 
তরফদারের পেছনে ছুটিয়া একবার কি বলিতে গেল আবার কি ভাবিয়। 
জানালার পাশে আসিয়া দাড়াইল। জানালা দিয়া চাদের কিরণ প্রবেশ 
করিয়া টেবিলের ওপর লুটাইয়। পাড়তেছে কিন্তু বৈচ্যুতিক আলোকে দেখা 
াইতেছে না। সবিতা আলে! নিভাইয়৷ দ্রিল। উদাসভাবে বাহিরের 


দিকে চাহিয়া গান ধরিল। ) 
রবীজ্ সঙ্গীত 


ও টাদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার ছুখের পারাবারে, 
হল কানায় কানায় কানাকানি এই পারে এ পারে। 
আমার তরী ছিল চেনার কূলে, বাধন তাহার গেল খুলে, 
তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেল কোন অচেনার ধারে ॥ 
পথিক সবাই পেরিয়ে গেল খাটের কিনারাতে, 
আমি সে কোন আকুল আলোয় দিশাহারা রাতে । 
সেই পথ হারাপৌর অর্ধীর টানে অকুলে পথ আপনি টানে 
দিক ভোলাবার পাগল আমার হাসে অন্ধকারে ॥ 
( সবিত। গান গাহিতেছে, এমন সময় লোকনাথ প্রবেশ করিল । সবিত! জানিতে 
পারিল না। লোকনাথ নিঃশব্দে আরাম কেদ্ারাম্ম বসিল। সধধিতা গান শেষ 
করিয়। চোখ মুখ ভাল করিয়া মুছিল তারগর আলো! জালিতেই লোকনাখকে 
দেখিতে পাইল । ) 
সবিতা । কে লোকনাথ বাবু ! 


৪৮ 


প্রথম ভু 1 ধলা টধজাজিহা 


লোকনাধ । হ্যা, আমি । আপনাকে একটা কথা জিজ্ামা করতে এসে- 
ছিলাম। আপনি গান গাইছেন দেখে আর বিরক্ত করিনি । আপনার 
গান আমি কোনদিন শুনিনি, সতাই আপনি বেশ ভাল গাইতে পাষেন। 
সবিতা । আপনি কি কথা জানতে এসেছিলেন ? 
( লোকনাথ সবিতার দিকে চাহিল ) 
লোকনাথ । প্রঃ তবফদার গয়নার বাক থেকে একটা হার নিজের হাতে 
রেখেছিলেন ; এখন দেখছি সে হার আপনার গলায় শোভা পাচ্ছে। 
এ হারখানিয় কথাই আমি জানতে এলেছিলাম। 
সবিতা । আপনার কৌতৃহল আমার উত্তরের অপেক্ষা রাখেনি দেখছি। 
লোকদাথ। জংপক্ষা রেখেছে বৈকি । আমি এখনো বুঝে উঠতে পাবিনি 
প্রঃ তরফদার আপনাকে ও হার উপহার, দিলেন কেন ? 
সবিতা । আপনি তুজ বুঝবেন না । এ হার বাবা আমাকে উপহার দেন দি। এ 
হারটির সন্বদ্ধে ভাব প্রকাশ করায় বাধা ধবে ফেলেছেন আমার ব্যবহাৰে 
দুর্বলতা ; যাতে ভবিষ্যতে এমন হূর্বলতা ন৷ দেখা দেয় সে থা স্মরণ করিয়ে 
দেবার জন্ত শান্তিম্বরপ এট! জোর করে আমায় গলায় পরিয়ে দিয়েছেন। 
[লাকনাথ। দুর্বলতার শান্তি কিংবা শক্তির পুরস্কার যাই হোক না কেন 
সবিতা দেবী, ও হার আপনার কঠকে কগস্কিত করেছে। 
|বিতা। ( তির্ধ্যক দৃ্টিতে লোকনাখের দিকে চাহিয়া) আপনি বলতে চান--. 
এ হারথানির উদ্দেন্ত আমি ব্যর্থ করে দিয়েছি ? 
লাকনাথ। আপনি কি ত! নিজেও স্বীকার করেন না? 
বিভা । কিন্ত আপনি ভূলে যাচ্ছেনস্্বাবার আদেশ আমি অমান্ত করতে 
পারি ন|। 
গাকনাথ। যদি আপনার কোনদিন মনে হয়--আপনার বাবার আদেশ ভূল, 
সেদিনও কি তাকে মেনে চলতে আপনি সক্ষম হবেন? 
৪ ৪6৪8 


অমোইহজ্যানদিক [ ছিতীয় খু 


সবিতা । আমার বাবা ভুল করতে পারেন না। 

লোকনাথ । (হাসিল) আপনার কথা শুনে হৃখী হলাম। আপনি শ্রাস্ত, 
আর বিরক্ত করবো না, চল্লাম । (সে দরজার দিকে অগ্রসর হইল। ) 

সবিতা । লোকনাথবাবু! শুহন। ( লোকনাথ ফিরিয়া দাড়াইল ) নিজের 
মাকে আপনার মনে পড়ে? 

লোকনাথ । (বিব্রতভাবে ) করেন বলুন তে]? হঠাৎ একথা জিজ্ঞাসা 
কচ্ছেন? 

সবিতা । (হাসিবার ভান করিয়! ) বলুন না মনে পড়ে কি না? এটাও 
অহেতুক কৌতুহল। 

লোকনাথ । মাকে মনে পড়বার তে। আমার কোন কারণ নেই । আপনার 
বাবার কাছে শুনেছি আমার ভূমিষ্ট হওয়ার কদিন পরেই মা-বাবার ট্রেন- 
ুর্ঘটনায় মৃত্যু সংবাদ শুনে--শোকে প্রাণত্যাগ করেন। তারপর তো 
আপনি জানেন বাবার বন্ধু হিসেবে প্রঃ তরফদার আমায় লেখাপড়। 
শিখিয়ে মানুষ করে তোলেন । 

সবিতা । আপনার মায়ের কোন ছবিও আপনার কাছে নেই? 

লৌকনাথ । না, থাকলে আপনার বাব! নিশ্চয়ই সেটা! আমায় দিতেন। কিন্ত 
আমায় বলুন, আজকের দিনেই আপনার মধ্যে এ কৌতুহল জাগলো! কেন? 

সবিতা । আপনি বিশ্বাস--করুন সম্পূর্ণ অহ্তুকভাবে। কৌতুহল তে! 
দিনক্ষণের ধার ধারে না। আপনার মধ্যেও যেমন এই একটু আগে 
বাবার আদেশ তুল হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল--আপনার মায়ের 
বিষয়েও আমার আগ্রহ কতকটা তেমনি । এগুলো আমাদের ব্যবহারের 
বিকার। 

লোকনাথ। আপনার বাবার আদেশ ভূল হওয়ার সম্ভাবনা! আমার মনে 
জাগেনি এবং সে কথ! ধদি আমি বলে থাকি তবে সে কেবল বথাগ্রসঙ্গে 


জে 


প্রথয খত? অজোটবজা জিকা 
আপিনাকে যাচাই করবার জন্ত। তাছাড়। চুরি করা হার গলায় পরে 
বেড়ানোটা মোটেই নিরাপদ নয়। 

সবিতা । সে বিষয়ে আমি সাবধান হবো, যাই হোক, পরিশ্রাস্ত মস্তিষ্কে এসব 
বিষয়ে আলোচনা না করাই ভাল। তার চেয়ে চলুন রাব্রিভোজনের 
ব্যবস্থা করিগে। (সে লোকনাথকে আর কিছু বলিবার অবসর না দিয়া 
ঘুপদে আগাইয়া গেল-লোকনাথও তেমনি খানিকটা বিভ্রান্ততাবে 
তাহার অনুসরণ করিল--সঙ্গে সঙ্গে পর্দাও নামিয়৷ আসিল ) 


দ্বিতীয় দৃশ্য 


€ প্রফেসার তরফদারের ডইং কম। কক্ষটার সাজসজ্জ। সাধারণ সৌখিনরুচি- 
সম্পন্ন ধনী ব্যক্তির ফ্বইং রুমেরই অন্থরূপ। প্রঃ তরফদার কি প্রকৃতির মান্য 
তাহার কোন চিহুই এখানে নেই । বৈচিত্র্যের মধ্যে তিন দিকের দেওয়ালের 
অনেকখানি স্থান জুড়িয়৷ তিনটি বড় মূল্যবান আর্শা পরস্পরের প্রতি প্রতিফলিত 
করিয়া আটা ও ঘরের সম্মুখের ই কোণে একটি বাড়ীর ভিতরে যাইবার ও 
অন্যটি বাহির হইতে ড্রইং রূমে আসিবার ছুইটি চতুম্কপাটযুক্ত ঘূর্ণায়মান দরজা | . 
সমস্ত কক্ষটি কার্পেট-মণ্ডিত। মধ্যস্থলে গোলাকার বড় টেবিল, সুদৃশ্য গদি আটা 
চেয়ার ও সোফা ছাড়া ছুই দিকের দরজার বিপরীত কোণে ছুই আর্শীর সম্মুখে 
এক দিকে একটি সেটি সংলগ্ন মূল্যবান পিয়ানে! ও অন্ত দিকে একটি বড় হ-ল 
ব্লক আছে। ) 

(সময় সকাল নয়টা । জ্ইং কমে কেবল সবিতা! এক! বসিয়া পিয়ানোতে একটা 
গৎ বাজাইতেছিল। তাহার পরণে ফিক! নীল রঙের শাড়ী ও তেমনি ব্লাউজ । 


€১ 


ধতজাটবঢানিক, [ ছিতীয় অঞ্চ 
তাহার সিক্ত আলুলাযিত কেশ পিঠের ওপর লুটাইতেছিল। সবিডা থে দিকে 
বসিয়াছিল তাহার বিপরীত দিকের দ্বার দিয়া ডাঃ স্ুবিমল রাসচৌধুরি প্রবেশ 
করিলেন এবং সম্মথে আর্শাতে প্রতিফলিত সবিতার মুখখানি চিনিতে পারিয়া 
একই স্থানে একই অবস্থায় থমকিয়! দাড়াইলেন। মুহূর্তপরে সবিতা আয়নায় 
ডাক্তারের মূর্তি দেখিয়া একট! ভয়ানক উত্তেজনায় ফিরিয়া দাড়াইল। তাহার 
নখ ফ্যাকাশে হইয়া! গিয়াছে । ছুইজনে চোখাচোখি হইল এবং কয়েক সেকেণ্ড 
কেহই চোখ সরাইয়৷ লইতে পারিল না ।) 


ভাঃ স্থবিমল। ( বিন্ময় সংবরণ করিয়া হাসিবার ভান করিলেন ) নমস্কার [| এমন, 
অপ্রত্যাশিত ভাবে আপনার সাক্ষাৎ মিলবে--এ আমি মোটেই আশ! 
করিনি মিস সরকার। আপনি নিশ্চয়ই অত্যন্ত বিত্রত বোধ কচ্ছেন? 

নবিতা । (প্রস্তরমৃত্তির মত স্থির হইয়া) নমস্কার! বিক্রত বোধ করার 
কিছু নেই। আপনি বন্থন ডাঃ রাঁয়চৌধুরি। 

ভাঃ স্থবিমল । আমি বিস্মিত হয়ে উঠছি এই ভেবে যে বিখ্যাত অলঙ্কার 
ধিক্রেতা অরবিন্দ সরকারের কন্ত! মিস্‌ সরকারের এ বাড়ীতে উপস্থিতির 
কারণ কি? (ম্ববে বিজ্রপ ফুটিয়া উঠিল । ) 

সধিতা। আপনার বিশ্ময় এখুনি কেটে যাবে। বর্তমানে আপনি এসেছেন 
গ্রফেসার তরফদারের সঙ্গে দেখ! করতে-_ছুঃখের বিষয় তিনি অন্ুপস্থিত। 

ভাঃ স্ববিমল। আপনি কেমন করে জানলেন আমি প্রঃ তরফদারের সঙ্গে 
দেখা করতে এসেছি? আমি আপনার সন্ধান পেয়ে এখানে ছুটে আসিনি, 
সে বিষয়ে আপনি কেমন করে নিঃসন্দেহ হলেন ? 

সবিতা । আমার সন্ধান আপনি পেয়েছেন--কিস্ত সে আগে নয়, এই মাত্র । 

ভাঃস্কুবিমল | আমার এখানে আমার সম্ভাবনা! আছে জেনেও আপনি 
সআত্মগোপনের চে! করেন নি? 


৫২, 


(ছিতীয় তি: আনেদীদহচারনির 


সবিতাঞ্জ 'কোন প্রয়োজন তোধ করিনি । 

ভাঃ ভ্বিছবল। প্রতাব্ণ! ও চুরির অভিযোগে আপনি থে কোদ মূকুর্তেই ধরা 
পড়তে পারেন---সে সম্ভাবনা! কি জাপনার মনে একবারও জাগে নি? 

সবিতা। জেগেছে। কিন্তু সেজন্য আমি মোটেই ভ্ভীত নই। আপনি 
অনায়াসে পুলিশকে আমার সন্ধান দিভে পারেন । 

ভাঃ স্থধিমল। পুলিশ আপনার সন্ধান পাবার আগে আমি কি এই চুত্রিতব 
উদ্দেশ্য জানতে পানি? 

সবিতা । আমার পিতা যে গবেষণায় আত্মবলি দিয়েছেন তাতে প্রচুর অর্থের 
প্রয়োজন। পিতার আদেশে আমি এই চুরি করেছি। 

ডাঃ স্থবিমল। ( বিশ্মিতভাবে ) আপনার পিতা ? 

সবিতা। প্রফেসার তরফদার । 

ভাঃ স্ববিমল। প্রফেসার তরফদার আপনার পিতা! (তিনি ছিশ্ময়ের 
আভিশযো উঠিয়া ফ্লাড়াইলেন ) আশ্চর্য্য! তার কোন বস্তা আছেন 
বলে আমার জান! ছিল না। এতক্ষণে আমি বুঝতে পাচ্ছি এই অদ্ভুত 
চুরির মুলে ছিল একমাত্র প্রফেসার তরফদারের পরিকল্পনা এবং সেই- 
জন্তই নির্দি্ দিনটিতে তিনি আমার ওখানে প্রথম পদার্পণ কয়েন । 
একটা কথা বুঝতে পারছি না, সমস্ত ব্যাপারে নিজে জড়িত থেকেও তিনি 
আমায় নেমস্তপ্ন করে এলেন কোন্‌ অভিপ্রায়ে? 

সবিতা। অভিপ্রায় নিশ্চয়ই একটা আছে এবং বাবার সঙ্গে দেখা হবে তা! 
জানতে পারতেন । আজ আপনি আমাদের অতিথি-্আপনার জজুমতি 
পেলে একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে পারি, অবপ্ত আমার হাতে চা পান 
কদি আপনি নীতি-বিরুদ্ধ দা! মনে কবেন। 

গাঃ স্থবিম্ল। (চোখ তুলিস্বা লবিতার দিক্ষে চাহিঙ্গেন ও ভোখাচোখি 
হইতেই পুনরায় চোখ নত করিগেদ ) চচাব্ষে হাতে চা পাদ করার 


৩ 


অনোঠখজ্ঞাজিক [দ্বিতীয় অঙ্ক 
চাইতে আমি চোরকে প্রশ্রয় দেওয়াই বেশী নীতি-বিরুদ্ধ মনে করি । 
চায়ের পরিবর্তে আপনাকে কয়েকটা কথা বলা আমার একাস্ত আবশ্থক | 

সবিতা। কথা বলার স্থযোগ আপনাকে দেবো-তার আগে আমায় কর্তব্য 
পালন করতে দ্িন। আমি চা নিয়ে আসি। ( সবিতার প্রস্থান ) 
( ডাক্তার স্ুবিমল ক্ষণকাল ইতস্ততঃ চাহিলেন। লোকনাথ প্রবেশ করিল ) 

লোকনাথ । (ঘরে প্রবেশ করিতে গিয়া ডাক্তারকে দেখিয় প্রথমে শুদ্ধ 
হইয়] দাড়াইল কিন্তু তক্ষুনি সে ভাবটা কাটিয়া গেল। তাহার পরণে 
সাদা স্থই।) স্থপ্রভাত! ডাঃ রায়চৌধুরি। 

ডাঃ স্বিমল। (সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে ) স্বগ্রভাত! তারপর--লোকনাথকেও 
এখানে দেখছি ? 

লোকনাথ। লোকনাথকে এখানে দেখা খুবই স্বাভাবিক কারণ এ বাড়ীর 
মালিক লোকনাথের আশ্রয়দাতা এবং লোকনাথ তাঁর একজন সহকারী । 

ভাঃ স্বিমল। চমৎকার! কিন্ত ষে ভদ্রলোক তোযার,পিতা--এই পরিচস্ষে 
আমার কাছে তোমায় চিকিৎসার জন্য রেখে এসেছিলেন--তিনি কে 
জানতে পারি? 

লোকনাথ । ও:, তিনি আমাদের লেবরটারীর একজন কর্মচারী । মাঝে 
মাঝে সথের থিয়েটারে ভাল অভিনয় করে থাকেন । 

ডাঃ স্থবিমল। হু" চুরিটা তা”হলে বেশ সপরিকল্লিত। 

লোকনাথ । (কৃত্রিম বিশ্ময়ের সঙ্গে ) চুরি! ও, আপনি গয়না চুরির কথা 
বলছেন? অত টাকার গয়না চুরির পেছনে একটা স্থপরিকল্পনা থাকা 
স্বাভাবিক। 

ডাঃ ্ববিমল। এবং এই চুরি ও প্রতারণার ব্যাপারে ধারা জড়িত তাদের 
সকলের মধ্যে তোষাকেই আমার বাহবা] দিতে ইচ্ছা করে। 

লোকনাথ । সেজন্ধ আপনাকে ধন্যবাদ । 


৫৪ 


খিতীয় দু ] আানেটিবরাাজিক 


ডাঙহ্বিমল। ছুঃখের বিষয় আজ তৃমি ধরা পড়ে গেলে। আমার এমন 
আকৃম্মিক উপস্থিতিটা নিশ্চয়ই তুমি কামনা করনি । 

লোকনাথ। আমরা স্বেচ্ছায় আপনাকে ধর! দিয়েছি। একদিন আপনার 
এ বাড়ীতে উপস্থিতি আমাদের কাছে নিশ্চিত ছিল। 

ডাঃ স্থবিমল। এভাবে তোমাদের স্বেচ্ছায় ধরা দেবার অর্থ কি? 

লোকনাথ । আপনার কাছে আমাদের ধর! দেওয়াটা আর কিছু নয়--. 
আপনাকে ধরবার একটা ফাদ মাত্র। 

ডাঃ স্থবিমল। (তিনি বসিয়াছিলেন, উত্তেজনায় উঠিয়! ঈাড়াইলেন ) আমাকে 
ধরবার ফাদ! 

লোকনাথ । আপনাকে আমাদের দলভুক্ত করা । ভয় পাবেন না। আপনি 
বস্ছন। প্রথমেই আপনার ওপর কেও ব্লপ্রয়োগ করবে না। 

ডাঃ স্থবিমল। বলগ্রয়োগ কর! তোমাদের পক্ষে কঠিন নয়--সে আমি জানি। 
রণেন ও অমলের প্রতিই সে পরিচয় তুমি দিয়ে এসেছো । আমাকে 
বথেই ভয় দেখালেও দলভুক্ত কর! তোমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। 
তোমাদের মতবাদ সমস্তটাই ভুলে ভরা। তবুও আমি প্রেসার 
তরফদ্বারকে শ্রদ্ধা করতাম এবং সেইজন্ত এ পথ থেকে আমি তাকে নিবৃত্ত 
করবার চেষ্টা করবো। 

লোকনাথ। সে বোঝাপড়া আপনি প্রফেসার তর়ফদারের সঙ্গে করবেন। 
আজ তার সঙ্গে আপনার দেখা হবে না। 

(ডাক্তারকে আর কিছু বলিবার অবসর ন৷ দিয়! সে দ্বার অভিমুখে অগ্রসর হইল-- 
সেই দ্বার দিয়। বেয়ারার সঙ্গে চায়ের ট্রে লইয়া! সবিতাও প্রবেশ করিল ।) 
ভাঃস্থবিমল। লোকনাথ! একটু অপেক্ষা কর। (লোকনাথ দীড়াইল। 
সবিতা চা প্রচ্থতে মন দিল। ) লোকনাথ! আমি তোমায় অন্থরোধ 
কচ্ছি, এ তৃল পথে তুমি প্রফেসার তরফদারকে সাহাব্য করো না। 


অরহাযেহা ক [ ছিতীর বাক 


তোমাম্ব বয়স অন্প-্জগৎ তোমায় কাছ থেকে এর চেম্ে অনেক বড় কা 
আশা করে। 

লোকনাখ। (ছনঢ়ভাষে ) ভাঃ ক্ার়চৌধুরি! আপনাকে এভাবে কথা ৰ্লযার 
সুযোগ আমরা ভবিস্ততে ফ্বেবো না। ( সে ঝড়ের বেগে বাহিয়ে গেল। ) 

সবিতা। আত্মুন ডাঃ রা়চৌধুি | 

ভাঃ ভুবিষল। ( চিন্তিত মুখে আসন শ্রহণ করিয়! ) আপনাকেও আমি যাবার 
আগে কয়েকটা কথা বলতে চাই মিস্‌ সরকাত্র । আশা করি লোকনাথের 
মত অবুৰ হয়ে নিজেদের সর্বনাশ ঘটাবেন না। 

সবিতা । (চায়ের পেয়ালা ডাক্তারের দিকে আগাইয়া দিল ও বেয়ান্বাকে 
যাইতে ইঙ্গিত করিল ) আপনার কথা শুনতে বাজী আছি কিন্তু সমস্ত 
জেনেও আপনি আমায় ঘিস্‌ সরকার বলে সম্বোধন করবেন না। আমার 
নাম সবিড11 

ভাঃ স্থবিমল। আপনাদ্া হয়তো ভাষছেন আপনাদের সন্ধান পেয়ে 
আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। আননাই বোধ করেছিলাম কিন্তু ধখনই 
শুনলাম বিখ্যাত প্রফেসর তক্ষফদায় এই প্রতারণা ও চুরির মধো জড়িত 
তখন সত্যই মনে বড় আঘাত পেলাম । আমি স্বপ্েগ্ড ভাবতে পারিনি 
তার মত পণ্ডিত ব্যক্তি একটা শ্রমাত্মক মতবাদের অন্ত এমন জথন্ততম 


উপায় অবলম্বন কদ্যেন। 
সবিতা । আমার পিতার মতবাদকে ভূল বলবার আপনান্ধ কোন অধিকার 


নেই। বহছ্ধি হত উপায়েন্ব কথা হলেন তবে বোনব সনির মঙ্গলের জগ্য 
একজন ব্যক্ষিত আংশিক ক্ষতি কিছু নয়। 

ভাঃ ক্থবিমল। আপনার পিতার মত্বাদফে ভুল বলবার অধিকাছ জার 
ছে, কেননা যুদ্ধি দিবে আহি তাকে ভূল প্রমাথ ফ়তে গনিত সে 
যদাবাদের স্বাতা! সহি কে একজন হাছযোও মধ সাধিত ছবে গা 


৮১১ 


বিভীয় ভূত হাক হা্টিক 


সন্্িতা। কোন একটা বিশেষ লাধনার শেধ পরিণতির পৃর্ধ্বেই স্ুক্তি ও তর্ক 
দিয়ে নিশ্চয় আপনি অস্করেই ভার বিনাশ ঘটাতে চান লা। 

ভাঃ সবি | তা আমি চাই না লত্য। কিন্তু বেখানে শুধু ভ্রাস্ত ধারণা 
দিয়েই একট! অন্তুত বিক্কৃভ মতবাদ গড়ে তোলা হয়, ধে হতবাদের পেছনে 
একটা প্রবল জিদ ছাড়া কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি থাকে না এবং লে 
মতবাদ ধদি সমাজের মঙ্গলের অজুহাতে লোকের সর্ধনাশ ঘটায় তবে 
তাকে অস্কুবে বিনাশ করা আমি উচিত মনে কন্দি। আজ আপনার 
পিতা তাৰ ভ্রান্ত ধারপার জদগ্ চি ও প্রতারণার আশ্রপ্ন নিয়েছেন, বাধা 
না পেলে ভবিষ্ততে তিনি আরও বৃহৎ অন্যায় করে বসবেন। শেষে 
এমন দিন আসবে যেদিন সমাজের চোখে তিনি একজন ছুর্দাস্ত দ্যা বলে 
পরিচিত হবেন । সবিতা দেবী! আপনি প্রফেসার তরফনাবের কনা । 
শাপনি এমন করে নিজের শিক্ষা ও বুদ্ধির অপব্যয করবেন না। 
আপনাঙ্ের গ্রতিতা বর্দি কোন ক্কার্ধ্যকরি মতবাদকে গড়ে তোলার চেষ্টা 
করে তবে তাতে দেশের প্রদ্ভৃভত উপকার হবে। আপনারা প্রফেসার 
তরফদ্বান্ধকে এই অন্তান্থ ও ভ্রান্তি থেকে বিরত করবার প্রতিশ্রুতি দিস । 

সবিতা । (উত্তেজিতভাবে ) আপনার মভ আমার পিতাকে আমি তুল 
বুঝতে পারিনি ডাঃ রায়চৌধুরি। আপনার যুক্তির মত তারও একট! 
যুক্তি আছে এবং আমাদের ওপর তার প্রভাব বড় কম নয়। আপনার 
কথ! শুনে মনে হয় আপনি আমার পিতার শুাকাজ্মী। নিজের ধারণা 
ওপর একাত্ত বিশ্বাস থাকলে আপনি নিজেই সে কথা বাৰাকে বলতে 
পান্েন। 

ভাঃক্কবিমল। তা হয় না। শ্রফেপার তথ্্ষদ্বাত্য জানেন আপন্বি- এবং 
লেংকমতৈ তাক গতবাদকে অন্তয়ের লঙ্ধে ছেলে নিষেছেন, ভাই আপনাদের 
-লাঙাবা দা! পেলে কেওক্ঠাকে খাধ। দিতে পাঞ্বে না। আছি শাকে 


পলি 


এজধগা1জিক [দ্বিতীয় অঞ্থ 


যুক্তি দিয়ে বোঝাতে যাব অথচ তিনি হয়তো যুক্তির দিকে না গিয়ে 
আমায় হত্যা করে তার পথ পরিষ্কার করতে চাইবেন। 

সবিতা) আমার পিতার প্রতিটি কার্য্য-কলাপ যদি সমাজের অমঙ্গলের দিকেই 
ধাবিত হয় তবে আপনার পক্ষে পুলিশের সাহাধ্য নেওয়াই উচিত। 

ডাঃ স্থবিমল। পুলিশের সাহায্য নিয়ে কোন লাভ হবে না। তাতে কেবল 
আপনি এবং লোকনাথই দোষী সাবান্ত হবেন। আমার বিশ্বীন আপনি 
ও লোকনাথ শুধু একট] অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে এই অন্ায়ে নিজেদের 
জড়িয়ে ফেলেছেন । আপনার পিতার কাধ্য-কলাপকে আপনি কোনদিন 
যুক্তি দিয়ে বিচার করতে শেখেন নি। আমি সেই স্থযোগ আপনাদের 
দিতে চাই। আমি জানি আপনার] দুজনে বাধা দিলে গ্রফেসার 
তরফদার পুনরায় অগ্রসর হতে পারবেন না। (ডাক্তার স্থবিমল সহসা 
সবিতার হাত চাপিয়া ধরিলেন, বিশ্মিতা ও লজ্জিত সবিত1 ডাক্তারের 
মুখের দিকে বিহ্বলভাবে চাহিয়া রহিল। ) আমার অন্গরোধ সবিতা দেবা, 
পিতার অন্ধ ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে আপনি তার সর্বনাশ হতে দেবেন না। 
তার সারাজীবনের সম্মান ও খ্যাতিকে ধূলোয় লুটিয়ে দিতে সাহায্য 
করবেন না। 

[ সবিতার মুখ দরিয়া কোন কথা৷ সরিল নাঁ_-একটা কঠিন দ্বন্ব মুখে 

প্রকাশ পাইল মাত্র] 

ডাঃ স্থবিমল। সবিত। দেবী ! 

সবিতা । বলুন। 

ডাঃ ক্থবিমল। আমি বুঝতে পেরেছি আমার যুক্তির বিরুদ্ধে আপনার বলবার 
কিছু নেই। আপনারা যে ভুল পথে চলেছেন সে বিষয়ে কি আপনার 
মনে এখনও নংশনম় আছে সবিতাদেবী? (সবিতা প্রত্তরমৃক্তির মত 
ভাক্তাবের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল) চুপ করে থাকবেন নাঃ বলুন, 


৪৮ 


দ্বিতীয় দৃষ্ঠ ] 'ঈংজাই বাজি 


অন্তায়ের ভিত্তির ওপর জগতে কোন সত্যিকান্ধ সাধনাকে কি আপনি 
সফল হতে দেখেছেন? 

সবিতা। (অস্থির ভাবে ) আপনি চুপ করুন, চুপ করুন। আমায় ভাবতে 
দিন, আমায় ভাল করে ভাববার অবসর দিন। 

ভাঃ স্ববিমল। বেশ, আপনি ভেবে দেখুন। যাবার সময় আবার আপনাকে 
বলে বাই কেবলমাত্র আপনিই আপনার পিতাকে রক্ষা করতে পারেন। 
আপনাকে এ প্রতিশ্রতিও দিয়ে গেলাম--আমার জীবনের বিনিময়েও 
আপনাকে আমি সত্যের সম্মুখীন হতে সাহাধ্য করবো । 

( লোকনাথের প্রবেশ ) 

লোকনাথ । আমায় ক্ষমা করবেন। প্রঃ তরফদার ফিরে না আস পর্যাস্ত 
আপনাকে আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করতে হবে ডাঃ রায়চৌধুরি। 

ডাঃ স্থবিমল। মানে, তোমরা কি আমায় বলপূর্বক আটকে রাখবে? 

লোকনাথ। ( পকেট হইতে রিভলভার বাহির করিয়। ) প্রয়োজন হলে আমরা 
নিরুপায় 

সবিতা1। (রিভলভার দেখিয়া ক্রুদ্ধ কঠে) লোকনাথ বাবু? ডাঃ রায়চৌধুরি 
আমাদের নিকট হতে এর চেয়েও ভদ্র ব্যবহার আশা করেন--আপনি 
রিভলভার পকেটে রাখুন। ডাক্তারকে যেতে দিন। আন্ুন ডাকা” 
আপনার কথা আমরা ভেবে দেখবে । 

লোকনাথ । ভাক্তারকে মুক্তি দেওয়ার সমত্ত দাক্িত্ব কিন্ত আপনার । যান্‌ 
ডাঃ রায়চৌধুরি। 

ভাঃ স্বিমল। (সবিতার প্রতি) ধন্তবাদ! নমক্কার। (তিনি বাহিরে 
গেলেন )। 

সবিতা । ডাঃ বায়চৌধুরিকে আট্‌কে রাখলে আমাদের আরও নৃতন বিপদের 
সম্দুখীন হতে হতো । 


হই 


আন্দেংহ্ব্বহা কির [হিতীর এক 


'লোকলাথ। তাঁকে মুক্তি দিয়েই যে আমর বিপন্ধে পড়বে নাস-লে বিষয়ে 
আপনি কেমন করে নিঃনন্দেহ হলেন ? 

সবিতা । তিনি নিজে বাই করুন অন্ততঃ পুলিলের লাহাব্য গ্রহণ করবেন না। 

লোকনাথ। আপনার বক্তব্য তিনি পুলিশের সাহায্য না নিয়েই আমাদের 
কাজে বাধ! দেবেন। ডাঃ রায়চৌধুরি বুদ্ধিমান ব্যক্তি, তিনি জানেন এ 
বিষয়ে পুলিশের সাহাষ্য নিতে গেলে প্রঃ তরফদার তাকে ক্ষমা 
করবেন না। 

সবিতা । তিনি কি শুধু নিজের বিপদের কথা ভেবেই পুলিশে সংবাদ দিতে 
অনিচ্ছক? 

লোকনাথ । সেও কতকট! বটে--আর কতকটা তার আত্মবিশ্বাস । তিনি 
মনোবৈজ্ঞানিক, তাই আমাদের সাহাধ্য নিয়ে প্রঃ তনফদারকে তার 
সাধনা থেকে বিরত করবার আশাও হয়তে। পোষণ করেন । আমায় 
ক্ষমা করবেন সবিতা দেবী--আপনার মুখে চোখে থে ভাবটুকু পরিস্ফুট 
রয়েছে তাতে আমি ধারণা করতে পারি ডাক্তারের সঙ্গে এ নিয়ে আপনার 
আলোচনা হয়েছে এবং ভাক্তানের কথার প্রতিক্রিয়া এখনও আপনি 
কাটিঘ্ে উঠতে পারেন নি। 

সবিতা । মেনে নিলাম আপনার কথা। কিন্তু ডাক্তার আপনাকেও কি সে 
কথা বলেন নি? 

লোকনাথ । হ্যা তিনি আমার উজ্জল ভাবিষ্যৎ কল্পনা করে প্রঃ তরফদায়ের 
পথ ত্যাগ করতে উপদেশ দিয়েছেন। আমি ছুঃখিত-.াক্ষে বেশী কথা 
বলবার স্থযোগ দিতে পারিনি। 

সবিতা । (সহস! তীক্ষ কে) কেন পারেন নি? ডাক্তারের কথার উত্তর 
বেষার ক্ষমতা! কি আমাদের নেই ? 

লোকনাথ। আমাদের সাধনা সফল হওয়ার আগে ভাতের কথা উত্তর 


হঠও 


দ্বিতীয় চৃষ্] অংজাটখঙ্ডাজিক 


,  ফ্বেবার ক্ষমতা সত্যই জামাদের নেই । বদি থাকতে! তবে আজ সামাক্ষ 

অর্থের জন্ত আমাদের এমন হীন উপায় অবলম্বন করতে হতো! ন1। 

সবিতা । আমাদের মতবাদ কি কোন যুক্তির ওপর প্রতিষ্টিত নয়? 

লোকনাথ । যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নিশ্চয় কিন্ত সে যুক্তির বেশীর ভাগই 
অন্থমান। যুক্তিগুলিকে প্রমাণ করবার ক্ষমতা আমরা আজও অর্জন 
করতে পারি নি। আমরা একটা পরীক্ষা কচ্ছি মাত্র--হয়তো সফল 
হতে পারি, হতাশও হতে পারি। জগৎকে নৃতন কিছু দিতে হলে এমনি 
বছ ০56717031/ করতে হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষতি ও অন্তায়কে 
মেনে নিতে হয়। যারা শুধু ক্ষতি ও অন্যায়ের মাত্রা দেখে শিউরে ওঠে 
তাদের কাছ থেকে জগৎ কোনদিনই কিছু আশা করতে পারে না। 

সবিস্তা। আমাদের এ কথা স্বীকার করে নিষ্কেও ডাক্তার বলেছেন--বাবা 
একটা শ্রাস্ত কল্পনার মোহে তীর বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি হাব্িয়ে ফেলেছেন। 
এভাবে নিজের শক্তির অপচয় করে তিনি দিনের পর দিন যে অগ্ঠান্ধ করে 
চলবেন তাতে সমাজের চোখে একজন অপরাধী বলেই গণ্য হবেন। 

লোকনাথ । ডাক্তারের মনে এ সন্দেহে জেগে থাকলে সে কথা প্রঃ 
তরফদারকে তার বল! উচিত। 

সবিতা । তার যুক্তি শোনবার আগেই বাবা তাকে হত্যা করে নিজের পথ: 
পরিষফার করতে চাইবেন। ডাক্তারের ইচ্ছা আমর! তাকে সাহাধ্য করি। 
(সে লোকনাথের যুখের দিকে চাহিল।) 

লোকনাথ । কিভাবে? 

সবিতা । আমরা ছুজন বাধা দিলেই বাবা আর অগ্রসর হতে পারবেন না। 
সেক্ষেত্রে ডাক্তার নিজের জীবন দিয়েও আমাদের সাহাধ্য করতে ক্রুটী 
করবেন ন। 


লোকলাথ। হু, গ্রঃ তরফদার চাইছেন ডাঃ স্থ্বিলকে নিজের দলভুক্ত 


৬১ 


অনা বৈজামিক [দ্বিতীয় অক 
করতে--ওদিকে ভাক্তার চান তাকে নিজের গণ্তীর মধ্যে টেনে আনতে । 
একজন চান প্রাণ নিতে--অন্তজন দিতে । এই প্রাণ দেওয়া নেওয়ার 
ব্যাপারে আমার কোন সম্মতি না থাকলেও প্রঃ তরফদারকে সাহাধ্য 


করতে আমি বাধ্য । 
সবিতা । বাবার অমঙ্গল জেনেও আপনি তাকে অন্যায় থেকে বিরত 


করবেন না? 
লোকনাথ । করবে৷ না নয়, পারবো না। আপনি ভূলে যাবেন নাআমি 
আপনার পিতার আশ্রিত--তার মতবাদের জগ্ই তিনি আমায় গড়ে 
তুলেছেন। আমার মধ্যে কোন প্রতিবাদের স্থর তিনি আশা! করেন ন|। 
তীর বিশ্বাস তিনি আমার ব্যবহারকে আয়ত্ত করেছেন, তাই আমার একটা 
আলাদ] মনের কথ! তিনি কল্পনা করতেও পারেন না। আমি তার 
লেবরটারীর একট] এপারেটাস্‌ মাত্র-ঠিক ভাবে কাজ না পেলে তিনি 
আমায় আবজ্জনার মত ছুড়ে ফেলে দেবেন। প্রঃ তরফদ্ারের সঙ্গে 
তর্ক করবার, ঝগড়া করবার অধিকার কেবলমাত্র আপনারই আছে-- 
আপনি তার কন্তা। ডাক্তারের সঙ্গে যোগ দিয়ে আপনার বাবার 
মঙ্গলের জন্য যা করবেন তাতে আমায় সাহাধ্য করতে অনুরোধ 
করবেন না। 

সব্তা। আপনি কেমন করে জানলেন ডাক্তারের সঙ্গে আমি ষে'গ দেবো? 
লোকনাথ। না দিয়ে আপনার কোন উপায় নেই--ষে ভয়াবহ ভবিস্ততের 
ছবি ভাক্তার তার প্রবল যুক্তি দিয়ে আপনার চোখের সামনে তুলে ধরেছেন 
তাতে পিতার প্রতি একবিন্দু দেহ থাকলে আপনি ডাক্তারের সাহাব্য- 
কারিণী হতে বাধ্য। এই জন্যই সেদিন আপনার গলায় হারথানি দেখে 
আমি যাচাই করতে চেয়েছিলাম আপনি আপনার পিতার ভ্রাস্ত আদেশ 
পালন করতে পারবেন কি না। আপনি বলেছিলেন আপনার বাবা তল 


৬২ 


ঘিতীয় দু ] বলোইবজা নিক 


ক্লুরতে পারেন না। আজ ডাক্তারের কথায় শিতার মঙ্গলই আপনার 
সম্মুথে একমাত্র বাধা হয়ে দাড়াল। আপনার দোষ নেই--আপনি 
তার সম্তান। আপনার অবস্থায় পড়লে আমিও ডাক্তারের সঙ্গে যোগ 
দিতে বাধ্য হতাম। 

সবিতা । আমার পিতার প্রতি কি আপনার এক বিন্বুও ন্মেহ নেই ? 

লোকনাথ। গুনে বিস্মিত হবেন, প্রঃ তরফদারের মতবাদ ছাড়া প্রঃ 
তরফদার মানুষটির প্রতি আমার একবিন্দুও ন্মেহ নেই। তিনি তার 
সাধনার জন্য অমন করে উন্মাদ না হলে কখনই আমাকে আশ্রয় দিতেন 
না। যদিও বা আশ্রয় দিতেন কখনো অতথানি বিশ্বাস করতেন না। 
সেইজন্। আমি তার আশ্রিত ন। বলে তার মতবাদের আশ্রিত বললেই 
বোধ হয় ভাল শোনাবে । 

সবিতা । আপনার নিজের সম্মতির বিরুদ্ধেও বাবাকে ডাক্তারের হত্যায় 
সাহায্য করতে কুণ্ঠিত হবেন না? 

লোকনাথ। আপনার বাবার মতবাদের জন্য আমি তীকে সর্বদা সর্বকাধ্যে 
সাহাধ্য করতে বাধ্য সবিত। দেবী । 

সবিতা । তাতে আমার পিতার সমূহ-_ 

লোকনাথ । ক্ষতি জেনেও করবে৷ 

সবিতা । কিন্ত মনে রাখবেন-_কোনদিন বাবার মানসিক পরিবর্তন ঘটলে 
আপনি বিশ্বাসঘাতক রূপেই পরিচিত হবেন। 

লোকনাথ। (হাসিল) তার মতবাদ তার সঙ্ষে বিশ্বামঘাতকতা করলে 
আমাকেও তার অনুসরণ করতে হবে। অনেকখানি বিশ্বাসের পেছনেই 
তে! তার ঘাতক লুকিয়ে থাকে সবিতা দেবী! আশাকরি আপনি 
আপনার কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন | 

সবিত। | আমি ভেবেছিলাম আপনার কৃতঙ্নতার একটা সীম! আাছে। 


ত৩ 


কাজটা [দ্বিতীর হর 
আপনাক সঙ্গে আলোচনা করা বিক্ষল। (নে উঠিয়া দরজার দিকে 
অগ্রসর হইল) 

লোকনাথ । (হাসিমুখে) রাগ করবেন না। আনন, আমরা এতকালের 
সহকম্মী আজ হাসিমুখে বিদায় গ্রহণ করি। এতদিন প্রঃ তরফদার 
ও তার মতবাদ অবিচ্ছে্ত ছিল-আক আপনার কাছে বড় সমস্যা 
হোল প্রঃ তরফপ্দার--আমার কছে তার মতবাদ । 

সবিতা । (যাইতে যাইতে ফিরিয়া দাড়াইল ) লোকনাথ বাকু আপনি মানুষ 
নন্‌--সত্যিকারের একট? যন্ত্র) ( উত্তেজনার গ্রাবল্যে সে ডেতবে গেল )। 

[ লোকনাথ সবিতার গমন পথের দিকে চাহিয়া প্রাণ ভরিয়া হানিল, 

পর্দাও নামিয়া আসিল ] 


ওয় দৃশ্য 
(ডাঃ আুবিমলের বসিবাব ঘর । সময় বৈকাল। বাহিবে ঝড ও বৃষ্টিব তাগুব 
নৃত্য সবক হইয়াছে । বাতাস ও মেঘের গর্জন সমানভাবে চলিতেছে । মাঝে 
মাঝে কাচের সার্সির ওপর বিদ্যুতের বক্র কটাক্ষ চোখ ঝলসাইয়া দিতেছে । 
ডাঃ স্তবিমল কক্ষমধ্যে চিত্তিতভাবে পায়চারি করিতেছেন । ঝড়ের জঙ্য 'ঘবেব 
দরজ। জানালা বন্ধ করিয়! বাখা হুইয়াছে। বৈহ্যাতিক আলো জলিতেছে। ) 
( দরজায় করাঘাতের শব শোনা গেল। ডাক্তার সেদিকে ফিরিলেন। ) 
ভাঃ সবিমল। ( অপেক্ষাকৃত জোর গলায়) কে? ভেতরে আন্বন। 
( দরজা খুলিয়।! একঝলক দমকা বাতাসের সঙ্গে অত্যন্ত ব্যক্তভাবে বিশ্বনাথ 
সরকার প্রবেশ করিল। একট! কঠিন উদ্বেগে সে রেন-কোট খুলিতে বা দরজা 


৬৪ 


তৃতীয় দৃহ ] মআবৈজ্ঞানিক 


বন্ধ করিতে ভুলিয়া গেল। বাতাস তীব্রভাবে ঘরে প্রবেশ করিতে থাকিল। 
বার বার বিদ্যুৎ চমকাইতেছিল। ডাক্তার বিশ্বনাথের ভাবভঙ্গী দেখিয়া খানিকটা 
বিস্ময়ে তাহার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন ) 

বিশ্বনাথ । ভাঃ বায়চৌধুরি ! দাদাকে পুলিশে ধ'রে নিয়ে গেছে! 

ঢাঃ স্ুবিমল। ( অধিকতর বিশ্ময়ে) আপনার দাদ! অরবিন্দ বাবুকে? তাঁকে 
পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে কেন? 

বিশ্বনাথ | যে মেয়েটি আমাদের সর্বনাশ করেছে তার একটা ফটো দাদার 
কাছে পাওয়া গেছে। 

ডাঃ স্থবিমল। ফটে1! সে মেয়েটির ফটে। আপনার দাদা পেলেন কোথায় ? 

বিশ্বনাথ । সে কথা দাদা কোনমতেই প্রকাশ করতে রাজী নন্। মেয়েটি 
আগে ধরা না পড়লে তিনি কিছুই বলবেন না এবং এই কারণে পুলিশ 
তাকেও সন্দেহ করে ধ'রে নিয়ে গেছে । আমরা ভয়ানক বিপদে পড়েছি । 
পুলিশ বোধ করি এক্ষুনি সে ফটো! নিয়ে আপনার কাছেও তদন্ত করতে 
আসবে । আপনি কি এ বিষয়ে কিছু জানেন ডাঃ রায়চৌধুরি ? 

চাঃ স্ববিমল। ঘটনাটা আমি বিশ্বান করতে পারছি না--ব্ই রহস্যজনক 
ঠেকছে । আচ্ছা আপনি স্থির হো'ন। বিচলিত হয়ে কোন লাভ নেই। 
(ডাক্তার নিজেই অগ্রসর হইয়া দরজাটা বন্ধ করিয়! দিলেন। দুজ্নেই 
আসন গ্রহণ করিলেন ) পুলিশ কি আপনার দাদার ঘর সার্চ করে এই 
ফটে] পেয়েছে? 

বিশ্বনাথ । পুলিশ কি জন্য তাঁর ঘর সার্চ করতে যাবে দাদা নিজেই হঠাৎ 
পুলিশকে ডেকে এই ফটো তাদের হাতে দিয়েছেন। গয়না চুরির পর 
থেকেই দাদার মধ্যে একট] অদ্ভূত পরিবর্তন আমর! লক্ষ্য করেছি। এর 
পর থেকে তিনি দোকানে যাওয়া বা লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা! 
একেবারে বন্ধ করেছেন। আহার নিদ্রা তো প্রায় ত্যাগ করেছেন 


৫ ৬৫ 


মনোবৈজ্ঞানিক [ দ্বিতীয় অক 


বল্লেই চলে। বাত্রি বেলায় দেখেছি তিনি তার শোবার ঘরে পায়চারী 
করেন আর বিড় বিড় করে কি সব বকেন। এগুলো আমরা বনু টাকার 
ক্ষতির প্রতিক্রিয়া বলেই মনে করেছি--এর পেছনে অন্য কোন রহস্য 
থাকলে আমাদের কারুরই সে কথা জান! নেই। 

ডাঃ স্থবিমল। পুলিশের হাতে ফটোট। দিয়ে তিনি কি বলেন? 

বিশ্বনাথ । প্রথমে তিনি মেয়েটাকে ধরতে না পারার জন্য পুলিশকে তিরস্কার 
করেন। পরক্ষণেই আমাদের সকলকে বিস্মিত করে ফটোখানি পকেট 
থেকে বার করে বল্েন--এই ফটে। হ্য়তে। মেয়েটির সঙ্ধানে আপনাদের 
সাহায্য করবে--এট। আপনার কাগজে ছাপিয়ে, পুরার ঘোষণা করিয়ে, 
যেমন করে হোক মেয়েটির সন্ধান আমায় এনে দিন। এর জন্য আমি 
আমার সব কিছু বিসঞ্জন দিতে ও গ্রস্ত আছি।' 

ডাঃ স্থবিমল। (রুদ্ধনিঃশ্বাসে ) তারপর? 

বিশ্বনাথ। পুলিশ ভয়ানকভাবে ঘাবড়ে গিয়ে দাদাকেই উদ্টো৷ জেরা! আর্ত 
করলে।। এ ফটো তিনি কোথায় কেমন করে পেলেন--আগে এ 
ফটোর কথা কেন প্রকাশ করেন নি। পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে আমও 
দাদাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করলাম, কিন্তু দাদা নীরব। তার এক কথা 
মেয়েটির সন্ধান না পেলে তার মুখ থেকে একটি কথাও কেও বার করতে॥ 
পারবে না। 

ডাঃ স্থবিমল। আশ্চর্য্য ! 

বিশ্বনাথ। পুলিশ বৌললো! ঘটনাটা ভীষণ রহস্যজনক | দাদার মুখ থেকে 
কিছু না বের করতে পারলে তারা এক পদও অগ্রসর হতে পারবেন না। 
দ্রাদার নীরব্তাম় তাদের সন্দেহ এত তীব্র আকার ধারণ করেছে যে তীরা 
দ্রা্াকে থানায় নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। 

ডাঃ স্থবিমল। আপনার দাদ! থানায় ষেতে রাজী হলেন? 


৬৩ 


তৃতীয় দৃষ্ত ) অন্দো বৈজ্ঞাঘ্িক 


বিশ্বনাথ দাদ! কোন আপত্তি করেন নি। দৃঢ়কণে তিনি পুলিশকে 

জানালেন--তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হোক বা জেলে পাঠানো হোক 

মেয়েটির সন্ধান না পেলে ফটো সম্বন্ধে তিনি কিছুই বলবেন না। দাদার 

ব্যবহারে আমরা বিস্ময়ে হতবাক্‌ হয়ে গেছি। আমি আপনার কাছে 

এসেছি ভাঃ রায়চৌধুরি, আপনি মনোবৈজ্ঞানিক ; দাদার সঙ্গে সাক্ষাৎ 

করে হয়তো আপনি তার মনের কথা জানলেও জানতে পারেন । তাকে 

পুলিশের কবল থেকে মুক্ত করে না আনতে পারলে আমাদের যে কলঙ্ক 

টবে তাতে বহুদিনের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা একেবারে অচল হয়ে ঈ্াড়াবে। 

আমার মনে হয় দাদা সম্পূর্ণ নির্ধোষ, হয়তো এমন কোন বাধা! আছে 

যাবু জন্যা'***১*'*, 

স্থবিমল। (অন্যমনস্ক ও চিস্তিত হইয়া পড়িলেন ) আপনার দাদার 

ছেলে মেয়ে কয়টা ? 

বিশ্বনাথ | দাদা বিবাহ করেন নি। তিনি চিরকুমার। 

ডাঃ স্থবিমল। ( সোজা হইয়া বসিলেন ) চিরকুমার! আপনি কিছু না মনে 
করলে আপনাকে জিজ্ঞাসা করবো আপনার দাদার চিরকুমার থাকার 
পেছনে কোন ইতিহাস আছে কি না? 

বিশ্বনাথ । দাদার চেয়ে বয়সে আমি অনেক ছোট তাই তার অবিবাহিত 
থাকার পেছনে কোন ইতিহাসের জন্য আমার কৌতুহল জাগে নি। 
দাদাকে আমরা চিরকাল সচ্চরিত্র, কম্মঠ, ব্যবসায়ী বলেই জেনে এসেছি | 
দুষ্ট লোকে অবশ্য অনেক কিছু বলে কিস্ত সে কথ! দাদার সন্বদ্ধে আমর! 
কোনদিন বিশ্বাস করতে পারিনি । 

ডাঃ স্থবিমল। তারা কি বলে? 

বিশ্বনাথ। (ঘ্বণাভরে ) এ কেও সারাজীবন বিয়ে না করলে যা বলে থাঁকে, 
হতাশ প্রেমিক--চরিত্রে ছিদ্র আছে, এইসব। কিছু একটা অন্বাভাবিক 


রি 


ডাঃ 


৬৭ 


অমো বৈজ্ঞানিক [ দ্বিতীয় অঙ্ক 


দেখলেই নানালোকে নান কাল্পনিক গুজবের ্ট্টি করে। আপনি এসব 
মনে স্থান না দিয়ে দাদার সঙ্গে দেখা করে আমল রহস্য জানবার চেষ্ট! 
করুন। পুলিশ এক্ষুনি সে ফটো নিয়ে আপনার কাছে আসবে--আমি 
চল্লাম। (উঠিয়া ট্াড়াইলেন ও রেন-কোট পরিতে আরম্ভ করিলেন, 
দরজায় পুনরায় করাঘাতের শব্দ শৌন! গেল )। 

ডাঃ স্থবিমল । আপনি যান--আমার দিক থেকে কোন ক্রটা হবে না। 

( ডাক্তার নিজে অগ্রসব হইয়া দবজা খুলিয়া দিলেন । লেডিজ. বেন-কোট ও 
টুপি পবিহিত। সবিত। প্রবেশ কবিল-_চোখে এই বাদলেব দিনেও কালে। গগল্স 
_বিশ্বনাথ সবকাব তাহাব দিকে একবাৰ তীক্ষ দৃষ্টিপাত কবিয়া বাহির হইয়। 
গেল। ডাক্তাব সবিতাব অদ্ভুত বেশভুষাৰ দিকে চাহিয়াছিলেন_সে চোখের 
কালো চশমা খুলিয়। ফেলিল ) 

ডাঃ স্থবিমল। সবিতা দেবী! আপনি এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আমায় কোন 
বাদ না দিয়ে-_( তিনি পুনরায় দরজ। বন্ধ করিলেন ) 

সবিতা । ( রেন-কোট খুলিয়1 ব্রাকেটে রাখিল ) মন স্থির করে আপনার 
কাছে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছি--আপনি বাবাকে রক্ষা করুন। (দে 
ডাক্তারের কাছে আগাইয়! আসিল ) 

ডাঃ স্কবিমল । আপনি বস্থন। আমার কথা আপনি বুঝতে পেরেছেন জেনে 
সুখী হলাম কিন্ত 

সবিতা । কিন্ত কি ডাক্তার? আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? 
আমি কি না জানিয়ে এখানে এসে আপনাকে বিপদগ্রস্ত করে তুললাম? 

ডাঃ স্থবিমল। বিপদে আমি পড়েছি, তবে আপনার আসার জন্য নয়, অন্ত 
কারণে। 

সবিতা । কি বিপদ বলুন। আমি কি আপনাকে কোনভাবে সাহায্য করতে 


পারি? 


তৃতীয় দৃষ্ঠ ] অনো বৈজ্ঞানিক 


ডাঃ স্থব্মিল। (তীক্ষ-দৃ্টিতে সবিতার মুখের দিকে চাহিলেন) হয়তো 
পারেন। 

নবিতা। আপনি কি আমায় সে সুযোগ দিতে চান না? 

ডাঃ স্বিমল। (তিনি আসিয়া সবিতার সামনে বসিলেন ) দিতে চাই। 
আপনি আমায় বলতে পারেন অলঙ্কার বিক্রেতা অরবিন্দ সরকার আপনার 
ফটো] পেলেন কেমন করে? 

সবিতা । আমার ফটো! অরবিন্দ সরকার! আপনি কি বলছেন ভা: 
রায়চৌধুরি ? 

ডাঃ স্থবিমল। আমি ঠিকই বলছি। অরবিন্দ সরকার আপনার সন্ধানে 
জন্য এ ফটে] পুলিশের হাতে দিয়েছেন। কোথায় কি ভাবে এ ফটো 
তিনি পেয়েছেন সে কথা আপনি ধরা পড়বার আগে তিনি কিছুতেই 
বলবেন না। তার সম্পূণ নীরবতায় পুলিশ তাকেও সন্দেহ করেছে। 
পুলিশ এক্ষুনি আমার কাছেও আসবে । আপনি বলুন, আপনার ফটে' 
তিনি কেমন করে পেলেন ? 

সৃবিতাঁ। (কাতরভাবে) আপনি আমায় বিশ্বাস করুন--এ ফটো সম্বন্ধে 
আমি কিছুই জানি না। 

ভাঃ স্থবিমল। আমার কাছ থেকে কিছু গোপন করবার চেষ্টা করবেন 
না--সব কথ! খুলে বললে আপনারই ভালে হবে। 

| মবিতা। একবার প্রতারণা করে আমি আপনার বিশ্বাস হারিয়েছি--হয়তে। 
সে বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। আপনি আমায় পুলিশের 
হাতে তুলে দিন_-তাতে নিশ্চয় সকল রহস্যের সমাধান হবে। আমি 
অরবিন্দ বাবুর কাছে সমস্ত অন্যায় শ্বীকার করে তার শাস্তি মাথা পেতে 
তুলে নেবো। 

ডাঃ স্থবিমল। আপনার ওপর বিশ্বাস আমি হারাইনি। এ ঘটনায় অত্যন্ত 


৬৯ 


মনো বৈজ্ঞানিক [ দ্বিতীয় অহ 


বিচলিত হয়ে পড়েছি । আপনাকে অরবিন্দ বাবুর ঝছে নিয়ে যেতে 
পারি কিন্তু তার পূর্বে প্রঃ তরফদারের সঙ্ষে একবার দেখা কর! 
প্রয়োজন। 
( এই সময় দব্দায় ঘন ঘন কলিং বেল বাঁজিয়া উঠিল ) 

ডাঃ স্থবিমল। পুলিশ বুঝি এসে পড়লো, আপনি দয়া করে আমার এই 
পেছনের ঘরটায় গিয়ে বস্থন। 

সবিতা । (ঈষৎ চাঁপাগলায় ও বিব্রতভাবে ) আমি কি অন্ত কোন পথ দিয়ে 
বাইরে যেতে পারি না? 

ডাঃ স্ৃবিমল। ( ব্যস্তভাবে ) না, না, বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই । আপনি 
দেরী করবেন না। চলে যান পেছনের ঘরে। (তিনি খানিকটা 
অগ্রসর হইলেন ) 

সবিতা । ( ইতস্ততঃ করিয়া ) কিন্তু পুলিশ জানতে পারলে আপনাকেও-_ 

ডাঃ স্ুবিমল। সে কথা পরে হবে। আপনি যান। (ডাক্তার একরূপ 
ঠেলিয়াই সবিতাঁকে ঘর হইতে বাহির করিয়া দরজী বন্ধ করিয়া দিলেন। 
তারপর বাহিরের দরজা! নিজেই খুিলেন। পুলিশ ইনস্পেক্টার প্রবেশ 
করিলেন । বাহিরে বুষ্টি প্রায় খামিয়া আসিয়াছে । ) 

পুলিশ ইনস্পেক্টার। জয় হিন্দ, স্যার! আপনাদের কেসটার মোড় সম্পূর্ণ 
ঘুরে গেছে। 

ভাঃ স্থবিমল। হ্যা বিশ্বনাথ বাবু আমায় এই মাত্র সে বিষয়ে কিছু বলে 
গেলেন । 

ইনস্পেক্টার। তিনি আপনাকে সে মেয়েটির ফটোর কথা কিছু বলেছেন? 

ডাঃ স্থৃবিমল। অরবিন্দ বাবুর কাছ থেকে আপনার] মেয়েটির ফটে পেয়েছেন 
এবং তিনি কোন কথা বলতে অস্বীকার করায় তাঁকে আপনারা সন্দেহ 
করেছেন। 


ও 


তৃতীয় দৃশ্ী ] মমোবৈজ্ঞামিক 


ইনস্পেক্টার। সন্দেহ না করে আমাদের উপায় নেই। তিনি কিছু না 
বললে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবো। 

ডাঃ স্থবিমল। আপনারা তার নীরবতায় কি সন্দেহ করেছেন ? 

ইনস্পেক্টার। সন্দেহ কি করবো স্তার-_আমাদের মাথা একেবারে গুলিয়ে 
গেছে। এরকম কেস্‌ পুলিশ রেকর্ডে আজ পধ্যস্ত আসেনি । এখন 
আপনিই আমাদের একমাত্র ভরসা। আমাদের কর্তাও শেষে আপনারই 
সাহাধা নিতে বাধ্য হবেন। 

ডাঃ স্থবিমল। (সচকিতভাবে ) আমার সাহায্য? আমি কি করতে 
পারি? 

ইনস্পেক্টার। আপনি হয়তে। আপনাদের মনোবিজ্ঞানের কোন রকম প্রণালী 
গ্রয়োগ করে সরকারের মনের কথাট। বার করতেও পারেন। আমরা 
এসব কাজ অবশ্য মারের চোটেই উদ্ধার করি তবে ইনি একজন বিশিষ্ট 
লোক তাছাড়া ব্যাপারটাও বড় জটিল। হ্যা, কথায় কথায় আসল 
জিনিষটাই আপনাকে দেখানো হয়নি । (তিনি পকেট হইতে একটি 
সোনার ফ্রেমে কাধানে। পোর্টকার্ড সাইজের ফটে। বাহির করিয়া ডাক্তারের 
হাতে দিলেন ) এই ফটোটাই আমর] পেয়েছি, মেয়েটিকে আপনি ও 
মিঃ সরকার ছাড় বোধ করি ভালভাবে কেও দেখেনি,--এখন এটা সত্য 
কি না বলুন ? 


£ স্ববিমল | ( ফটো দেখিয়া ) হ্যা সেই মেয়েটির ফটে| বলেই বোধ হচ্ছে। 
(তিনি আবার একটু দূরে সরাইয়! দেখিলেন। ) তবে চোখের চাহনিতে 
কেমন যেন একটু পার্থক্য--নাকের ডগাঁও-_-ফটে1 অবশ্ত একেবারে নিখুত 
অনেক সময় হয় না। 

ইনস্পেক্টার। আপনি কি সেদিন মেয়েটির মুখ খুব ভালো করে লক্ষ্য করে 

ছিলেন? 


ডভ 


সী 


শ১ 


মনোবৈজ্ঞান্িক [ দ্বিতীয় অঙ্ক 


ডাঃ স্থুবিমল। ( ফটোর দিকে চোখ রাখিয়া) মানুষের মুখ ভাল করে লক্ষ্য 
করাই আমাদের ব্যবসা । 

ইন্স্পেক্টার | ( হাঁসিয়৷ ) কেননা মানুষের মুখ তার মনের আয়না । সেদিন 
ঘর্দি আপনি তার মনের কথাটাও জানতে পারতেন স্যার তা"হলে 
আমাদের আজ এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হোত না। 

ডাঃস্ববিমল! ঠিকই । তবে আমরা অন্তর্ধযামী হবার মতো বিষ্া এখনো 
আয়ত্ত করতে পারিনি । ইনস্পেক্টার! এ ফটোট! আমার কাছে 
রেখে যাবেন? আপনাদের কর্তা ভাকবার আগেই আমি একবার 
সরকারের সঙ্গে দেখা করে তার মনের কথাট। জানবার চেষ্ট] করবো । 

ইনস্পেক্টার। আপনি গভর্ণমেণ্টের উচ্চপদস্থ ডাক্তার--আপনাকে দিতে 
কোন আপত্তি নেই। আপনার নামাঙ্কিত কাগজে শুধু একটা লিখে 
দিন। 

ডাঃ স্থবিমল। বেশ, (তিনি প্যাড লইয়! লিখিতে বসিলেন, ইত্যবসরে 
ইনস্পেক্টারের চোখ পড়িল সবিতার রেন-কোটটির ওপর ) এই নিন্‌। 

ইনস্পেক্টার ৷ ধন্যবাদ হ্যার। কাঁজ শেষ হলে ফটোট। আফিসে পাঠিয়ে 
দ্বেবেন। ( একটু থামিয়া ) আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? 

ডাঃ স্থবিমল। হ্যা, হ্যা, কি জানতে চান বলুন। 

ইনস্পেক্টার । বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে পথে আমার দেখা হোল, তিনি বললেন 
কিছুক্ষণ আগে আপনার কাছে একটি তরুণী এসেছিলেন ধার মুখের সঙ্গে 
এই ফটোর অনেকটা মিল আছে । 

ডাঃ স্ববিমল। মিস্‌ তরফদারের সঙ্গে এই ফটোর মিল থাকলে আপনারা 
নিশ্চয় সে সংবাদ পাবেন । 

ইনস্পেক্টার। ওট| বিশ্বনাথবাবুরই চোখের তুল; তিনি এখন সকলের মধ্যেই 
এই ফটো মিল দেখছেন নইলে আপনারা সকলের মুখ ভাল ভাবে লক্ষ্য 


পথ 


তৃতীয় দৃশ্য ] অনোবৈজ্ঞীমিক 


করেন--মিল থাকলে নিশ্চয়ই ধরতে পারতেন । আচ্ছা--নমস্কাঁর, 
আমি চলি শ্তার। আমাদের বিশ্বাস আপনি সরকারের কাছ থেকে 
নিশ্চয়ই কিছু জানতে পারবেন। 

ডাঃ স্থবিমল। নমস্কার! আন্গন। কিছু জানতে পারলে আপনাদের 
কর্তীকে জানাব । 
( ইনস্পেক্টার দোর পর্য্যস্ত গিয়া সহসা! ব্রাকেটে বেন-কোটটিব ওপব হাত দিল |) 

ইনস্পেক্টার। আমাক ক্ষমা করবেন, আমাদের পুলিসের মন বড় সন্দিপ্ক, 
এই রেন*কোটটি কোন লেডির বলেই মনে হচ্ছে। 

ডাঃ স্থবিমল । রেন-কোট ! (সেদিকে চাহিয়া ) ওঃ, মিস্‌ তরফদার ওটা 
নিয়ে যেতে হয়তো ভূলে গেছেন । 

ইনস্পেক্টার। ভুলের জন্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না স্যার । বুষ্টিও অনেক- 
ক্ষণ থেমে গেছে । আমি একটা মনোবিজ্ঞানের বই-এ পড়েছিলাম 
মান্গষের কোন বস্তর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সেট। সে সাধারণত: তুলেই 
যায়। 

ডাঃ স্থবিমল। আপনাদের পুলিশের লোকের মধ্যে মনোবিজ্ঞানের চর্চা 
যতই বাঁড়বে সমাজের ততই মঙ্গল হবে। আপনি মনোবিজ্ঞান পড়বার 
স্বযোগ পান জেনে স্ত্ধী হলাম। 

ইনস্পেক্টার । (হেঃ হেঃ করিয়া খানিকটা হাপিল ) আসি স্যার |] নমস্কার । 
( ইনস্পেক্টাব চলিয়। গেল। ডাক্তার দরজা বন্ধ করিয়া কিরিয়া দেখিলেন সবিতা 
ঘব হইতে বাহিব হইয়া একটি সোকায় নত মস্তকে বসিয়! আছে । ) 

সবিতা। (ডাক্তারকে সম্মুখে দেখিয়া) ডাঃ রায়চৌধুরি, আপনি আমার 
জন্য কেন মিথ্যা) কথা বললেন? কেন নিজেকে আপনি এমন করে 
আমাদের জন্য জড়িয়ে ফেলছেন? 

ভাঃ স্থবিমল। সবিতা দেবী, আপনার কথার সোজা জবাব আমি সময় 


৪৩ 


মনোবৈজ্ঞানিক [ দ্বিতীয় অঙ্ক 


এলে দেবো । আজ শুধু জেনে রাখুন আপনাকে আমি সত্যের সম্মুখীন 
হতে সাহাধ্য কচ্ছি মাত্র । 

সবিতা । আমি সব কথা দরজার আড়াল থেকে শুনেছি । মিস্‌ তরফদার 
মেয়েটির প্রতি পুলিশের সন্দেহ জেগেছে । আমায় তার! ধরবেই এবং 
সেই সঙ্গে আপনাকেও জড়াবে । 

ডাঃ স্থবিমল। আমার কথার পর পুলিশের সন্দেহ ঘুচে গেছে। তাছাড়া 
তারা আপনার খোঁক্ করবার আগেই আমি নিজে পুলিশকে সংবাদ 
দেবো। 

সবিতা । তবে দিলেন না কেন? 

ডাঃ স্থবিমল। সবিতা দেবী-_-মামাদের পুলিশ আপনাদের মত মহৎ উদ্দেশ্া- 
বান, শিক্ষিত, সম্রান্ত চোর নিয়ে কারবার করে না। প্রঃ তরফদারকে 
আপনার সাহায্যে তার হুল বুঝিয়ে দেবার আগে পুলিশে সংবাদ দিলে 
আমার সমস্ত পরিশ্রম পণ্ড হবে। আপনাকে পুলিশ গ্রেপ্ধার করবে__ 
প্রঃ তরফদ্ধার বিরত হওয়ার পরিবর্তে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন। 
তিনি জানবেন আমিই এর জন্য দায়ী । আমীয় তিনি কখনও ক্ষম। 
করবেন না। 

সবিতা । কিন্তু পুলিশকে আপনি কি বলে কৈফিয়ৎ দ্বেবেন? 

ডাঃ স্থবিমল। পুলিশের কাছে পরে আপনার সন্ধান গোপন করার উদ্দেশ্ঠ 
প্রকাশ করলেই তারা আমায় বিশ্বাস করবে। 

সবিতা । আমার বাধ! দেওয়া সত্তেও যদি বাবাকে বিরত করতে না পারি? 

ডাঃ স্থবিমল। আমার দৃঢ় ধারণা আপনি বাধা দিলে তিনি বিরত হবেন। 
বিপরীত ক্ষেত্রে আমি তাকে পাগল বলতে বাধ্য হবো । যাই হোক্‌, 
ভবিষ্যতির ভাবনা আমি ভাববো না । আপনি এই ফটোটা দেখে বলুন, 
এট] কি সত্যই আপনার ফটো? ( পকেট হইতে ফটো বাহির করিলেন ) 


৭৪ 


তৃতীয় দৃষ্ত ] মনোবৈজ্ঞানিক 


সবিতা ॥ (ভাল করিয়া দেখিয়া) হুবহু আমার সঙ্গে মিল, কিন্তু, এ 
ধরণের শাড়ী, ব্রাউজ, বা ক্রচ তো কোনোদিন আমি ব্যবহার করিনি-_ 
এ ভঙ্গীতে ফটোও তোলাই*নি কখনো । (সহসা কি মনে পড়িতে ) 
ডাক্তার, এতক্ষণে একট। কথা আমার মনে পড়েছে । যেদিন অলঙ্কারের 
জন্য আমি অরবিন্দবাবুর কাঁছে যাই সেদিন তিনি বহুক্ষণ বিহ্বগভাবে 
আমার মুখের দিকে চেয়ে ছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম-- 
“আপনি আমায় চেনেন”? তিনি লজ্জিত হয়ে বোললেন ওটা তার 
ভ্রম। আমারই মৃত দেখতে তাঁর এক নিকট আত্মীয়া বহুদিন আগে 
মারা গেছেন । আমায় দেখে সেই স্মৃতি তার মনে জেগে উঠেছিল। 


স্থবিমল। বুঝেছি । এটা তাঁর কোন পরিচিত স্ত্রীলোকের ছবিই 

হবে। আপনাকে ধরবার অন্ত কোন পথ ন। পেয়ে এই ফটোর সাহাধা 

তিনি গ্রহণ করতে চেয়েছেন । 

সবিতা । এতে তাঁর সম্পূর্ণ নীরবতার কোন কারণ পাওয়া যায় না। 

ডাঃ স্থবিমল । অরবিন্দ সরকার চিরকুমার ব্যক্তি। তার নীরবতার পেছনে 
অনেক রহম থাকতে পারে । আমার মনে হয় তার এ নীরবতা চিরস্থায়ী 
হবে না। 

সবিতা । ( উঠিয়া) আপনার কাছে এসে আজকে এমন একট নৃতন 
রহস্যের সম্মুখীন হবো আমি ভাবতেও পারিনি। আজ আমায় বিদায় 
দিন, নিজেকে বড় দুর্বল মনে হচ্ছে। আপনার বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি 
কিন! জানি না--যদ্দি পেয়ে থাকি বিশ্বাস করুন, একমাত্র আপনারই 
সাহায্যের ওপর নির্ভর করে রইলাম । 

ভাঃ স্থবিমল। (সবিতার ছুই হাত ধরিয়া) আমার বিশ্বাস তুমি ফিরে 
পেয়েছ সবিতা, বল আর তা কোনদিন হারাবে না। 

সবিতা । (ডাক্তারের মুখের দিকে চোখ তুলিয়া) ডাক্তার! আপনি 

আমায় হারাতে দেবেন না। 

( পন্দ1 নামিয়া আদিল ) 


শব 


ভা, 


৭৫ 


তৃতীয় অন্ক 


প্রথম দৃশ্য 

(দ্বিতীয় অস্ক ১ম দৃশ্য বণিত প্রঃ তবফদাবেব পাঠকক্ষ। সময় সকাল নয়টা। 
প্রঃ তবফদাব টেবিলে সম্মুখে আপন আসনে বসি ঘন ঘন পাইপ 
টানিতেছেন। তীহাব পন্ধিনে একটি ছ।ইনগেব সুট্‌। মনে হম কোন একটা 
সমস্ত! সমাধানে তিনি মগ্ন । তাহা মুখাবমবে ক্ষণে ক্ষণে নানাতাবেব পবিবস্তন 
ঘটিতেছে। কখনও জ্দ্ম কুঞ্িত হইতেছে--কখনও মুছ মুছু হাদি ফুটিয়া 
উঠিতেছে। অত্যাধিক চাঞ্চল্যবশভঃ তিনি আমন ত্যাগ কবিষ। কসেকবাৰ 
পায়চাবি কৰিলেন। পনক্ষণেই টেবিল হইতে টেলিফে।নটী তুলিয়। লইলেন |) 


প্রঃ তরফদার | (টলিফোন ধরিয়া) হেলো ! হেভ. মি প্রিজ, পি, কে, 
টুজিরো পিক্স এইট্‌, ইয়েস।--হেলো! কে? আমি প্রঃ তরফদার 
কথা বলছি। ডক্টর রায়চৌধুরি আছেন কি?***তাকে একবার ফোনে 
আসতে বলুন দয়া করে ।--স্যা, আমি ধরে আছি। (কিছুক্ষণ তিনি 
ফোন ধরিয়া বসিয়া রহিলেন। ) হ্যালো, ডাঃ রায়চৌধুরি কথা বলছেন? 
হালো! স্থবিমল, গুড মনিং, তৃমি একবার সময় করে আমার এখানে 
আসতে পারবে? একটু প্রয়োজন আছে।-_কি বলছে? আজই 
আসতে পারবে, এখুনি--সে তো! আরও ভালো-_-আই সেল্‌ বি ভেরি 
গ্লেড! ও, এখানে আপবার জন্ত তুমি বেরুচ্ছিলে--হোয়াট এ কয়েন- 
সিডেন্স! আমি তোমার জন্য ডুইংরুমে অপেক্ষা করে রইলাম--এসো। 
(তিনি টেলিফোন রাখিয়া আমন গ্রহণ করিলেন ও টেবিলের ডুয়ার খুলিয়। 


১০ 


প্রথম দৃষ্ঠ ] মমোবৈজ্ঞাজিক 


রিভলভার ও কার্টিজ কেস বাহির করিলেন। কার্টিজ লইয়া রিভলভার 
লোড. করিবেন এমন সময় সবিতা দরজার কাছে আসিয়া ঈাড়াইল ) 

সবিতা । আসতে পারি বাবা? 

প্রঃ তরফদার। (সেদিকে না চাহিয়া ) হোয়াই নট? 

( সবিতা নিকটে আসিয়! দাডাইল। সে বিস্মিতভাবে রিভলভারেব দিকে 
চাহিল।) 

প্রঃ তরফদার । তোমবর]! কেমন আছ সবিতা? লোকনাথ কোথায়? 

সবিতা । আজ এখনে! তাকে দেখিনি । বোধ হয় নিজের ঘরেই আছেন। 
রিভলভার কি করবেন বাবা ? 

প্রঃ তরফদার | কিছু না, (হাসিলেন ) অতিথি সতকারে যদি প্রয়োজন হয় 
তাই লোভ, করে রেখে দিলাম। হ্যা তোমার সে গয়ন। বিক্রি করে 
আমি পচাত্বর হাজার টাক পেয়েছি-এখন এপারেটান্গুলো৷ এসে 
পৌছালেই আমি কাঁজ আরম্ভ করতে পারি। অবশ্য আগে এই ভাঃ 
স্ুবিমলের সমস্যাট। আমাকে সমাধান করতে হবে। তাকে এইমাত্র 
আস্তে বললাম। সে বোধ হয় এখুনি এসে পৌছাবে। (তিনি 
রিভলভার, কাটিজ কেস ড্রয়ারে রাখিয়া দ্িলেন। ) 

সবিতা। ডাঃ স্ুবিমল রায়চৌধুরি আমাদের কথামত কাজ না করলে আপনি 
কি তাকে সত্যই হত্য। করবেন বাবা ? 

প্রঃ তরফদার। (সবিতার মুখের দিকে চাহিলেন ) অন্ততঃ এই গয়নাচুরির 
ব্যাপারটা গোপন রাখতে অস্বীকার করলে--[ 51811 19072 0০ 
০001021190. তোমার মুখ বড় শুকনে। দেখাচ্ছে, একদিন তোমার 
কি কোন অন্ধ বিস্থথ করেছিল? 

সবিতা । নাবাবা। 

প্রঃ তরফদার । 10011 02 021:5005 10 £1], €তিনি সবিতার পিঠে 


৭ 


মনোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


হাত রাখিলেন।) একট! বিরাট কিছু গড়ে তুলতে হ'লে এসব সামান্য 
ছু'একট] €০চি বা 20০০াকে 10000101706 দিলে চলে না। যাই- 
হোক্‌, স্থাবমল বুঝি এসে পড়লো--আমি ড্রইংরুমে যাই। প্রথমে তুমি 
বা লোকনাথ তাকে দেখা দিও না। লোকনাথকে বনে দিও সে যেন 
তার নিজের ঘরেই থাকে। স্থবিমল তোমাদের কথা গোপন বাখতে 
চাইলে--আমি তোগাদের ডেকে পাঠাব। (তিনি উঠিয়া দ্রাড়াইয়া 
প্রস্থান করিতে করিতে বলিলেন) ভালই হয়েছে সুবিমল একট! 
21901176620 1001এ আসছে । 


(প্রঃ তব্ফদান ও সা্ধতাব প্রস্থান। ক্ণপবেই  বিছ্যতৎবেগে সবিতি। বে 
প্রবেশ করিল ও ডুরমার হহতে বিভলভাব বিন কবিয়া 8০198 কবিতে সু 
করিল, লোকনাথ খোল! দনজাৰ একবাৰ উঁকি দিল-_সবিত| দেখিতে পাইল 
না। সে বিভলভাৰ ও কাঁটিজ কেস হইতে সমস্ত গুলি বাভিণ কপ্ষ। আপন বস্ত্র 
লুকাইল। খালি কেস ও পিভলভাব পুনবাদ ভ্বাবে বাখিয়া ঢলিয। গেল। 
সবিতা যে দ্বার দিয়। পলাইল াঙ্গাব বিশবীত দ্বান দিবা লোকনাথ প্রবেশ কৰিল, 
তাহাব হাতে একটি মাত্র নিভলভাবেব কাত্ত,জ--সে কাত্তজটি ভাতে ভুলিয়া 
হানিতে হাদিতে টিবিলেব কাছে আপিল এবং জসাথ ভইন্ে পিভসভাৰ বাতিন 
কবির! লোড কব্বিতে কবিতে বণপিল )--“সবিতা | ৮০০ ৫1011 1097৮ 5০৪ 
100৬7 0898619661৩ 1175315011৩! (দে আবাব ভাসিতে হাসিতে বাভিব হইয। 
গেল । অল্পক্ষণ বঙ্গম্ঞ্চ শুন্য বহিল। নেপথ্যে একটা করুণ সুর যেন ভাষিতে 
তাসিতে দূরে মিলাইয়৷ গেল। ভাঃ স্ৃবিমলেব পিঠে ভাত বাখিস। প্রঃ তরফদার 
প্রবেশ কবিলেন। ) 


প্রঃ তরফদার | ০915 15 709 50এণুঠ, আমার এখানে তোমার এই 
প্রথম আগমন, কি বল স্থবিমল ? 
ডাঃ স্থবিমল। হা, আপনার পাঠকক্ষ দেখবার স্বযোগ আমার আগে ঘটেনি । 


৭৮ 


প্রথম দৃগ্ধ ] মনো বৈজ্ঞানিক 


প্রঃ তরফদার । বপৌ, স্থবিমল বসো--তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা 

আলোচন] করবার আছে । 
(প্রঃ তবফদ[র ও ডাক্তাব সুবিমল উপবেশন করিলেন। প্রঃ তরফদাব 
উদার হইতে পিগাবেব বাক্স ও সিগাবেটের টিন বাহিব কবিলেন ) 

প্রঃ তরফদার । 709৬০ 25 00 11106. 

ডাঃ স্বিমল ॥ [20956 009 510. এর কোনটাই আমি ব্যবহার করি না। 

প্রঃ তরফদার । 700৬ 50:2050., 48 05010195156 ৮101)006 51001:9 | 

(তিনি নিবে একটি সিগাব প্ববাইলেন ও ন্ুবিমলেব মুখের দিকে তীক্ষু 
দৃষ্টিতে চাহিলেন ) 

প্রঃ তরফদার । স্থবিমল! তোমায় আমি আজ কেন ডেকেছি জান? 

ডাঃ স্বিমল। ঠিক বলতে পারবো না । হয়তো! আপনার গবেষণার বিষজ্ধে 
কিছু বলবেন। 

প্রঃ তরফদার । 7২০2115 909. আমার গবেষণায় তোমার কতখানি আস্থ। 
আছে তা আমি সত্যি করে জানতে চাই। 

ডাঃ স্থবিমল। আপনি তো৷ জানেন আমি একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মতবাদ নিয়ে 
কাজ করি। আপনাদের কল্পিত মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধে আমার ওৎম্থক্য 
কম। আমি যতদুর জানি আপনি কয়েকজন পাশ্চাত্য পণ্ডিতের ধার 
অন্ুনরণ করে তাদের চেয়েও নৃতন কিছুর গবেষণায় মন দিয়েছেন। তাদের 
076০: আপনার গবেষণার ভিত্তিরপে কতখানি নির্ভরযোগ্য হতে পারে 
সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় আছে । তবে আপনার সাধন! ও অবুাস্ত 
পরিশ্রমকে আমি যথাসম্ভব শ্রদ্ধা করতে বাধ্য । র 

প্রঃ তরফদার । শুনে স্থথখী হলাম। আমি বদি তোমাকে আমার সঙ্গে 
যোগ দিতে বলি তাতে তুমি কি আপত্তি করবে? 

ডাঃ স্ুবিমল। ছুটে মতবাদ নিয়ে একসঙ্গে কাজ কর] যায় ন|। 


৭৪ 


মনোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


প্রঃ তরফদার । তা যায় না ঠিকই। কিন্তু আমার লেবব্ুটারীতে মাঝে 

মাঝে এসে তুমি যদ্দি আমায় সাহায্য কর তাতে এমন কি বিশেষ ক্ষতি 

হবে? তোমায় অনগরোধ করতাম না। আমার এতদিনের সাধনার ও 

পরিশ্রমের বস্তুকে যর্দি এ জীবনে সমাপ্ত করতে না পারি তৰে তাকে 

সমাপ্ত করবার ভার তোমার মত একজন উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে দিয়ে 

আমি নিশ্চিন্ত হতে পারতাম । সুবিমল ! ড/11] 5০9০ 015810106 

[00 ? 

স্ববিমল। আপনি আমায় ক্ষম1 করুন শ্যার। যে মতবাদে আমি বিশ্বাস 

করি না সে মতবাদের ওপর নির্ভর করে কোন গবেষণা আমার দ্বারা 

কেমন করে সমাঞ্চ হবে? | 

প্রঃ তরফদার । ( চুরুট ফেলিয়া পায়চারি করিতে আরম্ভ করিলেন) আমি 
তোমার অস্থবিধা বুঝতে পেরেছি । দেখো স্থবিমল, আমার এই সাধনার 
জন্য আমি সর্বস্ব ত্যাগ করেছি। একে সফল করে তুলতে হলে অজন্র 
অর্থ, অপরিমিত সহানুভূতির প্রয়োঞ্জন। কিন্তু আমার তেমন অর্থ 
নেই যা দিয়ে আমার [,9019018601গকে ০০12 করতে পারি । এর পর 
আমার প্রয়োজন তিন চার মাস বয়সের এক ডজন শিশু । এরাই হবে 
আমার গবেষণার বস্ত--এদ্রেরই ব্যবহারের গ্রতিক্রিয়াকে আমি সংযত 
করে স্থসঙ্গতভাবে প্রকাশ করতে সাহাধ্য করবো । এরাই হবে আগামী 
দিনের এক নৃতন মানুষ । এই সব শিশুদের কেও হয়তো আমায় শ্বেচ্ছায় 
দিতে চাইবে না। তাই আমি স্থির করেছি এমন একটা বৃহৎ ও 
মহৎ ব্যাপারের জন্য সমাজ চিত্রিত অন্যায়ের পথই অবলম্বন করবে । 
এ ছাড় আমার অন্য কোন উপায় নেই। 

ডাঃ স্থবিমল। আপনি কি সঙ্কল্ল করেছেন এই এক ডজন শিশু আপনি 
অপহরণ করবেন? 


ডাঃ 


পি 


প্রথম দৃষ্ত ] অমনোঠবজ্ঞানিক 
প্রঃ তরফদার । স্বেচ্ছায় কেউ দিতে না চাইলে আমায় বাধ্য হয়ে অপহরণ 


ডাঃ 


সে 


আস 


করতে হবে। 


স্থবিমল। এ পথ আপনি ত্যাগ করুন স্যার, আমি আপনাকে 
অন্থরোধ কচ্ছি। 


: তরফদার । (হাসিলেন) যে ফল লাভের আশায় আমি সারা জীবন 


তপস্ত| করলাম, নিজেকে পাখি স্থখ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করলাম, ন্মেহ, 
দয়া, মায়া, ধশ্ম এ সমস্ত স্থুকোমল প্রবৃত্তির মুখ গল! টিপে চিরকালের 
জন্য বদ্ধ করে দিলাম-_-মামীর সেই আশা আজ তোমার সামান্ত অনুরোধে 
ত্যাগ করবে? (তিনি স্থবিমলের কাছে গেল্নে) তুমি জান স্থবিমল, 
আমার মধ্যে সেই সব মৃত প্রবৃত্তির প্রেতাতআ্মাগুলো মাঝে মাঝে তাদের 
ছায়ামুত্ডি নিয়ে ভয় দেখাতে আসে, গুমরে গুমরে কাদে, দেখে আমার 
হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়--আমি মুখ বুজে বসে থাকি, কঠোরভাবে কন্ম 
করে যাই শুধু এ এক আশায়--নৃতুন মানুষ তৈরি করবো! সে মানুষ 
হিংসা করবে না, লোভ করবে না শুধু স্থ্টি করবে অপূর্ব, অভিনব-- 
(তিনি সহসা থামিলেন ও চেয়ারে বসিয়া পড়িলেন ) 


£ স্থবিমল। এই নোংর] পৃথিবীতে আপনার সে নবমানবের মৃত্যু ঘটতে 


বিশেষ বিলম্ব হবে না। 


প্রঃ তরফদার । তাদের মৃত্যুর পূর্বেই বেিয়ে আসবে আর এক দল, 


পূর্ববগামীদের বাচিয়ে তুলবে তারা-এমনিভাবে একদিন রাষ্ট্র গ্রহণ 
করবে আমার মতবাদ আর গ্রহণ করবে দেশের শিশুদের ভার। শিশ্তর 
হবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি, পিতা-মাতা! তাদের মানুষ করে তোলবার দায় থেকে 
পাবে অব্যাহতি । আমার স্বপ্র সেইদিন সফল হবে। 


ডাঃ স্থবিমল। আপনার স্বপ্রের বাস্তব ছবি আমি কল্পনাও করতে পারি ন|। 


৮১ 


মনোবৈজ্ঞান্নিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


প্রঃ তরফদাব। পারনা এইজন্যে যে তুমি আজ নিজেকে সাধারণ মানুষের 
সঙ্গে খাপ খাইয়ে ফেলেছ। তুমি চেয়েছে ৪010560161)0-সামগ্ুস্ 
ঘটাতে, আমি চাই সাধারণকে ভেঙ্গে এক অসাধারণ গড়ে তুলতে । এ 
কল্পনা নয়, হ্বপ্র নয়, সঠিক বাস্তব। মাছুষ এসেছিল--বর্ধবর মানুষ, যার 
সাথে পশুর বিশেষ প্রভেদ ছিল না, সেই মানুষ একদিন জঙ্গল হতে, 
পাহাড়ের গুহা হতে বেরিয়ে এসেছিল। আজ পধ্যস্ত সেই মানুষ 
আপনার পশুত্বের সঙ্গে লড়াই করে এসেছে, তার এক একটি লড়াইএ 
জয়লাভ এক একটি সভ্যতার চিহ্ন একে দিয়েছে । কিন্তু পশুত্ব পরাজিত 
হয়নি--মানষের লোভ, আত্মসাৎ, পাশবিক কলহ, যৌনাকর্ষণ আজও 
থামেনি । সে তার পশুর সত্বাকে সব কিছু অস্ত্রে যেমন অর্থে, বিলীসে। 
স্থরায়। নারীতে সজ্জিত করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চলেছে। 
এতে তার পরাজয় অনিবাধ্য। কোন দিনই সে তার মনুত্যত্বকে 
শক্তিশালী করবার জন্ত একতাবদ্ধ ভাবে চেষ্টা করতে চায় না। সে আজ 
আনবিক শক্তিকে আয়ত্ত করেছে কিন্ত সেই অন্গপাতে লোভ ও 
ভ্রাতৃহত্যার পশ্ু-গ্রলৌভনকে সংযত করতে পারেনি--সে বিষয়ে তার 
কোন আগ্রহও নেই। আমার হুষ্ট সেই মহামানব নিশ্চয়ই জয়ী হবে। 
একদিকের গবেষণাগারে বিরাট বাহ-শক্তি মানুষের করায়ত্ হবে অন্য 
দিকের গবেষণাগারে মাধ নিজের ব্যবহারকে করবে আয়ত্ত--পৃথিবী 
হবে নি, সুন্দর, হাস্তময়ী । এই নৃত্তন গবেষণাগার গড়ে তুলতে যদি 
আমি কোন অন্তায় পথ গ্রহণ করি তবে বর্তমানে তা সম্যক অন্তায় বলে 
প্রচারিত হলেও সুদুর ভবিষ্যতে সর্বোত্তম ন্যায় বলেই কথিত হবে। 

ভাঃস্ুবিমল। আপনার কল্পনা সত্য হতে পারে, জগতে কাল্লনিক ব্যকি 
মাত্রের মনেই এমন ছবির উদয় ম্বাভাবিক, কিন্তু বর্তমান পরিবেশে 
আপনার স্বপ্রকে বাস্তবে ব্ূপ দেবার চেষ্টা করলে আপনি পাগল বলেই 


৮ 


প্রথম দৃষ্ত ] অমোটৈজ্ঞানিক 


প্রমাণিত হবেন। আপনি মানুষের ক্রম-্বিকাশের ধারাকে অস্বীকার ক'রতে 
চলেছেন, মানুষ আপনাকে ক্ষমা করবে না। পশু-শভিকেই এখন মানুষ 
শ্রেষ্ট শক্তি বলে মনে করে--আপনি সেই শক্তির সাহাধ্য গ্রহণ করে 
মনুষ্যত্বের বক্তৃতা দিলে কেউ আপনার কথায় কান দেবে না। আপনি 
প্রবর্চক, ভণ্ড ও পরিশেষে পাগল বলেই পবিগণিত হবেন। আমি 
আপনাকে শ্রদ্ধ৷ করি, আবার অন্ুবোধ কচ্ছি স্বপ্ন ও বাস্তবের সীমারেখা 
মুছে ফেলবার চেষ্টা করবেন না। সেদিনের এখনে বিলম্ব আছে। 

প্রঃ তরফদার । তুমি বলতে চাও, আমার সার। জীবনের কৃচ্ছ-সাধনা--তার 
কোন মুল্যই জগৎ দেবে না? সামান্য অর্থাভাবে আমার সবকিছু নষ্ট হয়ে 
যাবে? 

ভাঃ স্ুবিমল। নষ্ট হবে না। আপনার ভাবধারাকে আপনি আগামীকালের 
মান্ষের জন্য প্রকাশ করে যান। ন্থবিধাজনক পরিবেশে আপনার 
সাধনাকে তার! কোনদিন বাস্তবে পরিণত করলেও করতে পারে। 

প্রঃ তরফদার । না, না, তা হয় না স্ুবিমল-সে আমি পারবো না, 
আমার মৃত্যু পথ্যস্ত চেষ্টা করতে আমি ভয় পাবো না। 

(সহসা! সবিতার প্রবেশ ) 

সবিতা । বাবা! বাবা! আমিও অনুরোধ কচ্ছি এ অন্তায় থেকে আপনি 
বিরত হো”ন্‌। ভাঃ রায়চৌধুরির কথা শুন্ছন। 

প্রঃ তরফদার । (পরম বিন্ময় ও ক্রোধে উঠিয়া ঈাড়াইলেন ) সবিত। ! 
মবিতা! [০ 0816 5০০ 1. 

ভাঃ স্থবিমল। আপনি ব্যস্ত হবেন না, সবিতা দেবীর সঙ্গে আমার আগেই 


দেখা হয়েছে। 
প্রঃ তরফদার । ডক্টর হ্থবিমল! তুমি সমগ্তই জেনেছে? 


৩ 


সজোবৈজ্ঞান্দিক [তৃতীয় অঙ্ক 

ডাঃ স্ুবিমল। হ্যা আমি সমস্তই জেনেছি। আপনি নিজেকে সংযত করবার 
চেষ্টা করুন। আপনার অপবাদ আমাদের দেশের প্রতিটি শিক্ষিত 
বাক্তিকেই অপমানিত করবে। 

( সবিতা! প্রঃ তবফদাবেব পায়েব কাছে নতজান্থ হইয়া বসিয়া পডিল ) 

সবিতা । এমন করে নিজের সর্বনাশ আমি তোমায় করতে দেবো না বাবা ! 

প্রঃ তরফদার । বুঝেছি, তোমবা আমার বিরুদ্ধে আগেই যড়যন্ত্র করেছে! । 
(তিনি সবিতাকে পায়ের নিকট হইতে ছু ডিয়া দিলেন ) ০ঘ, 06৪০1০০- 
10705 9/01091), তোমায় আমি নিজে হাতে মানুষ করে তুলেছি--- 
আমার সমঘ্ত শক্তি দিয়ে আমার মতবাদে দীক্ষিত করেছি--আজ তুমিই 
আমার বিরুদ্ধে ধরাড়িয়েছে? কে তোমায় মন্ত্রণা। দিয়েছে? (তিনি 
্ন্ধ শার্দলের মত সবিতাব সম্ুখীন হইলেন । সবিত৷ প্রঃ তরফদারের 
পদাঘাতে ছিটকাইয়া পড়িয়াছিল--ডাঃ ব্ববিমল তাহাকে তুলিয়া 
ধরিলেন । ) 

সবিতা । (ডাক্তারের হাত হইতে নিজেকে মুক্ত করিয়। দৃপ্ত কে) তোমায় 
বাধা দেওয়ার অধিকার আমার বয়েছে বাবা, আমি তোমার মেয়ে! 

প্রঃ তরফদার । ( পাগলের মত হাসিয়া উঠিলেন ) মেয়ে? আমার মেয়ে ? 
ড/০77061091 | 500 06172810 0০ 106 00 09870810061) ৪ 0108 0: 
0৫ 076 91005 ! ও মুখ আর আমায় দেখিও না, বেরিয়ে ফাও, বেরিয়ে 
যাও আমার স্ুমুখ থেকে-তোমাদের সাহায্যের প্রত্যাশা আমি করবে! 
না। লোকনাথ! আমার লোকনাথ এখনে! রয়েছে--তাকে নিয়েই 
আমি অগ্রসর হবো । 

ডাঃ স্থবিমল। আপনি ক্রোধে উ্ন্নতু না হয়ে আমার কথা একটু স্থির হঙ্কে 
শুনুন। 

৮৪ 


প্রথম দৃষ্ধ ] মনো বৈহ্তা নিক 


প্রঃ তরফদার । (চিৎকার করিয়া ) ] 525, 5০৮ 8০৮ ৫৮2 2020 1166, 
[66 1006 102 210186. 

(ডাঃ স্ুবিমল সবিতাকে বাহিবে লইয়া গেলেন । প্রঃ তরফদার নিজেকে 
শাস্ত করিবাব চেষ্টা কবিলেন। ওহাব মুখাবয়ব বীভৎস দেখাইতেছে, তিনি আপন 
মনেই বলিতেছেন । ) 

প্রঃ তরফদার । 10:2201521009 1! আমি ভুল করেছিলাম । ড৬৬/০022618 
216 15253 06201761035. কিন্তু লোকনাথ? সে নিশ্চয়ই আমার 
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেনি, না| না, সে তা পারে ন। (তিনি কলিংবেলে 
চাপ দিলেন, বেয়ার। আলিয়! প্রবেশ করিল ) লোকনাথ বাবুকো জলদি 
বোলাও। (তিনি উঠিয়া পুনরায় পায়চারি আরস্ত করিলেন । ) 

( ধীবে ধীবে লোকনাথ প্রবেশ কবিল ) 

লোকনাথ । আপনি আমায় ডেকেছিলেন? 

প্রঃ তরফদার । (লোকনাথের দিকে চাহিলেন, আপন মনোকল্‌ চোখে 
দিলেন। লোকনাথের কাছে আগাইয়া গিয়া! অস্ফুটম্বরে ) লোকনাথ ! 
লোকনাথ! 145 6051 (তিনি উদ্‌ভ্রান্তের মত লোকনাথের মাথায় 
মুখে হাত বুগাইয়া আদর করিলেন। তাহার সর্ববাজ ভাবাবেগে থর, থর, 
করিয়া কাপিতেছে। লোকনাথ পরম বিন্ময়ে বিস্ফারিত নেত্রে তাহার 
ভাব-ভঙ্গিটা দেখিতেছে ) 10902%6 1007, বোস। (লোকনাথ বসিল ) 
লোকনাথ |! 100০ 503. 1000৬ 1১০ ০০ 216? 

লোকনাথ । (বিস্ময়ে সে উঠিয়া দাড়াইল ) আপনি কি বলছেন? আপনাকে 
এত বিচলিত দেখাচ্ছে কেন? আপনি স্থির হয়ে বস্থন। 


প্রঃ তরফদার । আমি বিচলিত হইনি, ঠিকূই বলছি। লোকনাথ তুমি 
জান তোমার পিতা কে? 


মনো বৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অস্ক 


লোকনাথ । আপনার কাছে শুনেছি আমি আপনার বন্ধু পরলোৌকগত ডাঃ 
হরিশচন্ত্র সেনের পুত্র । কিন্ত সে কথার আজ কি প্রয়োজন? 


প্রঃ তরফদার। আজ সে কথার সত্যিকারের প্রয়োজন আমি অনুভব 
কচ্ছি। তুমি জান সবিতা '্ডাঃ স্থবিমলের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমার 
বিরুদ্ধাচরণ করেছে ? 

লোকনাথ । জানি। 

প্রঃ তরফদার । জান? তুমিও জান? কেমন করে জানলে? তুমিও 
কি তবে? 

লোকনাথ । না, আমি বিশ্বাসঘাতক নই । সবিতাদেবী নিক্জেই আমায় 
একদিন বলেছিলেন । 


প্রঃ তরফদার । আমায় এ কথা বলনি কেন? 
লোকনাথ। আপনাকে বলবার সধোগ পাইনি । কাল রাত্রে আপনি এখানে 
ফিরেছেন । 


প্রঃ তরফদার । লোকনাথ । আমি ষদি বলি সবিতা আমার মেয়ে নয় 
তাকে কি তুমি খুব বিস্মিত হবে? 

লোকনাথ । হওয়া স্বাভাবিক। সবিতা দেবী ধ্দি আপনার মেয়ে নন্‌ তবে 
তিনি কে? 


প্রঃ তরফদার। সে কেউ নয়। তার কোন পরিচয় নেই। একটা 
সমাজের আবঙ্ঞনীকে আমি আমার মেয়ে বলে পরিচয় দিয়ে নিখুঁত 
সুন্দর ভাবে গড়ে তুলেছিলাম ৷ সবিত! সেই মেয়ের দাবী তুলেই আজ 
আমার সব কিছু ব্যর্থ করে দ্দিতে বসেছে । যাক্‌, তা সম্পূর্ণ ইতিহাস 
বলবার অবসর আমার এখন নেই। তোমাদের ছুজনকে আমি আমার 
সাধনার জন্তই গড়ে তুলেছিলাম--কোনদিন তোমরা বিশ্বাসঘাতকতা) 


৮৬ 


৷ প্রথম দৃস্ত ] অমমোবৈজ্ঞামিক 


করতে পারো এ আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। সবিতা আমায় ত্যাগ 
করেছে, লোকনাথ তুমিই আমার একমাত্র ভরসা 


লোকনাথ । আমার সম্বন্ধে আপনার বিচলিত হবার কোন কারণ নেই, আমি 
আপনাকে কোনদিন ত্যাগ করবে৷ না। 


প্রঃ তরফদার । সেকথা আমি জানি। (তিনি লোকনাথের কাধে হাত 
রাখিলেন।) লোকনাথ, আমি তোমায় আজীবন বঞ্চন। করে এসেছি, 
নিজেও বঞ্চিত হয়েছি, তাই ভয় হয় একদিন সে কথা কোন প্রকারে 
জানতে পারলে তুমি আমার ওপর বিশ্বাস হারাবে। সবিতা আজ 
আমায় ত্যাগ না৷ করলে এ কথা বলার প্রয়োজন হতো না। 


লোকনাথ । আপনি আমায় কোনদিন বঞ্চনা করেন নি। আমার দিক 
দিয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। 

প্রঃ তরফদার । তুমি জান না তাই একথা বলছো । তুমি চিরকাল জেনে 
এসেছে! আমার বন্ধু ডাঃ সেন তোমার পিত। কিন্তু-_কিস্ত--লোকনাথ-.- 
এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা । 


লোকনাথ । সম্পূর্ণ মিথ্যা! তবে আমার পিতৃ-পরিচয় কি? 

প্রঃ তরফদার । পিতা-পুত্রের সম্পর্ক বজায় রেখে তোমায় এমনভাবে গড়ে 
তুলতে পারতাম না বলেই আমায় এই বঞ্চনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল। 
( লোকনাথ কিছুই বলিতে পারিল না, নীরব বিস্ময়ে চাহিয়া বহি) 
বিশ্বাস করতে পারছে না, ভাবছে! বাপ হয্বে কেমন করে নিজের ছেলের 
কাছে সারাজীবন আত্মগোপন করে রইলাম। শুধু আমার সাধনার জন্ত-_ 
আমার গা আমার পুত্রের চেয়েও বড়। সেই নাধনাকে সফল করবার 
প্রয়াসে তোত্ীয় একটি বন্ত্রূপেই আমি গড়ে তৃলেছি। ভেবেছি পরিচয় দিলে 
তুমি আমার অবাধ্য হবে, তর্ক করুবে। তাই পথের আবঙ্জনীকে নিজের 





৮৭ 


মনো বৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


সন্তান বলে পরিচয় দিয়ে তোমাম্ম করেছি বঞ্চনা, নিজেকেও করেছি 
বঞ্চিত। আমার কথ: যদি তোমার সম্পূর্ণ বিশ্বাদ না হয়, আমি তোমায় 
প্রমাণ দেখাব । ( তিনি চাৰি দিয়া আলমারী খুলিয়া একটি এল্বাম ও 
কতকগুলি চিঠি বাহির করিলেন । ) আমি যখন জাম্বানীতে তখন এদেশে 
মামার বাড়ীতে তোমার জন্ম হয়। তোমার ম সে সংবাদ আমায় পত্রে 
জানিয়েছিলেন--এই সেই পত্র আর এই এল্বামে তোমার মায়ের সঙ্গে 
তোলা তোমার ছোটবেলার ছবি। তুমি যখন ছয়'মাসের শিশু তখন 
তোমার মায়ের মৃত্যু ঘটে । (লোকনাথ চিঠি ও এল্বাম নীরবে দেখিতে 
লাগিল ) সাংসারিক-জীবন যাপন করবার ইচ্ছা আমার কোনদিন ছিল 
না। তোমার মায়ের ওপর আমি বহু অত্যাচার অবিচার করেছি, সে 
কথা আলোচনা! করে আজ কোন লাভ নেই। আজ শুধু এসো তুমি, 
আমি, আমরা পিতা-পুত্র--সমস্ত বাঁধা, বিপত্তি অতিক্রম.করে জগতে এক 
নবহ্টির সুচনা করে যাই। (লোকনাথ স্থিরভাবে নতনেত্রে ধ্াড়াইয়া 
রহিল ) চুপ করে রয়েছ কেন লোকনাথ? তোমায় আমি সাধারণ ছেলের 
মত শিক্ষা দিইনি যে আজ তুচ্ছ পিতা-পুত্রের স্ন্ধ নিয়ে তুমি অভিমান 
করবে। (তিনি তাহার কাধে ঝাকুনি দিলেন) 

লোকনাথ। (তাহার মুখাবন্নব সম্পূর্ণ পরিবন্তিত হইয়াছে ) আমায় আপনি 
ক্ষমা করুন, এই গবেষণায় আপনাকে আমি সাহাধা করতে পারবো ন1। 


প্রঃ তরফদার। ( বিচলিতভাবে ) লোকনাথ । 4১16 ০] £010£ 0০ ৮০৪ 
18811 1280 [ এই কথা শোনবার প্রত্যাশায় কি আজ তোমায় 
সত্যিকারের পরিচয় দিলাম ? 

লোকনাথ । (দৃঢ়কঠে ) এ পরিচয় দিয়ে আপনি তুল করেছেন। আপনি 
আজ সত্যই হূর্বল হয়ে পড়েছেন । 


৬৮ 


প্রথম দৃষ্থ ] | হমোটিেজামিক 

প্রঃ তরফদার | আমি দূর্বল হয়ে পড়িনি, তোমার দাহাধ্য ও বিশ্বাস 
পূর্ণমাত্রায় পাব বলেই আজ বাধ্য হয়ে তোমাকে আমাদের পরিচয় 
জানিয়েছি। 

লোকনাথ । যে মতবাদ পুত্রকে পিতৃ-পরিচয় দিতে ভয় পায়, যে মতবাদ 
এতখানি দূর্বল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত সে মতবাদের জন্ত একটির পর 
একটি অন্যয়ে আমি আমার পিতাকে লাহাধ্য করবে! না। 


প্রঃ তরফদার। (আসন্ন হতাশায় মরিয়া হইয়া) 91010217051 08! 
আমি যদি সে পরিচর ফিরিয়ে নি। একটা সামান্য ছবি ও চিঠি থেকে 
প্রমাণ হঘনা যে আমি তোমার পিতা। আমি তোমার ব্যবহারকে 
পরীক্ষ! কচ্ছি মাত্র । 19013 1796 2, 901, ০0106 1 [66 03 0:০9০০. 

লোকনাথ । সে পরিচয় আপনি আর ফিরিয়ে নিতে পারেন না। ছবি ও 
চিঠিকে অবিশ্বান করলেও আপনার মুখে যে ভাবটুকু পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে 
তাকে তে! অবিশ্বাস করতে পারবো না| 

প্রঃ তরফদার । (পুনরায় অগ্র্তিস্থভাবে ) তুমি আমার মুখে পিতৃত্বের 
ছাপ দেখতে পাচ্ছে! ? 

লোকনাথ । স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। 

গ্রঃ তরফ্ৰার। 14161 ০৪ 2০ ৪. 02112 1161 1] ডাক্তার স্থৃবিমলের 
প্ররোচনায় তুমিও আমার বিরুদ্ধে বডযন্ত্র করেছে৷ । বিশ্বাসঘাতক ! 
51001! তিনি উন্মাদের মত পায়চারি করিতে করিতে লোকনাথের 
সম্মুখে গিয়া ধ্বাড়াইলেন ) কিন্ত এর পরিণাম কি জান ? 


লোকনাথ। পরিনাম ভেবে আমি আমার কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হবে৷ না। 
প্রঃ তরফদার । কর্তব্য! কাকে তুমি কর্তবা বল লোকনাথ ? 


৮৪৯ 


মনমোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় তন্ব 


লোকনাথ । গবেষণার নামে প্রতিদিন আপনি যে জাল, জুয়াচুরি ও হত্যার 
আশ্রয় নিতে চলেছেন ত! থেকে আপনাকে রক্ষা করাই আমার কর্তব্য । 


প্রঃ তরফদার । আমি জালিয়'ৎ, চোর, হত্যাকারী--এই পরিচয়ই তি 
এতকাল আমার পেয়েছো ! কিন্তু এ কর্তব্যজ্ঞান তোমার আগে কোথায় 
ছিল? 

লোকনীথ। এর আগে আপনাকে বাধা দেবার অধিকার আমার ছিল না । 

প্রঃ তরফদার । আজ আমার পুত্রএই পরিচয়ে সে অধিকার তোমার 
জন্মাল! তুমি কি জান না আমার সাধনা, আমার মতবাদ পুত্রকেও ক্ষমা 
করবে না । 

লোকনাথ । আমি জানি। 

প্রঃ তরফদার । তবু তুমি আমার বিরুদ্ধাচরণ করবে? 

লোকনাথ ;) আপনাকে যথেষ্ট সর্বনাশ করবার স্থযোগ দেবো না। 


প্রঃ তরফদার। এক মুহুর্তে তুমি ভেবেছো৷ আমার সারাজীবনের গতিরোধ 
করে দেবে। (তিনি ড্য়ার হইতে রিভলভার বাহির করিলেন ) আমি 
আদেশ কচ্ছি--এই রিভলভার গ্রহণ কর, আমাদের প্রধান শত্রু সথবিমলের 
হত্যার ভার আমি তোমায় দিলাম । 

লোকনাথ । ডাঃ স্থবিমল শত্রু নন্। তিনি আপনার একান্ত শুভাকাহ্ী। 
আমি তাঁকে বিনা দোষে হত্যা করতে পারবে! না। 

প্রঃ তরফদার । আমার আদেশ আজ অমান্য করবে? (তিনি রিভলভার 
তুলিয়া লোকনাথকে লক্ষ্য করিলেন, তাহার মুখ বীভৎস নিষ্রতাঁয় ও 
হতাশায় ভয়ঙ্কর হইয়া! উঠিতেছে ) তবে প্রস্তত হও । 

লোকনাথ । (ছুই পাপিছাইয়া ) বাবা! আপনি আমায় হত্যা করবেন? 
( তাহার মুখে ভয়ের চিহু পরিশ্ফুট হইল । ) 


৮6 


প্রধম দৃষ্ত ] মনোঠবজ্ঞানিক 
প্রঃ তরফদার । ( উন্মাদের মত হাসিয়া! উঠিলেন ) সারাজীবন ধরে যে 
পিতৃত্বকে আমি গল] টিপে হত্য। করে এসেছি আজ শতবার ডাকলেও 
তার সাড়া পাবে না। যেজন্য সব কিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছি 
আমার সেই আজীবনের সাধনাকেই তুমি বিফল করতে চলেছো--মামার 
এই বার্থ সাধনার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে-_পুত্র-কলত্র নিয়ে সাধারণ জীবন 
আমি যাপন করতে পারবো না। 
( লোকনাথ পিছু হটিতে লাগিল ও তিনি উপবোক্ত কথ! বলিতে বলিতে রিতল- 
ভাব লক্ষ্য কবিয়। অগ্রসর হইলেন) 
লোকনাথ । বাব! বাবা! আপনি অপ্রকৃতিস্থ হয়েছেন। সম্পূর্ণ জ্ঞান 
হারিয়ে ফেলবেন না- আপনি স্থির হোন । 
প্রঃ তরফদার । 1121601 1 001051:8601: 1 4 10910 01 026 
11010091906. 99627 171 07০ 151080017% 0£ 02001 €( বপিতে 
বলিতে তিনি কক্ষের দরজার নিকট লোকনাথকে পিছু হটাইয়! লইয়া 
গেলেন। লোকনাথ--“বাবা” বলিয়া ছুটিয়া পলাইল-_গ্রঃ তরফদারও 
ছুটিয়া তাহার অনুসরণ করিলেন। নেপথ্যে রিভলভারের প্রবল শবে 
সঙ্গে সঙ্গে “বাবা” এই আর্ত চিৎকার শোনা গেল। পরক্ষণেই ঝড়ের 
বেগে প্রঃ তরফদার সম্পূর্ণ উদ্ভ্রান্তের মত প্রবেশ করিলেন ) [,০9%[ 
[0561 িডাডে (106 19961 4৬ £:596 1509 001: 19017081015 
131051 যা কিছু গড়লাম সবই ভেঙ্গে গেল, শুধু বাকি আছি আমি। 
(তিনি পাভলোভ. ও ওয়াটুসনের বাইট দুইটি সজোরে মেবেতে নিক্ষেপ 
করিলেন। ) শয়তান ! শয়তানের কাছে হ্ষ্রিকর্তা হেরে গেলেন। 
( তিনি রিভলভার নিজের বুকে স্থাপন করিয়া ট্রগারে চাপ দিলেন কিন্তু 
গুলি বাহির হইল না-ড্রন্নার খুলিয়া কার্তজ কেস বাহির করিলেন কিন্ত 
তাহ। শৃন্ত দেখিয়া ক্রোধে রিভলভার ছুড়ি্া দিলেন ও টেবিল হইতে 


৪১ 


অনোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অন্ক 


ফোন তুলিয়া ধরিলেন। ) হেলো, হেলো, লালবাজার। আমি পুলিশ- 
কমিশনারকে চাই। হ্যা আম প্রফেলার প্রমথনাথ তরফদার, ২২১ 
গড়িয়াহাটা রোডের বাড়ীতে আমার একমাত্র পুত্র শ্রীঘমান লোকনাথ 
তরফদারকে এই মাত্র খুন করেছি, আমি আত্মসমর্পন করতে চাই। 
(ফোন ফেলিয়া তিনি টেবিলের উপর পড়িয়া গেলেন, ঠিক এই সময় 
সবিতা ও স্থবিমল ব্যন্তভাবে প্রবেশ করিল সবিতার মাথার চুল এলো- 
মেলোভাবে মুখের ওপর পড়িয়াছে। ডাঃ স্থুবিম্প প্রঃ তরফদারকে 
ধরিয়] চেয়ারে বসাইবার চেষ্টা করিলেন । ) 

সবিতা । (প্রঃ তরফদারের নিকটে গিয়া) বাবা! বাবা! এ তুমি কি 
করলে বাবা? (তাহার ক অশ্রভারাক্রান্ত হইয়া আসিল) এ তুমি 
কেন করলে বাবা? তোমার রিভঙগভাবে কে গুলিদ্িল? আমিষে 
সব গুলি বার করে রেখেছিলাম । 

ডাঃ স্বিমল। (প্রঃ তরফদারের অবস্থা পরীক্ষা করিয়া) সবিতাদেবী, 
একটু জল! 

(সবিতা যাইতেছিল-_প্রঃ তরফদার ধীরে ধীবে টেবিলে ওপর উঠিয়। বসিলেন 
_ভ্ঠাহাব মুখে অব্যক্ত বেদনা পরিস্ফুট | ) 

প্রঃ তরফদার । (সবিতা ও ডাঃ স্থবিমলের দ্রিকে চাহিয়া ) কে সবিতা ? 
কথবিমল? তোমরা! জান? তোমরা শুনেছ ? ভগবানের স্থন্দর স্থট্রিকে 
শয়তান এসে বার বার ভেঙ্গে দিয়েছিলো! । (তাহার চোখ দিয়া জল 
গড়াইয়া পড়িল )। 

ডাঃ সবিমল। আপনি কেন অযন করে জ্ঞান হারালেন? 

প্রঃ তরফদার। (ভাক্তারের দিকে চাহিয়া ম্লান হাসি হাসিলেন ) জ্ঞান 
হারালাম কেন? সে কথা জগৎকে বলে যাব সেইদিন যেদিন প্রকাশ্ঠ 
আদালতে আমার পুত্রহত্যার বিচার হুবে। 


৯২ 


দ্বিতীয় দৃপ্ত ] অমোইিবজ্ঞানিক 
ভাঃ স্থবিমল। আপনার পুত্র! 


প্রঃ তরফদার। হ্যা আমার পুত্র লোকনাথ । (তিনি সহসা সবিতা ও 
স্ববিমলের হাত এক সঙ্গে চাপিয়! ধরিলেন ) চিরকাল আমি আদেশ করে 
এসেছি, জাজ তোমাদের ছুজনকে অনুরোধ করছি--তোমরা চেষ্টা করো, 
প্রাণপণ চেষ্ট। করো, আমার েন--আমার যেন প্রাণদণ্ড হয়। 

( সবিতা “বাব।” বলিষা প্রঃ তবফদারেব বুকে মাথ|। বাখিয়া ফোৌফাইয়! কীদিয়া 
উঠিল। প্রঃ তবফদাৰ তাহাব মাথায় ভাত দিবা নীববে সাম্বনা দিতে 
লাগিলেন । ডাঃ স্রবিমল নতমস্তকে দাড়াইষা বহিলেন। পর্দা নাবিয়' 
আসিল ।) 


দ্বিতীয় দৃশ্য 


(সেসান জজেব আদালত । জজ, উপবিষ্ট। একপাশে জুরিগণ বসিয়৷ আছেন । 
জজেব সম্মুখে পাবলিক প্রসিকিউটাব মিঃ লাহিড়ি ও আসামী পক্ষের ব্যারিষ্টাৰ 
মিঃ বোস্‌ বসিয়া আছেন। আসামীব কাঠগডায় প্রঃ তবফদাব_তীাহাব 
কাচাপাকা চুল এলোমেলো, পরণে সেই ছাই বঙের সুট.। কোটটি খুলিয়া 
ষে চেম়াব তাহাকে বসিতে দেওয়া হইয়।ছে তাহাবই হাতলে বাখিয়াছেন। 
সাদা সার্টেব ওপব ধূসব টাইখানি অসংলগ্রভাবে বিকৃত হইয়াছে। তাহার 
মুখাবয়বে একটা নীবব যন্ত্রণা গম্ভীব উদাসীনতায় পর্যবসিত। দৃষ্টি দেখিয়া 
মনে হয় আদালতের বাহিবে কোন অজানা জগতে তিনি বিচরণ করিতেছেন। 
প্রঃ তবফদারেব অনতিদূবে অরবিন্দ সরকার ও সবিতা দাঁড়াইয়া আছে। 
অববিন্দ সরকারেব মস্তক অবনত, তাহার মুখ ভাঁল করিয়া দেখা যাইতেছে না। 


৪৩ 


অনেণবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অন্ধ 
সবিতা এফ একবার প্রঃ তরকদাবের দিকে চাহিতেছে ও সকলের অসাক্ষাতে 
গোপনে কমাল দিয়া চোখ মুছিতেছে। শ্রোত৷ ও দর্শকদের আঙনে ষথাক্রমে 
ডাঃ সুবিমল রায়চৌধুবি, বিশ্বনাথ সরকার, রনেন ও অমলকে দেখা যাইতেছে । 
প্রঃ তবফদারেব বিপবীঃত ডকেব নিকট পুলিশ ইনস্পেক্টার দাঁড়াইয়া আছেন। 
একজন আগ্নেয়ান্ত্রধাবী কনেষ্ট বল আসামীর প্রহবায় নিযুক্ত । ) 
( সমস্ত আদালতে একটা অস্ফুট কোলাহল উত্থিত হইতেছিল। ) 


জঙ্ত,। (তাহার হাতুড়ি পটিয়া) সাইলেন্স! সাইলেম্স! লেট, আস্‌ 
প্রসিড. মিঃ লাহিড়ি। 
(পাবলিক প্রসিকিউটাব মিঃ লাহিড়ি উঠিয়া! বক্ত.তা আরম্ভ করিলেন )। 


মিঃ লাহিড়ি। মাই লর্ড! আমরা আজ যে মকোদ্দমার সম্মুখীন হয়েছি 
ত1 অত্যন্ত জটিল ও রহন্যময়। বর্তমানে আমি আমার সত্য ওন্যায় 
যুক্তি প্রয়োগে এবং আমার শিক্ষিত বন্ধুবরের সহায়তায় এই বহম্তজাল 
ছিন্ন করবার চেষ্টা করবো । এই যুক্তির দ্বারা আমি যে সিদ্ধান্তে 
উপনীত হবো তাই আপনার ও জুরি মহোদয়গণের সম্মুখে সুক্ষ বিচারের 
জন্য উপস্থাপিত করবো । 
উপস্থিত মামলার বিবরণ সম্বন্ধে পুলিশের সাক্ষ্যে প্রকাশ প্রঃ 
তরফদার তার কন্যা মিস্‌ তরফদার ও অধুনামৃত লোকনাথ সেনকে 
দিয়ে অদ্ভুত কৌশলে প্রতারণার আশ্রয়ে অরবিন্দ সরকার নামক 
অলঙ্কার বিক্রেতার নিকট হ'তে প্রায় আশী হাজার টাকা মূল্যের গয়ন। 
'আত্মসাৎ করেন। কিভাবে মানসিক চিকিৎসক ডাঃ স্থুবিমল রায়- 
চৌধুরি প্রঃ তরফদারের বাড়ী বেড়াতে গিয়ে মিস্‌ তরফদার ও 
লোকনাথ সেনকে সনাক্ত করেন ও কেমন করে পুলিশের সাহায্য না 
নিয়েই গ্রফেসার তরফদারকে এই অন্যায় থেকে নিরঘ্ত করবার 


৯৪8 


বিতীয দৃষ্ত ] হনোটৈভ্ঞালির 


ঠেষ্টা করেন সে কথা আপনার! পূর্ব্ব দিনই ভাক্তার রায়চৌধুরির সাক্ষ্য 
অবগত হয়েছেন। ডাঃ রায়চৌধুরির উদ্দেশ্য বিফল হয় এবং তিনি 
পুলিশের নিকট সমস্ত বিষয় জ্ঞাপন করবার পূর্বেই প্রফেসার তরফদার 
লোকনাথ সেনকে রিভলভারের গুলীতে হত্যা! ক'রে পুলিশের নিকট 
আত্মসমর্পণ করেন । পুলিশের নিকট প্রঃ তরফদার লোকনাথ সেনকে 
নিজের পুত্র বলে পরি5য় দিয়েছেন কিন্তু সে বিষয়ে কোন প্রমাণ তিনি 
উপস্থিত করতে পারেন নি। সমস্ত ঘটন] পর্যবেক্ষণ করে আমি এই সিদ্ধান্তে 
উপনীত হতে পারি যে অলঙ্কার আত্মসাতের অব্যবহিত পরে অলঙ্কার- 
বিক্রীত অর্থ নিয়ে প্রঃ তরফদারের সঙ্গে লোকনাথের কলহ হয় এবং 
সে কলহ এতই তীব্র আকার ধারণ করে যে প্রঃ তরফদার লোকনাথকে 
স্বহস্তে খুন করতেও দ্বিধা বোধ করেন না। মত লোকনাথকে পুত্র বলে 
পরিচয় দিয়ে তিনি কেবলমাত্র আমাদের অনুমান ও যুক্তিকে বিভ্রান্ত করে 
তুলতে চেয়েছেন । 


জজ.। (প্রঃ তরফদারের প্রতি ) প্রঃ তরফদার! আপানি লোকনাথ 
সেনকে হত্যা করে তাঁকে নিজের পুত্র বলে পরিচয় দিয়েছেন কেন? 


প্রঃ তরফদার । উঠিয়া দাড়াইলেন) লোকনাথ আমার পুত্র। তাকে 
আমি নিজে হাতে খুন করেছি! আপনি আমাকে প্রাণদণ্ডের আদেশ দিন। 


জজ | লোকনাথ সেন চিরদিন আপনার বন্ধু-পুত্র বলেই পরিচিত, সে 
আপনার পুত্র তার প্রমাণ কি? 

প্রঃ তরফদার । প্রমাণ? (একটা বড় দুঃখের হাসি হাসিলেন) আমি 
লোকনাথের পিতা॥ সে প্রমাণ লোকনাথের কাছে দিয়েছিলাম--এই পরিচয় 
প্রমাণ করার জন্য আমি আমার পুক্জ লোকনাথকে হারিয়েছি-সপুতের 
চেয়েও বড় অনেক কিছু হারিয়েছি। আমি কোন প্রমাণ দিতে চাই না, 


৪১৫ 


অনোনৈজ্ঞাজিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


আমি শুধু বলতে চাই--আমি পুত্র-হস্তা । স্থবিচারের আঁশায় আপনার 
কাছে এসেছি- বিধিমত আমায় শাস্তি দিন। গতান্গতিক ভাবে 
ভগবানের স্থষ্টি শয়তানের দ্বারা চূর্ণ হোক। 

জজ । (বিশ্মিতভাবে ) আপনি বলুন, মিঃ লাহিড়ি ! 

মিঃ লাহিড়ি। ধর্মীবতার! লোকনাথ প্রঃ তরফদারের পুত্র এ বিষয়ে 
কোন প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। 

মিঃ বোস্‌। মাই লর্ড! অনুমতি পেলে আমি প্রমাণ করতে পারি লোকনাথ 
সত্যই আমার মকেল প্রঃ তরফদারের পুত্র । 

জজ । আমি আপনাকে অচ্মতি দিচ্ছি । 

মিঃ বোস্‌। (চিঠি ও এল্বাম হাতে উঠাইয়!) প্রঃ তরফদারের এল্বামে 
রক্ষিত এই ফটো! ও তার স্ত্রী পরোলোকগতা স্থলেখা দেবী কর্তৃক প্রঃ 
তরফদারকে লিখিত এই চিঠি থেকেই বুঝতে পারবেন--লোকনাথ 
গ্রফেলারের পুত্র ছাঁড়া আর কেও ছিল না। (তিনি জজের হাতে 
এল্বাম ও চিঠি দিলেন।) 

প্রঃ তরফদার । (উত্তেজিত ভাবে) আপনি কোথায় পেলেন সে ছবি 
আর চিঠি? 

সবিতা। (প্রঃ তরফদারকে বসাইয়া ) আমি, আমি দিয়েছি বাবা। 

প্রঃ তরফদার। তুই? তুই জানতে পেরেছিল সবিতা? সবই জেনেছিদ? 

সবিতা । না বাবা, আমি কিছুই জানতে চাই না, আমি শুধু জানি তুমি 
আমার বাবা! 

প্রঃ তরফদার। ভুল, ভুল, সবই ভূল। আমি তোর বাবা নই, আমি 
লোকনাথের বাবা-”তোকে আমি মেয়ের মতো! পালন করেছিলাম 
নিজের উদ্দেশ্ট সিদ্ধ করবার জন্য--শয়তান এসে সব ভেজে দিল। 


ভীত 


দ্বিতীয় দৃষ্তা ] অনোটবজ্ঞান্দিক 


অরবিন্দ সরকার । (উদ্ভ্রাস্তের মত) কি? কি বল্পেন আপনি? সবিতা 
দেবী আপনার মেয়ে নন? তিনি আপনার কে? বলুন, বলুন--তাকে 
আপনি কোথায় পেলেন? 

( আদালতে পুনরায় কোলাহল উঠিল ) 

ইনস্পেক্টার। (অরবিন্দ সরকার ও সবিতাকে প্রঃ তরফদারের নিকট 
হইতে দূরে সরাইয়1) চুপ করুন আপনারা কথা বলবেন না। 

অরবিন্দ সরকার। না! না! আমি চুপ করবো না প্রঃ তরফদারের 
কাছ থেকে আমি জানতে চাই সবিতা! দেবীকে তিনি কোথায় পেলেন? 

ইনস্পেক্টার। চুপ করুন। এট] বিচারালয়। বা জানবার পরে জানবেন। 

( কনেষ্টেবল ইনস্পেক্টারের ইঙ্গিতে অরবিন্দ সবকারকে ধরিয়া বসাইল ) 


জজ. । (চিঠি ও এল্বাম হইতে মুখ তুলিয়! ) হ্যা, এ থেকে বোঝা যায় লোৌক- 
নাথ সত্যই প্রঃ তরফদারের পুত্র। মিঃ লাহিড়ি এগুলি আপনি নিন্‌। 


মিঃ লাহিড়ি। ( চিঠি পড়িয়া ) ধর্মাবতাঁর ! এ থেকে শুধু এইটুকুই প্রমাণিত 
হচ্ছে যে মানুষ অর্থের লালসায় নিজের পুত্রকেও হত্যা করতে কুম্ঠিত হয় 
নাঁ। প্রঃ তরফদার একজন বিজ্ঞ, পণ্ডিত ব্যক্তি বলেই সমাজে পরিচিত 
কিন্ত সেই পণ্ডিত-মুখোসধারী ব্যক্তি যে একজন অর্থ-পিশাচ, প্রবঞ্চক, 
নরহত্যাকারী--সে কথা কেউ এতদিন জানতো না। সমাজে এস 
মানুষের অবস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আপনি আসামীর উপযুক্ত শাস্তির 
ব্যবস্থা করে সমাজের মঙ্গল বিধান করুন। 


প্রঃ তরফদার । আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি সমাজের কলহ্ক, বিভীধিক।। 
আমি অর্থ-পিশাচ, প্রবঞ্চক, নরহত্যাকারী-_মিঃ জাট্িস্‌ আপনি আমার 
প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়ে জগতের মঙ্গল বিধান করুন। 


৯৭ 


মনো বৈজ্ঞান্সিক [ তৃতীয় অন্ক 


সবিতা । বাবা! তুমি কলঙ্ক নও, বিভীষিক! নও। এঁর! তোমায় জানেন 
না। কেন তুমি এ কাজ করেছো আজ সকলের সামনে এই 
প্রকাশ্য আদালতে বলে ষাও। তুমি বলেছিলে সব কথা বলবে।। বল 
বাবা। মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা তোমায় মাথা! পেতে নিতে দেবো না। 


জজ. প্রফেসার তরফ্দার! আপনার কিছু বক্তব্য থাকলে আপনি 
স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন। 


প্রঃ তরফদার। আমার বলবার কিছু নেই মিঃ জান্িস। আমার কথা 
আপনাদের একটুও সাহায্য করবে না। আমি শয়তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ 
করতে গিয়ে পরাজিত হয়েছি। সর্বস্বান্ত আমি-_বিচারালয়ে আসামীর 
কাঠগড়ায় এসে দ্রাড়িগ়েছি পুত্র-হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে--শয়তান 
আমার অবস্থা দেখে জয়ের গর্ধে অট্রহাসি হাসছে । ভগবানের স্থপ্টিকে 
যুগে যুগে এমনি করে ভেঙ্গে দিয়ে শয়তান হাসে। আপনারা দ্বিদ! 
করবেন না, সহানুভূতি প্রকাশ করবেন না, কঠোরভাবে কর্তব্য পালন 
করুন। ( তিনি শূন্য দৃষ্টিতে সম্মুখে চাহিয়! রহিলেন ) 


সবিত1। বাবা, সব কথ! বলে যাও বাবা । 
প্রঃ তরফদাঁর। কোন লাভ নেই মা-কোন লাভ নেই। আমার কথা-+ 
সে আমার পরাজয়ের ইতিহান--তা শুনে শয়তান আরও বেশী রে 


হাসবে । 
জজ. | মিঃ: বোস্‌, আপনার মকেল সম্বন্ধে কিছু বলবার আছে? 


মিঃংবোস্‌। ধর্মীবতার বিচারক ও জুরি মহোদয়গণ, আমার মক্কেল গ্রঃ 
প্রমথনাথ তরফদার একজন পৃথিবী-বিখ্যাত দার্শনিক ও মনোবৈজ্ঞানিক। 
তার পাগ্ডিত্য ও জ্ঞানান্ুরাগ সর্বজনবিদিত । প্রঃ তরফদার আজ 


৯৮ 


ছবিতীয় দৃষ্ঠ ] অনোটবজ্ঞাঙদিক 


নিজের পুত্রকে প্রথম পুত্র পরিচয় দিয়ে হত্যা করে আত্মসমর্পণ করেছেন। 
তিনি কি মনোভাবের বশবর্তী হয়ে এরূপ কাজ করেছেন সে কথা আমাদের 
নিকট প্রকাশ করেন নি। শিক্ষিত বন্ধুবর মিঃ লাহিড়ি এইমাত্র বললেন 
অর্থলালসায় গ্রঃ তরফদার পুত্রকে পধ্যন্ত হত্যা করতে কুম্তিত হননি । 
প্রঃ তরফদার আজীবন নিজের পুত্রকে কেন সত্যিকার পরিচম্ম থেকে 
বঞ্চিত করেছিলেন সে বিষয়ে বন্ধুবর কোন কথা বলতে পারেন নি। 
অন্যদিকে, প্রঃ তরফদার সবিতা দেবীকে চিরকাল কন্ঠ! বলে প্রচারিত 
করে আজ সহস1 তাঁকে পালিত কন্তারূপে অভিহিত করতে চান। এ সকল 
রহম্ত ছাড়াও আর একটি রহস্তের সমাধান এখনো হয়নি । অলঙ্কাঁর- 
বিক্রেতা অরবিন্দ সরকার সবিত1 দেবীর একটি ফটো! পুলিশের হস্তে 
প্রদান করেছেন। সবিতা দেবীর ফটে। তিনি কোথায় কি ভাবে পেলেন 
সে কথা প্রকাশ করতে সম্পূর্ণ অন্বীকার করেছেন। এগুলি জটিল 
সমস্তার উত্তর না পেয়ে আপনারা কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হলে সে সিদ্ধান্ত 
ভূল বলেই পরিগণিত হবে এবং ম্যায় ও সত্য বিচারের অমর্যাদা হবে। 
আমি বলতে চাই-_-এই সমস্ত রহস্তের মীমাংসা না হলে শুধু এইটুকুই 
প্রমাণিত হয় যে প্রঃ তরফদারের মতো বিখ্যাত পণ্ডিত বাক্তি নিশ্চয়ই 
এমন কোন মনোভাবের বশবত্তা হয়ে পুত্রকে হত্য। করে থাকবেন যা 
আইনের চণক্ষে ক্ষমার । 

প্রঃ তরফদার। ( সহদা চিৎকার করিয়! উঠিলেন ) না, না, আইনের চ'ক্ষে 
আমি ক্ষমার নই। আমি সঙ্গনে পুত্র-হত্য। করেছি--আমায় শান্তি দিন_- 
প্রাণদণ্ডের আদেশ দিন। 

ইন্স্পেক্টার। (প্রফেনারকে ধরিয়া বসাইলেন ) আপনি স্থির হো'ন। 

মিঃ বোস্‌। আজ যদি আমার মন্ষেলের মনোভাব সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ না করে 
তাকে লাধারণ নরহত্যা্ষারীর পর্যায়ে ফেলে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেওয়া 


পি 


অন্োষৈজ্ঞীনিক [ তৃতীয় অন্ক 


হয় তবে সে হবে কঠিন অবিচার । আমার মক্কেলের মানসিক চিকিৎসার 
প্রয়েজন--আমি আদালতকে তার ব্যবস্থা করতে অন্ুবোধ করি। 


প্রঃ তরফদার । ( বিচলিতভাবে ) আমায় বিশ্বাস করুন, আমার মনোবিকার 
ঘটে নি। আমি নিজেই আমার দোষ প্রমাণ করবো সব কথ! বোলব। 
আপনার শুনুন আমার কথা । 


( আদালত স্তব্ধ ) 


জজ.| বলুন, আপনার কথা আমরা শুনবো । 
প্রঃ তরফদার । (শান্ত ও ধীরকঠে) আমার যে কথা কাউকে বপিনি-_- 
আমার সেই কথা আপনাদের বলে যাব। আমার সব কথা শুনে 
আপনারা আমায় অশ্বস্থ, অন্বাভাবিক মানুষ বলে মনে করবেন না। 
আমি আপনাদের মতই সুস্থ মা, সুস্থ চিত্তেই আমি আমার পুত্রকে 
হত্য। করেছি । অর্থলালসার বশবত্তী হয়ে এ কাজ না করলেও আমি 
যেলালসার মোহে লোকনাথকে গুলি করেছি সে অর্থলালসা'র চেয়েও 
ভয়াবহ । লোকনাথের জন্ম হয় তার মামার বাড়ীতে--আমি সে সময় 
জাম্মানীতে রিসার্চ কচ্ছি। মানুষের ব্যবহারকে কেমন করে আত্বত্ব করা 
যায়, কেমন করে সে ব্যবহারকে আয়ত্ত করে এক নৃতন পৃথিবীর স্ষ্ট 
হতে পারে এই ছিল আমার চিরকালের স্বপ্ন। লোকনাথের জন্ম আমার 
মনে কোন রেখাপাত করলো না। এর দু'মাস পরেই আমি আমার 
পত্বীর মৃত্যু-সংবাদ পেলাম--আর সেই সঙ্গে পেলাম পুত্রের ভার গ্রহণের 
নোটাশ। পুত্র-কলত্র নিয়ে সংসার-জীবন যাপন করবার ইচ্ছ1! আমার 
কোনদিন ছিলে না তাই যেদিন দেশে ফিরে এলাম সেদিন এক নূতন 
খেয়াল আমার মন জুড়ে বসলো । লোকনাথকে নিজের পরিচয় জানতে 
দেবো না-্তাকে এক অসহায় অনাথ বন্ধু-পুঞ্জু্ূপে প্রচার করে মান্য 


১৩০ 


স্বিতীয় দৃষ্ ] অনোটৈজ্ঞাজিক 


করবো--কবরবো আপন দীক্ষায় দাঁক্ষিত। সে আমার স্বপ্কে সার্থক করে 
তোলবার জন্য নিজেকে আমার পুত্র না ভেবে--আমার হাতের একটি 
যন্ত্রপুত্তলিক1 মাত্র মনে করবে। লোকনাথের ওপর দিয়েই আমার 
প্রথম চ8000706706 আরম্ভ হলো। নাসের পরিচধ্যায়। আমার 
তত্বাবধানে, জগতের সমস্ত কোলাহলের বাইরে অতি নির্জনে সে গড়ে 
উঠতে লাগলো । এদিকে আমার ছুটি ফুরিয়ে বিদেশে যাবার সময় 
এগিয়ে এলো। ঠিক রওন] হবার ছু্দিন পূর্বে আমি সবিতাকে পেলাম। 

'অরবিন্দ সরকার । ( বাগ্রভাবে) কোথায় পেলেন সবিতা দেবীকে ? 

প্রঃ তরফদার। কোথায় পেলাম? সে কথা বলবার কি আজ কোন 
প্রয়োজন আছে? 

সরকার। আপনি বলুন, আমার প্রয়োজন আছে। 

প্রঃ তরফদার। (সরকারের দ্রিকে ফিরিয়া) আপনি? আপনার কি 
প্রয়োজন ? 

সরকার। বলুন আমায়, কোথায় পেয়েছিলেন আপনি তাকে-আপনার 
কথা যদি সত্য হয় তবে আমি সমস্ত স্বীকার করে সারাজীবনের মিথ্যা 
সংস্কারকে পদদলিত করে প্রায়শ্চিত্ত করবো । 

ইনস্পেক্টার। (সরকারকে ) আপনি কেন চিৎকার কচ্ছেন? আসামীকে 
তার বক্তব্য বলতে দিন। | 

জজ । (হাতুড়ি পিটিয়! ) অর্ডার! অর্ডার! বলুন প্রঃ তরফদার । 

প্রঃ তরফদার। (সবিতার দিকে চাহিলেন ) সবিতাকে আমি কোথায় 
পেয়েছিলাম? সবিতার ইতিহাস কি? মাননীয় বিচারপতি ও জুরি- 
মহেদয়গণ-্মাপনারা সবিতাকে বাইরে নিয়ে যান--তার পামনে সে 
নিষ্টর সত্য কেমন করে উদঘাটন করবো? চিরকাল সে জেনে এসেছে-- 


১০৯ 


মনোবৈজ্ঞাঝিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


সে আমার মেয়ে, অতি আদরের মেয়ে। প্রতিদিন প্রতিটী কাজে ন্যায়, 
অন্যায় বিচার না করে আমায় সাহায্য করে এসেছে । 


জজ. | ইনস্পেক্টার। সবিতা দেবীকে বাইরে নিয়ে ঘাও। 


সবিতা । না, আমায় বাইরে নিয়ে যাবেন না; আমি শুনব সে নিষ্ঠুর সত্য, 
আমি জানবো আমার সত্যিকারের পরিচয়। বল বাবা, আমি সহা 
করতে পারবো । 


প্রঃ তরফদার । সবিতা! নিক্ষলঙ্ক, নিষ্পাপ সবিতা! মানুষের লজ্জা, 
কাপুরুষতা ও চরম দুর্বলতার গর্ভে যাঁর জন্ম সেই সবিতাকে আমি 
গ্রহণ করেছিলাম আমার কন্যারূপে। ভেবেছিলাম মানুষের বিরুত 
ব্যবহারকে সংশোধন করবার সাধনায় সে আমায় শেষ পধ্যন্ত সাহায্য 
করবে । কিন্ত আমি ভূল করেছিলাম তাঁকে সন্তান বলে পরিচয় দিয়ে-- 
তাই শেষ মুহূর্তে ও আমার ভবিষ্যৎ ভেবে বিচলিত, ছুর্ববল হয়ে পড়লে; 
নিজের ব্যবহারকে সংযত করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মাথা তুলে 
দাড়ালো--, তারপর, তারপর আমার সারাজীবনের সাধনাসৌধ এক 
নিমেষে প্রবল সংঘাতে চূর্ণ হয়ে ধূলোয় মিলিয়ে গেল। 


অরবিন্দ সবকার। কৈ, আপনি তো বল্লেন না, সবিতা দেবীকে আপনি। 
কোথায় কেমন ভাবে পেয়েছিলেন? 


গ্রঃ তরফদার । (সচকিত ভাবে ) হ্যা, কোথায় কেমন ভাবে তাকে আমি 
পেয়েছিলাম। (তিনি মুহুর্তের জন্য চোখ / বন্ধ করিয়া কি চিন্তা 
করিলেন--পরে সবিতার দিকে ফিবিলেন, সবিতা স্থির গ্রস্তরমৃত্তির মত 
দাড়াইয়াছিল। তিনি তাহার মুখখানি ছুই হাতে তুলিয়া ধরিলেন। ) 
সবিতা আমায় ক্ষমা করিস মা, যাবার দিনে তোর মিথ্যা পরিচয় দিয়ে 
যাবো না। এজন হয়তো! সমাজ তোকে গ্রহণ করবে নাস্তারা তোকে 


১৬৭ 


দ্বিতীয় দৃষ্থা ] মমোবৈজ্ঞানিক 


পদে পদে করবে লাঞ্ছিত, অপমানিত। তবে সে অপমান, সে লাঞ্ছন! 
শুধু কাপুরুষ, ভীরু মানুষের লজ্জার হাহাকার_-তুই তাদের সে লজ্জা 
অপমানের ওপর দিয়ে বুক ফুলিয়ে হেটে যাবি-_-দেখবি তারা৷ আলে, 
সঙ্কোচে, তোর পথ ছেড়ে এক পাশে সরে দাড়িয়েছে । 
(তিনি জজেব দিকে ফিবিলেন ) 
মিঃ জান্টিস! ১৯২৯ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী। ভোরবেল! 

প্রার্তভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমি আমার কলকাতার ঘর থেকে বার হচ্ছি। 
তখনো উধার আলো ভালো করে ফোটেনি, পথে লোক চলাচল আরস্ত 
হয়নি। ফুটপাথে নাবতেই সহসা আমার চোখ পড়লো পাশের 
ভাষ্টবিনে। সাদা কাপড় জড়ানো সুন্দর সগ্যোজাত শিশু--বাহুমূল 
সামান্য কেটে ফোটা ফৌটা রক্ত ঝ'রছে। শুত্র, স্বন্দর, নিক্ষলঙ্ক, 
নিষ্পাপ শিশু যন্ত্রণায় অস্ফুট শব্দ কচ্ছে-_ 

অরবিন্দ সরকার । (চিৎকার করিয়া) আমি, আমিই সেই কাপুরুষ । 
সবিতা আমার মেয়ে, আপনার আমায় শাস্তি দিন। 

( আদালতে মৃদু গুপ্কনধ্বনী উঠিল। সবিতা প্রঃ তরফদারকে ছুইহাতে 
জড়াইয়! তাহার কোলে মাথা গু'জিল। ) | 

জজ. । কি আশ্চর্য্য! সবিতা দেবী আপনার মেয়ে? 

অরবিন্দ সরকার । হ্যা হ্যা, আমার মেয়ে--এতে কোন ভূল নেই । দেদিন 
সমাণজর ভয়ে, সংস্কারের লঙ্জায় এই পরিচয় স্বীকার করে নিতে 
পারিনি-্সেই কাপুরুষতার পাপে সারাজীবন বেদনায়, অন্ুশোচনায় 
জর্জরিত হুয়েছি। ভাবিনি কেও কোনধিন তাকে বাচিয়ে তুলবে-- 
এমন করে আদরে যত্বে নিজের মেয়ের সম্মান দিয়ে মানুষ করবে। 


জজ.। আপনি সেদিন কেন পরিচয় অস্বীকার করেছিলেন? 


১৬৩ 


অনোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


অরবিন্দ সরকার । আজ আমার বলতে বাধা নেই। প্রথম যৌবনে সবিতার 
মা অমল দেবীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় আমাদের সেদিনের 
কুমার-কুমারীর পরিচয় স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসায় পর্যবমিত হয়েছিল। 
আমরা জানতাম আমাদের বিয়ে হবে--কোন বাধাই একে আটকাতে 
পারবে না। হঠাৎ অমলার পিতা আমাদের এই অবৈধ প্রণয়ের কথা 
জানতে পারলেন । তিনি মেয়েকে ঘরে চাবি বন্ধ করে রেখে দিলেন | 
আমি অন্য জাতি, আমার সঙ্গে অমলার বিবাহ অসম্ভব | সেইদ্দিন 
আমিও মহ1-বিন্ময়ে, ভয়ে, লঙ্জীয় প্রথম জানতে পারলাম--অমলা সন্তান- 
সম্ভবা। অমলার কি হবে ভাবতে ভাবতে আমি পাগল হয়ে গেলাম 
কিন্ত কিছুই স্থির করতে পারলাম না। এরপর অমলার সঙ্গে আমার 
মাত্র একদিন দেখা হয়েছিল--সেই শেষ দেখা । তার মুখে শুনলাম-_ 
সম্তানের কথা অমলার পিতা জানতে পেরেছিলেন। সন্তান প্রসব 
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিশ্বস্ত লোক দিয়ে সেই সন্যোজাত শিশুকে 
অন্ধকারের আড়ালে পথে আবজ্জনায় ফেলে দেন। ১৯২৯ সালের 
৪ঠ1 ফেব্রুয়ারী রাত্রে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। যে ব্যক্তি এই 
নিষ্ঠুর কাজে গিয়েছিল তার কাছে অমলা পরে শুনেছিল ভাষ্ট বিনে 
লেগে শিশুর বাহুমূল কেটে রক্ত পড়ছিল। এ ঘটনার পর অমলার 
পিতা অমলাকে এক সপ্তাহের বেশী ঝাচিয়ে রাখতে পারেন নি। 

জজ.। আপনি সবিতা দেবীর ফটো কোথায় পেলেন--সে কথা বলতে 
অন্বীকার করেছেন কেন? 

অববিন্দ সরকার । এতদিন প্রয়োজন ছিল। আজ .অন্বীকার করবার 
কোন হেতু নেই। সে ফটে! সবিতার নয়। 

জজ. | (বিস্মিতভাবে ) সে ফটো সবিতা দেবীর নয়? ( আদালতে ভয়ঙ্কর 
গোলমাল উঠিল ) 01061, 0:01: ] 


১০৪ 


ঘিতীয় দৃপ্ত ] অদেইটবজানিক 
অরবিন্দ সরকার । না, সে ফটো! অমলার, সবিতার মায়ের যৌবনের ফটো । 


প্র 


তার ফটো! সে একদিন আমায় উপহার দিয়েছিল। এই ফটো ও 
তার স্মৃতিকে অকড়ে ধবেই আমি এতগুলি স্থ্দীর্ঘ বংসর কাটিয়ে এসে 
সহসা একদিন দেখলাম ফটে! জীবন্ত হয়ে'আমার দোকানে গয়না খরিদ 
করতে এসেছে । আমি হতবাক্‌ হয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। 
সবিতা সেদিন আমায় বিশ্মিত দেখে প্রশ্ন করেছিল--“আপনি আমা 
চেনেন? আমি বিহ্বলভাব কাটিয়ে উঠে বলেছিলাম--না, না, আমার 
ভ্রম।” তারপর আমার আশীহাঁজার টাকার গয়না যখন সে আত্মসাৎ 
করে বসলো তখন অলঙ্কারের ক্ষতির চাইতে বার বার এই অদ্ভূত 
সাদৃশ্টের কথাই অহরহ মনে হতে লাগলো । ভাবলাম এই ফটে। যদি 
পুলিশের হাতে দিয়ে আবার সবিতাকে ফিরে পাই--যদ্দি আমার সন্দেহ 
সত্য হয় তবেই এই ফটোর রহস্ত উদঘাটন করবো। ভগবান আমার 
মনস্কামন! পূর্ণ করেছেন- আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। 
সে যে কি মহান আদর্শের মোহে অজ্ঞাতে তার পিতারই অলঙ্কার 
আত্মসাৎ করতে এসেছিল এবং পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভাক্তার 
রায়চৌধুরীর সাহায্যে প্রঃ তরফদারকে নিরস্ত করতে গিয়েছিল-_ 
তাও আমি জেনেছি । সে নির্দোষ--তার বিরদ্ধে আমার কোন 


অভিযোগ নেই। 
( আদালত ত্ন্ধ ) 


তরফদার। আপনার অলঙ্কার-বিক্রীত পঁচাত্তর হাজার টাকা আদালতে 
জমা আছে। মিঃ জাষ্টিস্, আমার অর্থের প্রয়োজন ফুরিয়েছে--আপনি 
মিঃ সরকারকে তার নাধ্য অর্থ ফিরিয়ে দিন। ( সবিতার দিকে ফিরিয়া ) 
তোমার গলার হার কি হোল ম। ? 


১৩৫ 


মনোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


সবিতা । তোমায় বাঁধ! দেবার আগে সে হার আমি খুলে রেখেছি বাবা । 

জজ.। মিঃ সরকার! সবিতা দেবীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নিয়ে 
আপনি আপনার অলস্কারের মূল্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছেন? 

অরবিন্দ সরকার। সবিতার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই কিন্ত 
ও টাকা আমি গ্রহণ করবো নাঁ। প্রঃ তরফদার যে সাধনায় বিফল 
হয়ে নিজের পুত্রকেও হত্যা করতে কুষ্ঠিত হননি--তীর সেই সাধনাকে 
জগতে সফল করে তোলবাঁর জন্য আমি আমার সমস্ত অর্থ, বিষয়, সম্পত্তি 
দান করবো । তিনি মান-অপমান বিসজ্জন দিয়ে আমার 
কন্াকে সম্মানের সঙ্গে মা্তষ কবেছেন, আমিও তার প্রতিদ্বানে তার 
সাধনাকে মৃত্য পর্যন্ত বাচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাব। জগতে আমি 
খুঁজে বেডাব সেই মান্্যকে যে তীর সাধনার গুরুভার বহন করতে 
পারবে । 

প্রঃ তরফদার | ভূল! ভূল! আপনার আশা বৃথা হবে। তেমন মাহ্ষ 
আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না। আমার সাধনা আমার সঙ্গেই 
ধাবে--পৃথিবী তাকে চায় না-_-শমতান তাকে সার্থক হতে দেবে না। 


সবিতা । (প্রঃ তরফদারকে ) বাবা, তুমি যদি আমায় অনুপযুক্ত না মনে 
কর তবে তোমার আজীবনের পবিশ্রমকে সফল করে তোলবার গুরুভার 
আমায় দাও। তোমার মতবাদে আমি বিশ্বাস হারিয়েছি কিন্ত 
তোমার সাধনাকে তূঙ্গ বুঝিনি। আজ চারিদিকে তাকিয়ে আমি 
বুঝতে পেরেছি-_-কত বড় ব্যথা, কত বড় বেদন! মানুষের জন্য তোমার 
বুকে লুকিয়েছিল। 

প্রঃ তরফদার । আমি তোমায় সে ভার দেবো না মা! তুমি যদি জগতে 
সত্যিকার মানুষ গড়বার প্রেরণা পেয়ে থাকো! তবে স্বেচ্ছায় তোমার 


১৩০৬ 


দ্বিতীয় দৃষ্ত ] অনোবৈজ্ঞানিক 


পিতার অঙ্গীকার পালন কবো। মিঃ জাষ্টিস--আমার কথা এখনও 
শেষ হয়নি । ডাঃ সথবিমল রায়চৌধুরির অনুপ্রেরণায় সবিতা আমাদ্ব বাধা 
দিল-সে তার পিতাকে সাময়িক কলঙ্কের হাত হতে মুক্তি দিতে 
গিয়ে এক বিরাট সম্ভাবনার মূলে কুঠার হানল। আমি হিতাহিত- 
জ্ঞানশুন্য হয়ে ভাবলাম--পর কখনও আপনার হয় না--তাঁই সবিতাকে 
ত্যাগ করে তার সমস্ত বাধা তুচ্ছ করে লোকনাথকে নিয়ে অগ্রসর 
হবার স্বল্প করলাম । লোঁকনাথকে তার আসল পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন 
আমি সেই দ্বিনই অনুভব করলাম। হয়তো দে তার সত্যিকার 
পরিচয় জাঁনলে পিতার জন্য সব কিছু করবে। এখানে আমার 
দুর্বলতা আমায় আক্রমণ করলো । নিজের মতবাদের বিরুদ্ধে প্রথম 
পদক্ষেপে করে দেখতে পেলাম লোকনাথ ষন্ত্-পুত্বলিকা নয়, তারও 
মন বলে বস্তুটি সম্পূর্ণ বজায় আছে। সে তার পিতৃ-পরিচয় পাওয়ার 
সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত উদ্দেশ্য ভুলে গেল। অভিমানে আমায় সাহায্য করতে 
অস্বীকার করে বসলে! | সমস্ত আশা, কল্পনা, মিথ্য1 পরিচয়, সবই আমার 
বিফল হোঁল--পারলাম না--যে সাধনার জন্বা সমস্ত জীবন নিজেকে সব 
কিছু থেকে বঞ্চিত করে এলাম সেই সাধনাকে ব্যর্থ হতে দেখে শেষ 
সময়ে ব্যবহারকে আয়ত্তে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না । সারাজীবনের 
অবদমিত মনের প্রতিক্রিয়া একসঙ্গে ফেটে পড়ে তার প্রতিশোধ নিলো! । 
আমি পুত্রকে নিজে হাঁতে হত্যা করে আমার খেলাঘর সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে 
ফেললাম । 

ধর্মাবতার ! আমার সব কথা বলা শেষ হয়েছে । আমার মস্তি 
বিরুত হয়নি--আমি সুস্থ চিত্তে পুত্রকে হতা! করেছি--প্রাণদণ্ডের আদেশ 
দিয়ে আমায় এই জগতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন। 

জজ | মিঃ লাহিড়ি? 


১৩ 


মমোবৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


মিঃ লাহিড়ি। মাই লর্ড! আমার বলবার কিছু নেই। অপরাধী তার 
আপন অপরাধ বিশদভাবে প্রমাণ করেছে-আপনি জুরিমহোদয়গণের 
মতামত গ্রহণ করে তার গায় বিচার করুন । 


মিঃ বোম্‌। ধর্মাবতার! আপনার রায় প্রকাশের পূর্ধবে আমি আপনাকে 
বলতে চাই আমার মক্কেল প্রঃ তরফদার মানসিক অস্ুস্থ। আমি এ 
বিষয়ে আপনাকে গভর্ণমেণ্টের মানসিক চিকিৎসক ডাঃ স্ববিমল 
রায়চৌধুরির বক্তব্য শ্তনতে অনুরোধ করি। 


জজ.। ডাঃ বাঁয়চৌধুরি ! অপরাধীর মানসিক সুস্থতা সম্বন্ধে আপনার সাক্ষ্য 
আদালত শ্বনতে চায়। 


ডাঃ স্ববিমল। (সাক্ষীর ডকে উঠিলেন ) ধন্মাবতাঁর! প্রঃ তরফদারের 
মন সম্পূর্ণ স্স্থ। 


সবিতা । ভাক্তার! ডাক্তার ! 


প্রঃ তরফদার । স্থবিমল! তোমায় আমি আশীর্বাদ করি। তুমি আজ 
সত্যই মনোবৈজ্ঞানিকের পরিচয় দিলে । 


ডাঃ স্থবিমল। পূর্বে যেদিন তিনি সবিতা দেবী ও লোকনাথের সাহায্যে 
আমায় প্রতারণা করে অলঙ্কার আত্মসাৎ করে বসেন সেদ্দিন আমি তাঁকে 
মানপসিক-বিকাবপগ্রন্ত ব্যক্তি বলেই মনে করেছিলাম। সবিতা দেবীকে 
তার ভুল বুঝিয়ে দিয়ে প্রঃ তরফদারকে বাধা দিতে সাহায্য করে 
ভেবেছিলাম এই আঘাতে তিনি সুস্থ মান্ষে পরিণত হবেন। ' কিন্ত 
তিনি যে মনোবিকারপ্রস্ত ব্যক্তি নন্‌ সে কথা প্রমাণ করলেন 
লোকনাঁধকে হত্যা করে। প্রঃ তরফদাারের ভ্রমাত্মক মতবাদ তীর 


১৩৮ 


ছিতীয় দৃষ্ঠ ] অনমোবৈজঞামিক 


সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসলো এবং সেই সঙ্গে জগৎকে 
জানিয়ে দিল মনের গ্রবৃত্তিকে অতিক্রম করে শুধু বাহক ব্যবহারের ছারা 
কোন সাধন! সম্ভব নয়। তিনি যে অভিনখ মানব স্থির কল্পনা 
করেছিলেন তীর সে শ্বপ্নকে অন্তায়ের পথ দিয়ে ও ভূল মতবাদের ওপর 

ভর করে সফল করবার চেষ্টা না করলে তিনি আজ পুত্রশ্হত্যার অপরাধে 
অপরাধী ন। হয়ে সমস্ত জাতির পৃজ্য হতে পারতেন । তিশি যে এক মহান্‌ 
আদর্শে জন্য অন্তায়ের পথ গ্রহণ করেছিলেন সে কথা আমি আজও 
সর্বান্তঃকরণে স্বীকার করি। কিন্তু তবুও তিনি সত্যের জন্য সত্যকে 
লঙ্ঘন করে, ন্যাস্ের প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায়কে বরণ করেছেন, তিনি দোঁধী। 
তার দোষের শাস্তি না দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্ায় প্রশ্রয় পাবে। 
(তিনি ভক্‌ হইতে নামিয়া গেলেন। ) 


জজ.| জুরি মহোদয়গণ, আপনাদের মতামত ব্যক্ত করুন| 


ফোরমেন। ধশ্মীবতার ! অপরাধী ভগবানের নিয়ম লঙ্ঘন করে নৃতন 
স্টির মোহে পুরাতনকে ছলন! করে হত্যা করেছে--তার অপরাধ যে 
সাধারণ হত্যাকারীর চেয়েও ভয়াবহ সে সম্বন্ধে আমরা সকলে একমত । 


( সবিতা! মুচ্ছিতা হইল ) 
ইনম্পেক্টার। জল! জল! 


( একজন কনেষ্টৰল তাডাতাডি জল লইয়া আসিল। অববিন্দ সরকার জল 
লইয়া সাবতাব মুখে চোখে দিতেই সে চোখ মেলিয়। চাহিল। দেখিল আদালতের 
সমস্ত লোক বিচারপতির সঙ্গে সঙ্গে উঠিয়া দাড়াইয়াছে ) 

জজ.। 1096 2508920. 15 561021)020 0০ ৭680. 


১৩৪) 


মনো বৈজ্ঞানিক [ তৃতীয় অঙ্ক 


( আদালতে একটা প্রচণ্ড কোলাহলের সঙ্গে দৃষ্ঠাস্তর ঘটিল।* সবিতা প্রঃ 
তরফদাবের বুকে মুখ রাখিয়। কাদিতেছে, প্রহরী প্রঃ তরফদারকে যাইবার জন্ 
তাড়া দিতেছে ) 


প্রঃ তরফদার। সবিতা, আমায় যেতে দাও ম]। 
সবিতা। কেমন করে তোমায় যেতে দেবো বাবা, তুমি কি এতই ন্িষ্ুর ! 


প্রঃ তরফদার | তুমি যে গুরুভার গ্রহণ করেছে৷ মা তাতে এমন করে ভেঙ্গে 
পড়লে সে ভার কেমন করে বহন করবে ? 


সবিতা । € চোখ মুছিয়! প্রঃ তরফদারকে প্রণাম করিল ) বাবা, বল তুমিই 
আমার বাবা? 


প্রঃ তরফদার । হ্্য। মা, আমিই তোমার বাবা। 
সবিতা । আমায় আশীর্বাদ করে যাও বাবা, যেন তোমার সাধনাকে আমি 
সফল করতে পারি। 


( ডাঃ স্ুবিমল আসিয়! প্রঃ তবদারকে প্রণাম করিল ) 
ভাঃ স্থবিমল। আমাকেও আশীর্বাদ করে যান যেন সবিতার গুরুভার বহনে 
আমি তাকে সাহায্য করবার ফোগ্য হতে পারি। 
সবিতা । ডাক্তার! ডাক্তার! আপনি? 


ডাঃ স্থবিমল। হ্যা সবিতা, আমি। তুমি কি আজ আমার সাহাধ্যের প্রয্মোজন 
বোধ করে না। 


* যীহাদের পক্ষে রঙ্গমঞ্চে অতি দ্রুত দৃশ্য পরিবর্তন সম্ভব নয় তাহারা আদালতের 
দৃশ্যেই শেষাংশটুকু অভিনয় করিবেন।- নাট্যকার 


১১৩ 


ছিতীয়দৃষ্ত ] মনো বৈজ্ঞানিক 


সবিতা । কিন্ত আপনি আমায় কেন সাহায্য করবেন ডাক্তার? বাবার 
সাধনার ভার গ্রহণ করে আমি তো! আপনার বিশ্বাম রক্ষা করতে 
পারিনি। 


ভাঃ স্থবিমল। আমিও পারিনি সবিতা প্রঃ তরফদারকে আমাদের মধ্যে 
ধরে রাখতে আমি অক্ষম হয়েছি! 


প্রঃ তরধদার। তোমর1 ছুজনেই যখন পরস্পরের বিশ্বাম হারিয়েছে তখন 
এসো যাবার আগে তোমাদের দুজনকে চিরবিশ্বাসের দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ 
করে দিয়ে যাই | (তিনি সবিতার একটি হাত স্থবিমলের হাতের ওপর 
রাখিলেন। ) আমি আশীর্বাদ করি জগতে মনে প্রাণে একাগ্র সাধনায় 
তোমরা নৃতন পথে নব-মীনবের হৃষ্টি-কর্তা হবে। সেমানব দ্বেষ করবে 
না, হিংসা করবে না, লোভ করবে না-_সে মানব মানবের অন্তরের কথা 
সহজভাবে বুঝতে পারবে। (তিনি অগ্রসর হইতে হইতে ফিরিয়া 
দাড়াইলেন ) কাল স্থধ্য উদ্দিত হবার সঙ্গে সঙ্গে আমার জীবনের সাঙ্গ 
হোক আর আরম্ভ হোক সেইক্ষণে তোমাদের নব-জীবন। (তিনি 
প্রহরীর সঙ্গে দৃঢ় পদক্ষেপে চলিয়া গেলেন। ধীরে ধীরে উধার আলো 
প্রস্ফুটিত হইল, পূর্বব গগনে সঙ্গীতের ধ্বনি নেপথ্য হইতে ভাসিয়৷ আসিল) 


রবীজ্বঘ অঙ্গীত 


জয় যাত্রায় যাও গে। 
ওঠ জয়রথে তব 
মোর! জয়মালা গেথে 
আশা চেয়ে বসে রব॥ 


১১৯ 


অনোবৈজ্ঞানিক . [ তৃতীয় অঙ্ক 
ডাঃ স্থবিমল। সবিতা! এ শোন নব-জীবনের জয় যাত্রার ডাক। সমস্ত 
ছুঃখ-শোক পেছনে ফেলে চল আমর] অগ্রসর হই। 


( সবিত! ডাক্তারের হাত ধবিয়া৷ অগ্রসর হইল- অরবিন্দ সরকার তাহাদের 
পথবেোধ করিলেন ) 


অরবিন্দ সরকার; আমি এসেছি মা, আজ আমায় কি তোমর! ক্ষমা করতে 
পারবে না? 


( ডাক্তাব সুবিমল ও সবিতা তাহাকে প্রণাম করিল। ডাক্তার ও সবিতা 
আগে আগে চলিল, অবারবন্দ সরকার তাহাদের অন্ুনরণ করিলেন সকলে 
ক্রমে ক্রমে যবনিকার অন্তরালে অদৃশ্য হইলেন। ) 


অমাপ্ড 


১১২